শিয়াওবো’র কারাদন্ড বহাল করলো চীন
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১০শিয়াওবো'র এই কারাদন্ডের খবর সত্য বলে জানিয়েছেন লেও'র আইনজীবী শাং বোজুন৷ তিনি বলেন, ‘‘রায় ঘোষণা করতে সময় লেগেছে ১০ মিনিটের মতো৷ বিচারপতি রায় পড়েছেন৷ সবাই শুনেছে৷ অথচ, আদালতকক্ষে কারোরই কিছু বলার অধিকার ছিলনা৷ লেও শিয়াওবো শুধু বলেন: ‘‘আমি নির্দোষ''৷ এরপর তাঁকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়৷ তাঁর আগের শাস্তিদন্ডই বহাল রাখল আদালত৷ এটা দুঃখজনক যে, আমার মক্কেলের সঙ্গে আমাকে কথা বলতেও দেয়া হয়নি৷ তাই আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কোন সুযোগ আর নেই৷ এই রায় এখন আইনসিদ্ধ৷''
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে গণ প্রজাতন্ত্রী চীনে রাজনৈতিক সংস্কার ও অবাধ নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে ‘‘চার্টার ৮'' নামের একটি কড়া ইশতেহার লেখার কারণে, আটক হন লেও শিয়াওবো৷ এরপর গত ২৫শে ডিসেম্বর, অর্থাৎ বড়দিনে লেও'কে দোষী সাব্যস্ত করে কারাদন্ড দেওয়া হয়৷ যার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক মহল৷ তবে এটাই লেও'র জীবনে প্রথম কারাবাস নয়৷ ১৯৮৯ সালে বিখ্যাত ‘তিয়েনানমেন স্কয়ার'-এর সামনে গণতন্ত্রকামীদের বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার জন্যও হাজতবাস করতে হয় লেও'কে৷ সে ঘটনারও নিন্দা জানায় পশ্চিমা বিশ্ব৷ নিন্দার ঝড় ওঠে দেশের মধ্যে থেকেও৷
বৃহস্পতিবার, বেইজিং হাইকোর্টে উপস্থিত শিয়াওবো পত্নী লেও শিয়া জানান যে, আদালতের এ সিদ্ধান্তে তিনি বিস্মিত নন৷ তাঁর কথায়, ‘‘এগারো বছর দীর্ঘ সময় - সবার জন্যই দীর্ঘ৷ লেও শিয়াওবো'কে ছাড়া আমার জীবন হয়ে উঠবে আরও দুর্বিষহ, হবে আরও বেশি নৃশংস আচরণের শিকার৷ এই ঘটনা চট করে শেষ হবার নয়৷ আমি চরম হতাশাবাদী৷ সমাজের কাছ থেকে কখনও কিছু আশা করিনি৷ কারণ, আমি সব সময়ই সবচেয়ে খারাপ কিছুর জন্য প্রস্তুত থাকি৷ আমার স্বামী অবশ্য ঠিক আমার উল্টো৷ সবসময়ই ও অ্যাকটিভিস্ট৷ সর্বদাই সক্রিয়৷ তাই আমরা খুব ভালভাবেই পরস্পরের পরিপূরক হয়ে উঠেছি৷''
এদিকে, ৫৪ বছর বয়স্ক লেও শিয়াওবো'কে অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার জন্য চীন সরকারের কাছে আবোদন করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ মার্কিন রাষ্ট্রদূত জন হান্টসম্যান নাগরিক অধিকার খর্ব করার জন্য চীনের এহেন পদক্ষেপে দুঃখ প্রকাশ করেছেন৷ অন্যদিকে, বেইজিং আদালতের রায়ের সমালোচনা করে ব্রাসেলস-এর দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, সিদ্ধান্তটি ব্যক্তি বিশেষের মতামত প্রকাশের অধিকারের পরিপন্থী৷
শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, লেও শিয়াওবো'র মুক্তির জন্য একটি আবেদন পত্রে সই করেছে চীনের প্রায় দশ হাজার মানবাধিকার কর্মী৷ তবে আন্তর্জাতিক সমাজকে চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলানোর আহ্বান জানিয়েছেন চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মা ঝাওশু৷ প্রসঙ্গত, মানবাধিকার সংগঠন ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ', ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স' বহুবার সম্মানিত করে লেও'কে৷ এছাড়া, ‘দ্য নোবেল প্যারাডাইস অফ পাওয়ার, দ্য হেল ফর দ্য মীক' নামের নিবন্ধটির জন্য ২০০৪ সালের ‘হংকং হিউম্যান রাইট্স নিউস' পুরস্কার পান লেও শিয়াওবো৷
প্রতিবেদক : দেবারতি গুহ
সম্পাদনা : আব্দুল্লাহ আল-ফারূক