1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বিনালক্ষী নেপ্রাম

৩১ অক্টোবর ২০১০

২০১০ সালের শন ম্যাক ব্রাইড শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন বিনালক্ষী নেপ্রাম৷ মনিপুর ওমেন গান সারভাইভার্স নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা তিনি৷ কাজ করছেন বিধবা মহিলাদের নিয়ে৷ গত মাসে নরওয়ের রাজধানী অসলোতো তিনি এ পুরস্কার গ্রহণ করেন৷

https://p.dw.com/p/Pupm
Binalakshmi, Nepram, SeanMacBride, Peace, Prize, শন ম্যাক ব্রাইড, শান্তি, পুরস্কার, বিনালক্ষী নেপ্রাম
বিনালক্ষী নেপ্রামছবি: Binalakshmi Nepram

বিনালক্ষী নেপ্রাম একজন লেখিকা৷ মনিপুরের বিভিন্ন জঙ্গি দলকে নিরস্ত্র করতে, মনিপুরে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে ২০০৪ সালে তিনি গড়ে তোলেন কন্ট্রোল আর্মস ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিয়া৷ এরপর ২০০৭ সালে স্থাপন করেন মনিপুর ওমেন গান সারভাইভার্স নেটওয়ার্ক৷ এ কাজের জন্য তিনি ২০১০ সালে পেয়েছেন শন ম্যাক ব্রাইড শান্তি পুরস্কার৷ কে এই বিনালক্ষী নেপ্রাম?

ছোটবেলার আতঙ্কিত অভিজ্ঞতা

বিনালক্ষী নেপ্রামের জন্ম ১৯৭৪ সালে, ভারতের মনিপুরে৷ সাত ভাই-বোনের পরিবার৷ অনেক ছোট বেলা থেকেই কঠোর শাসনের মধ্যে বড় হয়েছেন তিনি৷ বিকেল চারটার মধ্যে প্রতিদিন বাড়ি ফিরে আসতে হত৷ কেন? তিনি বুঝতেন না৷ ধীরে ধীরে বড় হতে থাকেন, একই সঙ্গে বাড়তে থাকে সশস্ত্র জঙ্গিদের হামলা আর উৎপাত৷ বাড়ির দুয়ার পেরিয়ে ঘরের ভেতর পর্যন্ত এসে পৌঁছেছিল সংঘাত৷ মাঝে মাঝে আধা-সামরিক বাহিনী এসে ঘড় বাড়ি তল্লাশি করতো৷ আসবাব পত্র উল্টে-পাল্টে দেখতো কোন অস্ত্র লুকানো আছে কিনা অথবা বাড়িতে কেউ গোপনে আশ্রয় নিয়েছে কিনা৷ এর পাশাপাশিও তিনি দেখেছেন জঙ্গিদের বাড়িতে আসতে৷ আশ্রয়ের জন্য, খাবার জন্য, রাত কাটানোর জন্য৷ কখনো কখনো অস্ত্র লুকিয়ে রাখার অনুরোধও আসতো৷ তখন থেকেই অস্ত্র-বিরোধ, সংঘাত আর সংঘর্ষ – গভীর দাগ কাটে বিনালক্ষীর জীবনে৷ খুব স্বাভাবিক জীবন যাপনের মধ্য দিয়ে বড় হতে পারেননি বলেই তিনি অন্য শিশুদের স্বাভাবিক জীবন যাপন ফিরিয়ে দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন৷

