1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সংস্কৃতির শহর ফ্রাংকফুর্ট

৪ জানুয়ারি ২০১৭

ফ্রাংকফু্র্টকে এককালে বলা হতো ব্যাংকফুর্ট, কেননা এখানে অনেক বড় বড় ব্যাংকের অফিস৷ শহরটির আরেক নাম ছিল মাইন-হ্যাটান, ম্যানহ্যাটানের অনুকরণে, কেননা এখানে স্কাইস্ক্রেপারের ছড়াছড়ি৷

https://p.dw.com/p/2VE5v
Deutschland Buchmesse Frankfurt 2015
২০১৫ সালের ফ্রাংকফুর্ট বইমেলায় দর্শকছবি: Getty Images/T. Lohnes

আগে ছিল ‘ব্যাংকফুর্ট’, এখন সংস্কৃতির শহর ফ্রাংকফুর্ট

কিন্তু ফ্রাংকফুর্টের একটা সাংস্কৃতিক সত্তাও আছে৷

ফ্রাংকফুর্ট আম মাইন, মাইন নদীর তীরে ফ্রাংকফুর্ট বলতেই স্কাইস্ক্রেপার, বড় বড় ব্যাংক আর ফ্রাংকফুর্ট বিমানবন্দরের কথা মনে হয়৷ কিন্তু সেই সঙ্গে প্রাচীন এক ফ্রাংকফুর্ট আছে, ‘ব়্যোমার’ নামের পৌরভবনটি যার একটা নমুনা৷ সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ফ্রাংকফুর্ট জার্মানির অন্যান্য বড় শহরের চেয়ে কোনো অংশে কম যায় না৷ প্রতি বছর এই শহরে বিশ্বের বৃহত্তম বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়৷ সে ঐতিহ্য অনেকদিনের৷ ফ্রাংকফুর্টে ৫০০ বছর আগেও একটি বইমেলা ছিল৷ ইয়োহানেস গুটেনব্যার্গ কাছের মাইনৎস শহরে ছাপাখানা আবিষ্কার করার কিছু পরেই ঐ বইমেলা চালু হয়৷

গুটেনব্যার্গের স্মৃতিসৌধ মহাকবি ইওহান ভল্ফগাং ফন গ্যোটের মূর্তির অদূরে৷ জার্মানির প্রখ্যাততম কবির জন্ম ১৭৪৯ সালে এই ফ্রাংকফুর্ট শহরে৷ গ্যোটে ভবনের লাইব্রেরির পরিচালকইওয়াখিম সেং জানালেন, ‘‘অষ্টাদশ শতাব্দীতে, অর্থাৎ গ্যোটের জন্মের সময় ফ্রাংকফুর্টের জনসংখ্যা ছিল ৩০ হাজার৷ তা সত্ত্বেও জার্মানদের হোলি রোমান এম্পায়ারের সম্রাটের অভিষেক হতো এই ফ্রাংকফুর্ট শহরে৷ জার্মান রাইশ-এর শহর হিসেবেও নাম ছিল ফ্রাংকফুর্টের৷ এছাড়া ফ্রাংকফুর্ট চিরকালই ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যের শহর৷’’

গ্যোটের জন্মের বাড়িটি আজ একটি মিউজিয়াম৷ মহাকবি গ্যোটে তাঁর জীবনের ২৫ বছর কাটিয়েছিলেন এখানে৷ বছরে প্রায় এক লাখ মানুষ আসেন এই মিউজিয়াম দেখতে৷ গ্যোটের চিঠির আকারে লেখা উপন্যাস ‘ভ্যায়র্টার' এখানেই রচিত হয়৷ ইওয়াখিম সেং বললেন, ‘‘ভ্যায়ার্টার লিখে তিনি জার্মান উপন্যাসের ধারা বদলে দিয়েছেন; তাঁর সেসেনহাইমার কবিতাগুচ্ছ দিয়ে তিনি জার্মান কবিতার ভোল পাল্টে দিয়েছেন; শেষমেষ তাঁর ‘গ্যোৎস’ নাটকটি দিয়ে তিনি জার্মান নাটকে বিপ্লব এনেছেন – ‘গ্যোৎস’-ও এই ফ্রাংকফুর্টে লেখা হয়েছিল৷’’

গ্যোটে ভবন থেকে মাত্র কিছুটা দূরে সেন্ট পলস চার্চ৷ ১৮৪৮ সালের মে মাসে এখানেই ফ্রাংকফুর্টের জাতীয় সম্মলনের বৈঠক বসে, যাকে জার্মান গণতন্ত্রের জন্মমুহূর্ত বলে গণ্য করা হয়৷ জার্মান পুস্তক শিল্পের শান্তি পুরস্কারও প্রতিবছর এখানেই প্রদান করা হয়ে থাকে৷

ফ্রাংকফুর্ট তার মিউজিয়ামগুলির জন্যও বিখ্যাত৷ অধিকাংশ মিউজিয়ামই মাইন নদীর ধারে৷ তাদের মধ্যে স্টেডেল মিউজিয়াম হলো সবচেয়ে নাম-করা৷ স্টেডেল মিউজিয়ামে ইউরোপীয় শিল্পকলার ৭০০ বছরের ইতিহাসের একটা আন্দাজ পাওয়া যায় – চতুর্দশ শতাব্দীর সূচনা থেকে হাল আমল পর্যন্ত শিল্পকলার নমুনা৷

স্টেডেল মিউজিয়ামের উপপরিচালক প্রফেসর ড. ইয়খেন সান্ডার জানালেন, ‘‘ফ্রাংকফুর্টের বিত্তশালী ব্যাংকার ইওহান ফ্রিডরিশ স্টেডেল-এর উইল থেকে ২০১ বছর আগে এই মিউজিয়ামের সৃষ্টি৷ স্টেডেল নিজেও শিল্পকলা সংগ্রহ করতেন, সে আমলে যার খুব চল ছিল৷ শিল্পকলাকে উচ্চবিত্তদের ঘর সাজানোর জন্য অপরিহার্য বলে মনে করা হতো৷ ওদিকে ফ্রাংকফুর্টে রাজারাজড়ারা বা বিশপরা কেউ থাকতেন না বলে এখানে বুর্জোয়া মহলেরই দাপট ছিল, তারাই ফ্রাংকফুর্টের স্টাইল নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন৷ ফ্রাংকফুর্ট আজও বুর্জোয়া, আর এই নাগরিকদের সাহায্যেই আজও স্টেডেল ফাউন্ডেশনের কাজ চলেছে৷’’

শ্যারন ব্যারকাল/এসি