1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সঙ্কুচিত হচ্ছে হাতির অভয়াশ্রম

১৯ মে ২০১০

দিনে দিনে সঙ্কুচিত হচ্ছে হাতির অভয়াশ্রম৷ যেখানে ঋতু পরিবর্তনের কারণে বা খাবারের খোঁজে বছরে গড়ে ৫ বার যাতায়াত করতো হাতিরা, সে পথগুলো এখন মানুষের দখলে৷ আর তাই খাদ্যের অভাবে হাতি নেমে আসছে লোকালয়ে৷

https://p.dw.com/p/NRal
ছবি: dpa

বাংলাদেশের শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় এলাকা৷ বছর জুড়ে এখানকার পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে বন্যহাতির তীব্র আতঙ্ক৷ সীমান্ত ও পাহাড়ি এই জনপদে সন্ধ্যা নামে হাতির আতঙ্কে৷ ফলে যার কাছে যা আছে তাই নিয়েই চলে হাতি প্রতিরোধ৷ রাতে বেজে ওঠে ঢাক- ঢোল, কাঁসার বাদ্য৷ বাজে বাঁশি৷

এই তো কয়েকদিন আগে এক খবরে জানা গেলো, ভারতের গুয়াহাটিতে রাস্তা পার হবার সময়ে দুই মাদি হাতিকে ট্রাক চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে৷ একটি হয়েছে মারাত্মক ভাবে আহত৷ সেটি ছিল গর্ভবতী৷ পরে গুয়াহাটি চিড়িয়াখানা পশু চিকিৎসাকেন্দ্রে সেই হাতিটি বাচ্চা প্রসব করে৷ সুখবর হলো বাচ্চাটি এখন সুস্থ৷

হাতিদের অবস্থা যে সংকটজনক, সে কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না৷ প্রায়ই শোনা যায় হাতির আক্রমণে মানুষের মৃত্যুর খবর৷ গত ২০ বছরে সরকারি হিসেবে বাংলাদেশে অন্তত ৩০ ব্যক্তির প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে৷ তবে স্থানীয় জনগণ কিন্তু মনে করছেন, এই সংখ্যা আরও বেশি৷ তাছাড়া আহত হবার ঘটনাও একেবারে কম নয়৷ ভিটেমাটি ছাড়ার কারণে সীমান্তের অনেক প্রান্তিক ও ক্ষুদ্রচাষী পরিবার হয়ে গেছে বেকার ও দিনমজুর৷ অন্যদিকে, চট্টগ্রামের দিকে তাকালে দেখা যাবে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের চুনতি-নাইক্ষ্যংছড়ি ও রাঙ্গুনিয়া-রাজস্থলী এবং কক্সবাজার দক্ষিণের টেকনাফ-কক্সবাজার-নাইক্ষ্যংছড়ি পথে সারা বছরই ছিলো হাতির যাতায়াত৷

উত্তর দক্ষিণ বরাবর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক নির্মাণ, আশপাশে ব্যাপক জনবসতি, রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প স্থাপন এবং ২৪ ঘণ্টা গাড়ি চলাচলের ফলে আজ বুনোহাতির চলাচলের এ পথ আর তাদের নেই৷ এভাবেই চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, লামা, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও ময়মনিংহ এলাকায় বনবিভাগের হাতি চলাচলের পথ আজ মানুষের দখলে৷ এ কারণে বুনোহাতির আক্রমণে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷

Flash-Galerie bedrohte Tierarten
ছবি: AP

স্থলচর প্রাণীদের মধ্যে হাতি বৃহত্তর৷ তাই এর খাদ্য এবং বাসস্থানের চাহিদাও বেশি৷ পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর আবাসস্থলও কমে যাচ্ছে৷

এ নিয়েই কথা বলছিলাম বাংলাদেশের ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন নেচার (আইইউসিএন)-এর সাবেক কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. আইনুন নিশাত বললেন, আগে বাংলাদেশে হাতিদের উপযোগী বন ছিল৷ কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে এই বন ধ্বংস হতে শুরু করে৷ ফলে হাতিরা পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের মেঘালয়ে চলে যায়৷ কিন্তু এখন মেঘালয়েও বন ধ্বংস হচ্ছে৷ ফলে হাতিরা পুরানো আবাসে ফিরে আসার চেষ্টা করছে৷ কিন্তু এখানে যখন তারা এসে খাদ্যের অভাবে পড়ছে, ঠিক তখনি উম্মত্ত হয়ে যাচ্ছে৷ মানুষের সহায় সম্বলের উপর হচ্ছে হাতিদের আক্রমণ৷

হাতি সংরক্ষণের জন্য কি করা প্রয়োজন? উত্তরে ড, আইনুন নিশাতের মন্তব্য, বাংলাদেশ এবং ভারত যদি যৌথভাবে সংরক্ষিত বণাঞ্চল গড়ে তুলত পারে, তাহলেই হয়তো এই অবস্থার অবসান হতে পারে৷ একই সঙ্গে হাতিদের খাবারের বিষয়টিও নিশ্টিত করতে হবে৷ দিতে হবে নিরাপত্তা৷

সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন নেচার (আইইউসিএন)-এর এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেল, হাতির প্রজাতিগুলোর মধ্যে এশীয় হাতির অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়৷ এক সময় এ হাতি ব্যাপক অঞ্চল জুড়ে পশ্চিমে টাইগ্রিস ইউফ্রেটিস নদীর অববাহিকা থেকে পারস্য ও ভারত উপমহাদেশ হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পর্যন্ত, উত্তরে চীনের ইয়াংসি-কিয়াং পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল৷ বিভিন্ন দ্বীপ – যেমন শ্রীলংকা, জাভা, সুমাত্রায় ছিল এদের অবাধ বিচরণ৷ বর্তমানে পশ্চিম এশিয়া পারস্য, জাভা ও চীন থেকে হাতি সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়েছে৷ আর অন্য যে সকল স্থানে এগুলো টিকে আছে, সেগুলোর অবস্থাও বেশ শোচনীয়৷ বিশ্বের যে ১৩টি দেশে এখনো এশীয় হাতি টিকে আছে, তার সংখ্যা সাকুল্যে ৩৫ হাজার থেকে ৫০ হাজারের বেশী হবে না৷ আর এই সংখ্যার মধ্যে শতকরা ৬৬ ভাগই রয়েছে ভারতীয় উপমহাদেশে৷

প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন