শিশুরা খেলার মধ্য দিয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়
একটি শিশু নিজের বাড়িতেই নিরাপদ বোধ করে৷ কিন্তু বাবা-মায়ের মধ্যে যদি বনিবনা কম থাকে ,তাঁরা যদি মানসিক চাপে থাকেন,তবে শিশুর ওপর সারাজীবনের জন্য তার প্রভাব পড়ে৷ মানসিক চাপ শিশুর আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠার পথে বাধা সৃষ্টি করে৷
শিশুদের অবসর সময়
সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য ছোট বয়স থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি শিশুদের অনেক কিছু শিখতে হয়, অনেক কিছু করতে হয়৷ তাই শিশুরা যাই করুক না কেন ওদের খেলার সময় প্রয়োজন৷ বন্ধুদের সাথে খেলার মধ্য দিয়েই যে ওরা সমস্ত স্ট্রেস এবং মানসিক চাপ থেকে বেরিয়ে আসতে পারে৷
টিভির সামনে আধঘণ্টার বেশি নয়!
টেলিভিশন, কম্পিউটার, ট্যাবলেট – এগুলো বিনোদন আর তথ্য দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানসিক চাপ বাড়ায়৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, একঘণ্টা কম্পিউটার বা টিভির সামনে বসে থাকার চেয়ে খোলা বাতাসে খেলাধুলা বা ব্যায়াম শিশুদের বেশি দরকার৷ আর তিন বছরের কম বয়সি শিশুদের দিনে আধঘণ্টার বেশি টিভি দেখা উচিত নয়৷
অ্যান্টি স্ট্রেস
বাড়ি স্ট্রেমুক্ত করতে ঘরে ফেরার পর সবাই কিছুক্ষণ সোফায় বসে আড্ডা দিন৷ তারপর খাবার টেবিলে সারাদিনের ঘটে যাওয়া ঘটনা বা জরুরি কিছু থাকলে, তা নিয়ে আলোচনা করুন৷ যে কোনো সমস্যা সমাধান একত্রে করলে অনেক সহজ হয়৷ শিশুরা ছোট থেকেই যেন এটা শেখে, তার চেষ্টা বড়দেরই করা উচিত৷
শিশুদের শিশুর মতো বড় হতে দিন
কিন্ডারগার্ডেনে শিশুদের ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠে৷ নিজেকে চেনা এবং অন্যে সাথে সম্পর্ক তৈরি করা সেখানেই শেখে শিশুরা৷ পায় সৃজনশীলতা বিকাশের সুযোগ৷ তাই লক্ষ্য রাখতে হবে তারা যেন নির্ভয়ে সব কিছু বলতে ও করতে পারে৷ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়াটা মূল লক্ষ্য নয়, জরুরি হলো আত্মবিশ্বাসী হতে পারা৷
খুঁজে বের করতে হবে...
প্রথমেই খুঁজে বের করতে হবে পড়াশোনা বা হোমওয়ার্ক করতে শিশুর মনোযোগ কখন সবচেয়ে বেশি৷ সরাসরি স্কুল থেকে আসার পর নাকি কিছুক্ষণ খেলার পর? সবচেয়ে বড় কথা – শিশুরা যাই করুক না কেন, মাঝে মাঝেই বিশ্রাম নিতে হবে তাদের৷ অর্থাৎ যে কোনো কাজের মাঝে কিছুক্ষণ হাঁচটাচলা, গান শোনা বা মুক্ত বাতাস সেবন করা৷ যা শুধু শিশুদের ক্ষেত্রে নয়, বড়দেরও প্রয়োজন৷
শিক্ষার ধরন
আজকের দিনের চাকরিজীবী মা-বাবার জীবন চলে অতি দ্রুতগতিতে এবং তাঁদের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে শিশুরা হাঁপিয়ে ওঠে৷ শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির সব কিছুই সন্তানদের শেখানোর চেষ্টা থাকেন বাবা-মা৷ তাই তাঁরা নামি-দামি আধুনিক কিন্ডারগর্ডেনগুলোতে সন্তানকে ভর্তি করেন৷ তবে কিন্ডারগার্টেন বা স্কুল ভবিষ্যত জীবনে শিশুর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথে একটা পাথেও মাত্র৷
খেলার ছলে শিক্ষা
জার্মানির বোখুম শহরের একটি স্কুলে পড়াশোনাটা নতুনভাবে বা খেলার ছলে সেখানো হয়৷ সেখানে ‘প্রোমোশন’ বা ভালো রেজাল্টই বড় কথা নয়৷ ছোট ছেলে-মেয়েরা কারিগরি ক্লাসে তরোয়াল তৈরি করতে শেখে সেখানে৷ খেলার ছলে শেখে নানা কায়দাকানুন৷ তাছাড়া প্রতিটি শিশুর কাজ করার ধরনও আলাদা৷ তাই শিশুরাই প্রস্তাব দেয়, তারা কী করতে চায় বা না চায়৷ শিশুদের ইচ্ছেকে পুরো দাম দেওয়া হয় এখানে৷
ভয় ছাড়া শিক্ষা
স্কুলে খুব ভালো ফল করতে হবে – এর জন্য কোনো চাপ সৃষ্টি করা উচিত নয়৷ কারণ এতে শিশুদের মধ্যে একটা ভয় তৈরি হয় আর ভয় মানুষের আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠতে সবচেয়ে বড় বাধা৷ তবে একটি কথা বাবা-মাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, প্রতিটি শিশুই আলাদা৷ অর্থাৎ সবার গ্রহণযোগ্যতা সমান নয়৷ ‘আমাদের সন্তানের চেয়ে অন্য বাচ্চার রেজাল্ট ভালো কেন?’ – এ প্রশ্ন কখনই করা উচিত নয়৷
ভয় মস্তিষ্ককে বিগড়ে দেয়
পরীক্ষার হলে সব কিছু ভুলে যাওয়াটা মোটেই নতুন নয়৷ একে আমরা ‘ব্ল্যাকআউট’ বলে জানি৷ এমনটা কিন্তু শুধুমাত্র ভয়ের কারণেই হয়ে থাকে৷ ‘‘ভয়ের সময় মানুষের শরীরে স্ট্রেস হরমোন ছড়িয়ে পড়ে এবং স্মৃতিশক্তি হারিয়ে যায় বা বাঁধাপ্রাপ্ত হয়৷ অর্থাৎ শেখা বা জানা বিষয়ও মনে পড়ে না৷’’ বলেন জার্মানির মস্তিষ্ক গবেষক৷
শিশুদের আত্মবিশ্বাস গড়তে বড়দের ভূমিকা
বর্তমানে আমরা, অর্থাৎ বড়রা যে মানসিক চাপের মধ্যে জীবনযাপন করছি, তা ইচ্ছে করে নয়৷ পরিস্থিতি আমাদের বাধ্য করছে৷ তাই যতটা সম্ভব শিশুদের মানসিক চাপ থেকে দূরে রাখা প্রয়োজন৷ কারণ শিশু বয়সেই তৈরি হয় ব্যক্তিত্ব, তাদের আত্মবিশ্বাস, যা বড় হতে, সুস্থ মানুষ হতে অনেক বেশি প্রয়োজন৷