মনিপুরের মর্মস্পর্শী গল্প

মনিপুরের অস্ত্র সংঘাত নিয়ে শুরু করেন লেখালেখি৷ ভারতবাসীদের এ বিষয়ে জানানো জরুরি মনে করেন৷ এরপর ২০০৪ সালে তিনি স্থাপন করেন কন্ট্রোল আর্মস ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিয়া৷ তবে মনিপুরের মহিলাদের নেওটওয়ার্ক তৈরির গল্পটি মর্মস্পর্শী৷ বিনালক্ষী জানান, ‘‘২০০৭ সালে কন্ট্রোল আর্মস ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিয়ার পক্ষে কাজ করার সময় মনিপুরের প্রত্যন্ত একটি গ্রামে আমি যাই৷ সেখানে মহিলাদের সঙ্গে কথা বলার সময় আমি খুব কাছ থেকে গুলির শব্দ শুনতে পাই৷ কিছুক্ষণ পর জানা যায় যে ২৭ বছরের একটি যুবককে তিনজন বন্দুকধারী গুলি করেছে৷ এর কয়েক মিনিটের মধ্যেই মৃতের বিধবা স্ত্রীকে জনসমক্ষে হাজির করা হয়৷ চিৎকার করে তাঁর কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয় – ক'জন ছিল, তারা দেখতে কেমন ছিল, কোন ধরণের পোশাক পরা ছিল, এসব৷ সবচেয়ে মর্মান্তিক বিষয় হল – মেয়েটি স্বামী হারানোর বেদনা টের পাওয়ার আগেই সমাজের কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়ায়৷ মেরেটির মা চিৎকার করে বলছিল, ‘এই বিধবা মেয়েকে নিয়ে আমি এখন কী করবো ? ওরা তোকেও কেন গুলি করে মারলো না?' এ কথাগুলো শুনেই আমি সিদ্ধান্ত নেই, ‘না এসব মেয়েকে রক্ষা করতে আমাকে কিছু করতে হবে৷' তখনই আমি জানতে পারি, বুঝতে পারি যে এসব সশস্ত্র সংঘাতের কারণে যারা বৈধব্য বরণ করেছে তাদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই৷ সে দিনই, সে রাত্রেই আমি একাই গঠন করি মনিপুর ওমেন গান সারভাইভার্স নেটওয়ার্ক৷''

অবৈধ অস্ত্র আসছে কোত্থেকে?

বিনালক্ষী ২০১০ সালের শন ম্যাক ব্রাইড শান্তি পুরস্কার গ্রহণ করতে যান নরওয়ের রাজধানী অসলোতে৷ এছাড়া তিনি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বক্তব্য রেখেছিলেন ২০০১ সালে৷ সেখানে তিনি মনিপুরের সমস্যা নিয়ে কথা বলেন৷ পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দেন, যেসব দেশ থেকে অস্ত্র মনিপুরে প্রবেশ করছে তার মধ্যে রয়েছে চীন, অ্যামেরিকা, পাকিস্তান এবং ইসরায়েল৷ বিনালক্ষীর ক্ষোভ, ‘‘মনিপুরে গত ৫ দশক ধরে ভারী এবং হালকা অস্ত্র নিয়ে সংঘাত ও সংঘর্ষ চলছে৷ সেখানে প্রায় ৩৫টি বিভিন্ন সশস্ত্র জঙ্গি সংগঠন রয়েছে৷ এরা সবাই সরকারের বিরুদ্ধে লড়ছে৷ ১৯৪৯ সাল থেকে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়েছিল তা এখনো চলছে৷ আগে শুধুমাত্র দুটি সশস্ত্র জঙ্গি দল ছিল৷ ২০০০ এবং ২০০১ সালের মধ্যে অসংখ্য ছোট ছোট জঙ্গি গ্রুপ তৈরি হয়৷ অবৈধভাবে অসংখ্য বিদেশি অস্ত্র হু হু করে মনিপুরে আসতে থাকে৷ আমি নিজে গবেষণা করে দেখেছি পৃথিবীর ১৩টি দেশ থেকে এই অস্ত্রগুলো আসে৷ এর মধ্যে চীন, অ্যামেরিকা, পাকিস্তান, রাশিয়া এবং ইসরায়েল উল্লেখযোগ্য৷ সংঘর্ষ এবং গোলাগুলিতে প্রতিদিন তিন থেকে চারজন মনিপুরি মারা যাচ্ছে৷ প্রতি বছর মারা যাচ্ছে সাড়ে পাঁচশো থেকে ছয়শো৷ জম্মু-কাশ্মীরেও বছরে এত মানুষ মারা যায় না৷ রাজনৈতিকভাবে এই সংঘাত-সংঘর্ষের কোন সুরাহা এখন পর্যন্ত হয়নি৷''

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারূক