শেক্সপিয়ার বিশ্বময়
উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের নাটক যতবার যত দেশে মঞ্চে এসেছে, খুব কম লেখকের ক্ষেত্রেই তেমনটি হয়েছে৷ সেই অষ্টাদশ শতক থেকে বিশ্বজুড়ে তার জন্মদিন পালন করা হচ্ছে ২৩ এপ্রিল, যদিও কেউ জানে না, শেক্সপিয়ারের সঠিক জন্মতারিখ কোনটি৷
চিরকালীন
শেক্সপিয়ারের নাটকের আবেদন বিশ্বজোড়া৷ বহু দেশে, বহু ভাষায় তাঁর নাটকের মঞ্চায়ন হয়েছে৷ প্রণয়, কামনা, হিংসা, ষড়যন্ত্র, প্রতিশোধ, হত্যা আর যুদ্ধের মতো বিষয়বস্তু শেক্সপিয়ারের নাটককে সময়ের বেড়াজাল থেকে মুক্তি দিয়েছে, নিয়ে গেছে মানুষের কাছাকাছি৷
আবেগের খেলা
শেক্সপিয়ার সেই কৌশলকে একটি শিল্পের রূপ দিয়ে গেছেন, যাতে একজন দর্শক নাটকের একটি চরিত্রকে খুব সহজেই নায়ক হিসাবে গ্রহণ করতে পারে, অথবা ত্যাগ করতে পারে খলনায়ক হিসাবে৷ যেমন ম্যাকবেথে আমরা দেখি ক্ষমতার মোহ তাঁকে কীভাবে সিংহাসনে নিয়ে যায়৷ কিন্তু সেই গল্প শেষ হয় ম্যাকবেথের পতন আর রক্তাক্ত হত্যায়৷
ওকাভাঙ্গো ম্যাকবেথ
শেক্সপিয়ারের লেখা আফ্রিকার মিথলজির সঙ্গে মিলিয়ে নিতেও সমস্যা হয়নি৷ ২০০৯ সালে বতসোয়ানায় প্রথমবারের মতো অপেরা মঞ্চস্থ হয়, যার নাম ছিল ‘ওকাভাঙ্গো ম্যাকবেথ’৷ এ নাটকের নির্দেশক আলেকজান্ডার ম্যাককল স্মিথ স্থানীয় রাজনৈতিক চালচিত্রই তুলে এনেছেন শেক্সপিয়ারের গল্পের মধ্য দিয়ে৷
সামুরাই শেক্সপিয়ার
জাপানের প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার আকিরা কুরোসাওয়া ম্যাকবেথের চলচ্চিত্ররূপ দেন ১৯৫৭ সালে৷ ‘কুমোনোসু ইয়ো’ বা ‘মাকড়জালের প্রাসাদ’ নামের চলচ্চিত্রটিতে আমরা দেখি ষোড়শ শতকের জাপানে ক্ষমতালিপ্সা আর পতনের সেই একই গল্প৷
এখনো রোমিও, এখনো জুলিয়েট
রোমিও আর জুলিয়েটকে সর্বকালের সবেচেয়ে রোমান্টিক চরিত্র বললে কি খুব বাড়িয়ে বলা হবে? রাস্টা টোমাস ও অ্যাদ্রিয়েনে কান্টেরনা ঠিক একই কথা ভেবেছেন৷ তাই রোমিও জুলিয়েটকে তাঁরা গত বছর হামবুর্গের মঞ্চে হাজির করেন ‘রক ব্যালে’-র আমেজে৷
শিয়া রোমিও, জুলিয়েট সুন্নি
শেক্সপিয়ারের সবেচেয় জনপ্রিয় এই প্রেমকাহিনির ইরাকি মঞ্চরূপে রোমিওকে দেখা যায় এক শিয়া যুবকের বেশে, যেখানে তাঁর প্রেমিকা জুলিয়েট সুন্নি পরিবারের মেয়ে৷ ২০১২ সালে ‘রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট ইন বাগদাদ’ নাটকের মধ্য দিয়ে ইরাকি নির্দেশক মুসলিম সমাজের পুরনো সেই বিভাজনকেই ফুটিয়ে তুললেন শেক্সপিয়ারের গল্পের ছাঁচে ফেলে৷
রাশিয়ায় হ্যামলেট
রোমিও ও জুলিয়েটের পর শেক্সপিয়ারের সবেচেয় জনপ্রিয় নাটক হ্যামলেট৷ ডেনমার্কে এর মঞ্চরূপে আমরা দেখি পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নিতে গিয়ে প্রিন্স হ্যামলেট কীভাবে পুরো রাজপরিবারকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দেন৷ ২০০৬ সালে মস্কোয় রুশ সেনাবাহিনীর থিয়েটারেও হ্যামলেটকে বলতে শোনা যায় – ‘‘টু বি অর নট টু বি’’৷
দক্ষিণ কোরিয়ায় গ্রীষ্মরাতের স্বপ্ন
শেক্সপিয়ার ছাপ ফেলেছেন পূর্ব ইউরোপেও৷ ইয়োহানজা থিয়েটার কোম্পানি ২০১০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার দর্শকদের জন্য মঞ্চে আনে ‘আ মিডসামার নাইটস ড্রিম’- এর কোরীয় সংস্করণ৷ কোরীয় সংগীত আর মিথের সঙ্গে শেক্সপিয়ারের গল্প সেখানে মিলে মিশে একাকার৷
কাবুলে টেমপেস্ট
আফগানিস্থানে ১৯৬০ এর দশক ছিল থিয়েটারের স্বর্ণযুগ৷ এরপর তালেবান শাসনামলে এই শিল্পমাধ্যমটি নিষিদ্ধ হয়৷ ২০১২ সালের জুলাইয়ে কাবুলের এক মঞ্চে ফিরে আসে থিয়েটার, ফিরে আসে শেক্সপিয়ারের ‘দ্য টেমপেস্ট’ হয়ে৷ সেই ঝোড়ো হাওয়ায় আফগানরা যেন তালেবানি অন্ধকারকে বিদায় দিয়ে নতুন এক সূচনার আবাহনী গাইল৷
আসলেই শেক্সপিয়ার?
এ বিতর্ক নতুন নয়৷ হ্যামলেট, ম্যাকবেথের মতো বিখ্যাত নাটকগুলো আসলেই শেক্সপিয়ারের লেখা? জার্মান পরিচালক রোলান্ড এমেরিশ ২০১১ সালে তাঁর ইতিহাসনির্ভর চলচ্চিত্র ‘অ্যানোনিমাস’-এ সেই গবেষকদেরই পক্ষ নিয়েছেন, যাঁরা বিশ্বাস করেন, আর্ল অফ অক্সফোর্ড এডওয়ার্ড ডে ভিয়ের-ই ছিলেন এসব নাটকের আসল স্রষ্টা৷