1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শুরু হল জার্মান লেখক হাইনরিশ ফন ক্লাইস্ট’এর স্মৃতির বছর

১৫ মার্চ ২০১১

গ্যোটে ও শিলারের পাশে প্রতিভাবান জার্মান লেখক হাইনরিশ ফন ক্লাইস্ট’এর পক্ষে সাহিত্য জগতে স্থান করে নেওয়াটা খুব সহজ ছিলনা৷ দুইশততম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে নতুন করে এখন মূল্যায়ন করা হচ্ছে কৃতি এই সাহিত্যিকের সৃষ্টিকর্ম৷

https://p.dw.com/p/10ZBS
জার্মান লেখক হাইনরিশ ফন ক্লাইস্টছবি: Kleist-Museum

বেঁচে থাকতে তাঁর প্রায় কোনো নাটকই মঞ্চস্থ হয়নি৷ প্রয়াণের ২০০ বছর পর নব উদ্যমে আবিষ্কার করা হচ্ছে অকাল প্রয়াত অসাধারণ প্রতিভাশালী লেখক, নাট্যকার, কবি হাইনরিশ ফন ক্লাইস্টকে৷ জন্ম ১৭৭৭ সালে পোল্যান্ড সীমান্তের শহর ফ্রাঙ্কফুর্ট আন ডেয়ার ওডার'এ৷ অল্প বয়সেই বাবা মাকে হারান তিনি৷ হাইস্কুলে পড়াশোনা করেন ফ্রান্সে৷ এরপর পারিবারিক ঐতিহ্যের পথ ধরে সামরিক বাহিনীতে যোগ দেন তিনি৷ কিন্তু পদোন্নতি হলেও ভাল লাগেনি তাঁর সেখানে৷ ফ্রাঙ্কফুর্টের ভিয়াড্রিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন, পদার্থ বিজ্ঞান, অঙ্ক নিয়ে পড়াশোনা করেন কয়েক সেমেস্টার৷ ১৮০০ সালের প্রথম দিকে বার্লিনে এসে বসবাস শুরু করেন ক্লাইস্ট৷ ইমানুয়েল কান্টের দর্শনতত্ত্ব তাঁর মনে গভীর ভাবে দাগ কাটে৷ যার প্রভাব ফুটে ওঠে তাঁর লেখালিখিতেও৷

অত্যন্ত আবেগপ্রবণ এই মানুষটির মনে মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষা জেগে উঠতো বার বার৷ এক জায়গায় স্থির থাকতে পারতেন না তিনি৷ জার্মানি, ফ্রান্স ও সুইজারল্যান্ডে যাতায়াত করেছেন অস্থির চিত্তে, কখনও পায়ে হেঁটে, কখনও বা ঘোড়ায় চড়ে৷ আবার কিছুদিন কাজ করেন সামরিক বাহিনীতে৷ গ্রিক পৌরাণিক কাহিনি অবলম্বনে রচনা করেন বিখ্যাত নাটক ‘আম্পিথ্রিয়োন' এবং ‘পেনথেসিলেয়া'৷ ফ্রান্সের বিরুদ্ধে গুপ্তচর বৃত্তির অভিযোগে কিছুদিন কারাবাসও ভোগ করতে হয় ক্লাইস্টকে৷ কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে আরো কয়েকটি নাটক লেখেন তিনি৷ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘দ্য ব্রোকেন জাগ' ও ‘কেট অফ হাইলব্রন'৷ এই সময় আর্থিক ও ব্যক্তিগত সমস্যা তাঁকে পীড়া দিতে থাকে৷ যাতনা সহ্য করতে না পেরে ১৮১১ সালের ২১ নভেম্বর প্রেমিকা হেনরিয়েটে সহ মাত্র ৩৪ বছর বয়সে স্বেচ্ছা মৃত্যু বরণ করেন ক্লাইস্ট৷ আর তাই তো লিখে গিয়েছিলেন তিনি, ‘‘সত্যি কথাটি হল, পৃথিবীতে আমাকে সাহায্য করা সম্ভব নয়৷''

Kleist-Jahr 2011 Symbolbild
ফ্রাংকফুর্ট যাদুঘরে ক্লাইস্টের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে একজনছবি: picture alliance/dpa

কৃতি এই লেখকের মৃত্যুর ২০০ বছর পূর্তি হচ্ছে এ বছর৷ এ উপলক্ষ্যে বিশেষ করে বার্লিন, যেখানে জীবনের শেষ দিনগুলি কেটেছে ক্লাইস্ট'এর ও তাঁর জন্মস্থান ফ্রাঙ্কফুর্ট আন ডেয়ার ওডার'এ নানা রকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে৷

১৯৬৯ সালে গড়ে ওঠা ফ্রাঙ্কফুর্টের ক্লাইস্ট মিউজিয়ামটির সম্প্রসারণের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে৷ হাইনরিশ ফন ক্লাইস্ট সম্পর্কিত মূল্যবান সামগ্রীর সংগ্রহটি বৃদ্ধি পাওয়ায় পুরানো ভবনে স্থানাভাব দেখা দেয়৷ তাই তার পাশেই আধুনিক এক দালান নির্মাণ করা হচ্ছে এখন৷

রাজনীতি ও সংস্কৃতি জগতের বহু নামি দামি ব্যক্তি উপস্থিত হয়েছিলেন এই উপলক্ষ্যে৷ বেঁচে থাকতে যে খ্যাতির আকাঙ্ক্ষা করেছিলেন তিনি, সেটাই এখন পাওয়া গেল৷ ২০১৩ নাগাদে শেষ হবে নতুন ভবনটি নির্মাণের কাজ৷ খরচ বহন করছে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার এবং নগর কর্তৃপক্ষ৷ জার্মান সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী ব্যার্ন্ড নয়মান এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এই উদ্যোগ ক্লাইস্ট মিউজিয়ামের প্রতি আমাদের এক জাতীয় দায়িত্ব৷ হাইনরিশ ফন ক্লাইস্ট আমাদের সংস্কৃতিকে যে বিশেষভাবে তুলে ধরেছেন, তাকেই স্বীকৃতি দেয়া হল এর মাধ্যমে৷''

ছোট শহর ফ্রাঙ্কফুর্ট আন ডেয়ার ওডার'এর জন্য এই মিউজিয়াম এক বিশেষ গরিমা বয়ে আনবে৷ আকৃষ্ট করবে বহু দর্শককে৷ সারা শহরেই এজন্য সাজ সাজ রব পড়ে গেছে৷ জার্মান সাহিত্যের বিশাল নিঃসঙ্গ এই ব্যক্তিত্বকে সম্মান জানানোর আয়োজন করা হচ্ছে নানা অনুষ্ঠানের৷ ক্লাইস্ট সম্পর্কে চলচ্চিত্র, আলোচনা সভা, সাহিত্যপাঠের আসর, প্রদর্শনী ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷ ফ্রাঙ্কফুর্টের ক্লাইস্ট মিউজিয়ামের পরিচালক ভল্ফগাং ডে ব্রুন বলেন, ‘‘ক্লাইস্টের জীবনের অস্থিরতা, অবিরাম খুঁজে ফেরার তাড়না - শিক্ষা, কাজ, প্রেম ভালবাসার পেছনে ছোটা , অন্তর্দ্বন্দ্বে ক্ষত বিক্ষত জীবন কাহিনি অন্যান্য অনেক লেখক, যেমন গ্যোটের জীবনের চেয়ে অনেক বেশি আধুনিক ও আকর্ষণীয়৷''

হাইনরিশ ফন ক্লাইস্ট সমিতির পরিচালক জার্মান ভাষাবিদ গ্যুন্টার ব্লামব্যার্গারের ভাষায়, ‘‘ক্লাইস্ট একজন নীতিবিদ, যিনি মানুষ কী ভাবে আচরণ করে তাই দেখিয়েছেন, কী ভাবে আচরণ করা উচিত তা নয়৷ ক্লাইস্ট তাঁর চরিত্রদের দৈনন্দিন জীবন তুলে ধরেছেন, দেখিয়েছেন তাঁদের ব্যর্থতা৷ তাঁরা উঁচুস্তরের বুদ্ধিজীবী নন৷ জার্মান সাহিত্যে তিনি এক অদ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব৷''

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন