1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘কালোই সুন্দর'

রোমা রাজপাল ভাইস /এপিবি৩০ অক্টোবর ২০১৩

‘ডার্ক ইজ বিউটিফুল' বা ‘কালোই সুন্দর' – এই প্রচার ভারতে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবং ফর্সা মানেই যে সুন্দর না, সে বিতর্ককে আবারো উস্কে দিয়েছে এই প্রচার৷ তবে মানুষের ভাবনায় পরিবর্তন আনাটা জরুরি বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা৷

https://p.dw.com/p/1A7me
Dark is Beautiful is an awareness campaign that seeks to draw attention to the unjust effects of skin colour bias and also celebrates the beauty and diversity of all skin tones. Launched in 2009 by Women of Worth, the campaign challenges the belief that the value and beauty of people (in India and worldwide), is determined by the fairness of their skin. This belief, shaped by societal attitudes and reinforced by media messages, is corroding the self-worth of countless people, young and old.
ছবি: Dark is Beautiful

বলিউড সুপার স্টার শাহরুখ খানের একটি বিজ্ঞাপন৷ গায়ের রং কালো এমন একটি ছেলেকে শাহরুখ একটি ক্রিম দেন, যেটা মেখে ছেলেটি ফর্সা হয় এবং জীবনে সাফল্য পায়৷ দর্শকরাও এটাই বিশ্বাস করে ঐ ক্রিম ব্যবহার শুরু করেন৷

এই যে কালো-ফর্সার বদ্ধমূল ধারণা যা সমাজের বেশিরভাগ মানুষের মনের গভীরে রোপিত হয়ে আছে, সেটা উপড়ে ফেলতেই কাজ করছে একটি এনজিও-র ‘ডার্ক ইজ বিউটিফুল ক্যাম্পেইন'৷ ২০০৯ সালে শুরু হয় তাদের যাত্রা৷ ত্বক ফর্সা করার ক্রিমের বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে তাদের উদ্যোগ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়৷ এনজিওটি বিজ্ঞাপন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখনো চাপ দিয়ে যাচ্ছে যাতে এগুলো আর প্রচার করা না হয়৷ কালো-ফর্সার ভেদাভেদ দূর করতে সমাজ সচেতনতা তৈরিতেও কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি৷

‘ওমেন অফ ভোর্থ' নামের ঐ বেসরকারি সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক কবিতা ইমানুয়েল ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, কালো ও ফর্সা নিয়ে সমাজের বেশিরভাগ মানুষের চিন্তা-চেতনাতে পরিবর্তন আনাটাই তাদের মূল উদ্দেশ্য৷

Dark is Beautiful is an awareness campaign that seeks to draw attention to the unjust effects of skin colour bias and also celebrates the beauty and diversity of all skin tones. Launched in 2009 by Women of Worth, the campaign challenges the belief that the value and beauty of people (in India and worldwide), is determined by the fairness of their skin. This belief, shaped by societal attitudes and reinforced by media messages, is corroding the self-worth of countless people, young and old.
‘ডার্ক ইজ বিউটিফুল' পোস্টারে অভিনেত্রী নন্দিতা দাসছবি: Dark is Beautiful

স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা যাদের গায়ের রং চাপা, তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয় এই এনজিওটি৷ এসব প্রশিক্ষণের ‘ওমেন অফ ভোর্থ' নামের ঐ বেসরকারি সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক কবিতা ইমানুয়েল ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, কালো ও ফর্সা নিয়ে সমাজের বেশিরভাগ মানুষের চিন্তা-চেতনাতে পরিবর্তন আনাটাই তাদের মূল উদ্দেশ্য৷মধ্যে আত্মমর্যাদা বাড়ানো, হতাশা কাটিয়ে ওঠা এবং পরিস্থিতির মোকাবিলা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷

‘ফায়ার', ‘আর্থ', ‘ফিরাক' – ভিন্নধর্মী এসব ছবির মাধ্যমে বলিউডে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন অভিনেত্রী নন্দিতা দাস৷ মেয়েরা গায়ের রং ফর্সা না হওয়াতে ভারতীয় সমাজে কি ধরনের সমস্যার মধ্যে পড়েছেন, বিশেষ করে বলিউডে, তা জানিয়েছেন তিনি৷ তাঁর কথায়, গায়ের রং কালো হলে গ্রামের কোনো নারী বা বস্তির মহিলার চরিত্র দেয়া হয় সেই অভিনেত্রীকে, কেননা বাণিজ্যিক ছবির নায়িকা হতে হলে তাঁকে ফর্সা হতে হবেই৷

ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এই বৈষম্য খুব বেশি চোখে পড়ে৷ মডেল থেকে অভিনেত্রী – সকলেই ফর্সা৷ যেসব সৌন্দর্য্য পণ্যের তাঁরা বিজ্ঞাপন করেন, সেগুলো বেশিরভাগই ‘ফেয়ারনেস ক্রিম'-এর এবং দর্শক তাঁদের রোল মডেল হিসেবে বেছে নেন৷

নন্দিতা বলেন, প্রাচীন কাল থেকে এভাবেই শ্রেণি ভেদে কালো-সাদার বৈষম্য চলে আসছে৷ ধনীরা বাড়ির ভেতর থাকবে, সূর্যের আলো গায়ে মাখবে না, তাই তাঁদের রং হবে ফর্সা, আর যাঁরা গরিব, মাঠে ঘাটে কাজ করেন, সারা দিন রোদে পোড়েন তাঁদের রং হয় কালো – এভাবেই৷

হিন্দুস্থান লিভার কোম্পানি ১৯৭৮ সালে ‘ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি' নামের একটি ক্রিম বাজারে ছাড়ে৷ তাদের এক জরিপে দেখা গেছে, ক্রিমের যে টার্গেট পিপল ছিল, তা বদলেছে অনেকটাই৷ কারণ, দক্ষিণ ভারতে শুধু মেয়েরা নন, পুরুষরাও এখন ফেয়ারনেস ক্রিম ব্যবহার করেন৷

###ACHTUNG! NUR ZUR BERICHTERSTATTUNG ÜBER DIESE WEBSITE VERWENDEN### QUelle: http://www.emamiltd.in/ 08.10.2013 Hautcreme, die die Haut heller macht.
‘ওমেন অফ ভোর্থ' নামের ঐ বেসরকারি সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক কবিতা ইমানুয়েল ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, কালো ও ফর্সা নিয়ে সমাজের বেশিরভাগ মানুষের চিন্তা-চেতনাতে পরিবর্তন আনাটাই তাদের মূল উদ্দেশ্যছবি: www.emamiltd.in

এমনকি বিয়ের যেসব বিজ্ঞাপন দেয়া হয়, তাতেও পাত্রীর গায়ের রং ফর্সা হতে হবে এটা উল্লেখ থাকে৷ ইমানুয়েল এমনই একটি গল্প শোনালেন ডয়চে ভেলেকে৷ তাঁর এক সহকর্মীকে একবার বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন যুক্তরাজ্যের একজন চিকিৎসক, যিনি চলাফেরা করতেন হুইলচেয়ারে৷ তারপরও তাঁর সহকর্মী প্রস্তাবে রাজি হয়েছিলেন৷ পরে ঐ চিকিৎসকের পরিবার সহকর্মীর সাথে দেখা করে এবং গায়ের রং কালো হওয়ায় বিয়ে বাতিল করে দেয়৷

জাতিসংঘ নারী বিভাগের জার্মান ন্যাশনাল কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. কাঞ্চনা ল্যানজেট ডয়চে ভেলেকে বলেন, কোনো পরিবারে কালো মেয়ে জন্ম নিলে পরিবারের বয়স্কদের প্রায়ই বলতে শোনা যায়, কী খারাপ কপাল নিয়ে এসেছে মেয়েটি, ফর্সা হলে কী ভালোই না হত, কে বিয়ে করবে এই কালো মেয়েকে?

‘ডার্ক ইজ বিউটিফুল'-এর কর্মীরা মনে করেন, অবিলম্বে মানুষের চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন আনা দরকার৷ তবে আশার বিষয় হলো এই প্রচারের ফলে জনগণ এ বিষয়ে জানতে আগ্রহী হচ্ছে, বিতর্কে এবং আলোচনায় অংশ নিচ্ছে৷

ল্যানজেট ডয়চে ভেলেকে জানালেন, মানুষের সৌন্দর্য্য যে তাঁর রঙে লুকিয়ে থাকে না, তাঁর মেধা, সৃজনশীলতায় লুকিয়ে থাকে এ বিষয়টা সবার সামনে তুলে ধরতে হবে৷ আর এভাবেই সমাজ থেকে সাদা-কালো বৈষম্য দূর হবে বলে মনে করেন তিনি৷