1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শিক্ষা তহবিল এডুকেড

১৩ ডিসেম্বর ২০১০

লেখাপড়া দরিদ্র দেশগুলোর মানুষের কাছে বিলাসিতার মত৷ স্কুলের খরচ, বইখাতা কেনা, বেতন – এসব অনেক পরিবারই বহন করতে পারে না৷ এসব দেশের মানুষের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে জার্মানির একটি বিশ্ববিদ্যালয়৷

https://p.dw.com/p/QWld
গরিব দেশের শিশুদের শিক্ষার জন্য তহবিল করেছে জার্মানির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ছবি: Ali Mahmed

রুর ইউনিভার্সিটি বখুম তৈরি করেছে নিজস্ব একটি তহবিল, এডুকেড৷ মূল লক্ষ্য দরিদ্র দেশগুলোর শিশুদের কাছে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়া৷

তৃতীয় বিশ্বের লক্ষ লক্ষ শিশুর জন্য স্কুলে যাওয়া একটি বিলাসিতা৷ প্রাথমিক স্কুলের কয়েক বছরের খরচ পর্যন্ত অনেক বাবা-মায়ের পক্ষে মেটানো সম্ভব নয়৷ মনে হতে পারে গরিব যারা পড়াশোনা, শিক্ষা যেন তাদের জন্য নয়৷ রাষ্ট্র বা অন্য কোন সংস্থার কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য পাওয়াও তাদের জন্য দূরূহ ব্যাপার৷ আর ঠিক এই দিকেই নজর দিয়েছেন রুর ইউনিভার্সিটি বখুমের প্রফেসর স্টেফান ভিন্টার৷ তিনি নিজেই একটি তহবিল দাঁড় করিয়েছেন৷ এই তহবিলের সংগৃহীত অর্থ খরচ করা হবে তৃতীয় বিশ্বের শিশুদের জন্য, তাদের শিক্ষার পেছনে৷ তবে প্রফেসর ভিন্টার একা নন, তাঁকে সাহায্য করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু ছাত্র-ছাত্রী৷

পড়াশোনা, দুটি পার্ট-টাইম চাকরি, ফুটবল ট্রেনিং – ২৫ বছর বয়স্ক ডানিয়েল গোর্নারের এই হচ্ছে প্রতিদিনের রুটিন৷ সে রুর ইউনিভার্সিটি বখুমের ছাত্র৷ অর্থ তহবিল ‘স্টিফটুংসফঁ – এডুকেড' প্রতিষ্ঠায় ডানিয়েলের অবদান রয়েছে৷ এই তহবিল প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য হল তৃতীয় বিশ্বের ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করা৷ ডানিয়েল পড়াশোনা করছে অর্থনীতি বিষয় নিয়ে৷

ডানিয়েল বলল, ‘‘আমরা ক্লাশে যা শিখেছি, কয়েক বছর ধরে যে সব অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি তার বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে৷ সেই সুযোগ আমরা পাবো যদি আমরা বেরিয়ে পড়ি তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর উদ্দেশ্যে৷ এই দেশগুলোর সাহায্যের প্রয়োজন৷ অন্তত এমন কিছু আমাদের করা উচিৎ যা সত্যিই বিশেষ কোন অর্থ বহন করে৷''

সাহায্যের আশ্বাস দিচ্ছে এডুকেড

ডানিয়েলের সঙ্গে আরো প্রায় ১৪ জন ছাত্র-ছাত্রী যোগ দিয়েছে তহবিলের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে৷ এ বছরের শুরুতে এডুকেড প্রতিষ্ঠা করা হয়৷ প্রকল্পের দায়িত্বে রয়েছেন প্রফেসর স্টেফান ভিন্টার৷ প্রফেসর ভিন্টার বললেন, ‘‘আমি এই ধরণের প্রকল্পের কথা ভাবি কারণ ক্লাস নেওয়ার সময় আমাকে বিভিন্ন ধরণের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়৷ পড়াশোনার জন্য খরচ বা বিনিয়োগ – তা কতটা লাভজনক? যে বা যারা পড়াশোনা করছে শুধু তারাই কি লাভবান হবে বা হতে পারে? যদি রাষ্ট্রও শিক্ষাক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে তাহলে রাষ্ট্রের জন্যও কি তা লাভজনক? তখন আমি সবাইকে এ নিয়ে একটি লেখা লিখতে বলি৷ প্রতিটি লেখার মধ্যে দিয়ে যা বেরিয়ে আসে তা হল - শিক্ষা লাভজনক৷ শিক্ষা থেকে লাভবান হতে পারে একটি জাতি, সমাজ এবং দেশ৷ আমি আমার প্রকল্প নিয়ে এগিয়ে যাই সেসব শিশুর দিকে যারা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত৷''

দুষ্টচক্রের নাম - ঋণ

তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে শিক্ষা ক্ষেত্রে সাহায্য আসছে প্রচুর তারপরও লক্ষ লক্ষ শিশু অশিক্ষার অন্ধকারে রয়ে গেছে৷ পাঁচ থেকে ছয় বছরের শিশুরা নেমে পড়েছে কাজে৷ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এরা কাজ করছে৷ আর্থিকভাবে পরিবারকে সাহায্য করতে পড়াশোনা নয়, এদের করতে হচ্ছে কায়িক পরিশ্রম৷ প্রফেসর ভিন্টার আরো জানান, ‘‘তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর ঋণের বোঝা অনেক বেশি৷ প্রতিটি মানুষের ঘাড়ে ঋণের যে চাপ তা বিশ্বাস করা মুশকিল৷ যে শিশুটি জন্ম নেয়, সে জন্মায় ঋণী হয়েই৷ এ অবস্থায় কখনোই তারা কারো কাছে শিক্ষাঋণ পাবে না, আবেদনও করতে পারবে না৷ গরিবদেশগুলো শিক্ষাক্ষেত্রে ঋণ পেলেও সেই ঋণ কখনোই তারা পরিশোধ করতে পারেব না৷ ঋণের বোঝা আরো বাড়বে৷ একটি দুষ্টচক্রের মত তা ঘুরতে থাকবে৷''

এই দুষ্টচক্র ভাঙা যে সম্ভব তা প্রমাণ করতে চান প্রফেসর ভিন্টার৷ এডুকেড বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করছে৷ তারা দেখাতে চাচ্ছে যে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে শিক্ষার পেছনে বিনিয়োগ করলে একসময় তা সুফল বয়ে আনবে৷ ঠিক কোন বিষয়ে শিক্ষা সবচেয়ে বেশি লাভজনক তা গবেষণা করে বের করেছেন প্রফেসর ভিন্টার৷ ব্যক্তি মালিকানাধীন সংস্থাগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায় এডুকেড৷ একটি শিশু শিক্ষিত হয়ে বড় হলে একদিন সে তার ঋণ ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হবে – এই সত্যটাই তুলে ধরতে চাচ্ছে এডুকেড, প্রফেসর ভিন্টার আর ডানিয়েল গোর্নার৷

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারূক