1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সবুজ হারিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল থেকে

৮ অক্টোবর ২০১০

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে৷ সবুজ হারিয়ে যেতে বসেছে সেখানে৷ কেন এমন হলো?

https://p.dw.com/p/PZ4S
The Haors Region in North-east Bangladesh
একদিকে তীব্র তাপপ্রবাহ অন্যদিকে অতিবৃষ্টিতে উত্তরাঞ্চলের প্রকৃতি এখন বিপর্যস্তছবি: Sophie Tarr

উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে এখন মাঝে মধ্যেই থাকে দেশের সর্বোচ্চ আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা৷ সেই সঙ্গে বৃষ্টিপাতও দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় গেছে কমে৷ তীব্র তাপপ্রবাহ ও কম বৃষ্টিপাতের কারণে জনমনে একটি প্রশ্নই ঘুরে-ফিরে আসছে, আর তা হলো বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে কি মরুকরণ শুরু হয়ে গেছে?

একটা সময় উত্তরের জেলাগুলোতে ছিল ঘন বন৷ ছিল সবুজের খেলা৷ নদী বয়ে যেতো আপন মনে৷ সেই নদীগুলোর অনেকগুলোই এখন প্রাণহীন৷ তারপরেও সেখানকার মানুষ স্বপ্ন দেখছেন সুন্দর এক আবাসভূমির৷ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের করা এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে বিগত প্রায় ৫০ বছরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে নানা তথ্য৷ সেগুলো প্রমাণ করছে শুকিয়ে খাক হতে থাকা উত্তরের জনপদের ভিন্ন চিত্র৷ জলবায়ুর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান তাপমাত্রা৷ ১৯৬২ সালে রাজশাহীতে জানুয়ারি মাসে গড় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ অন্যদিকে ২০০১-০৫ সালের এপ্রিলের গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ সামান্য বৃদ্ধি ঘটেছে৷

আগেই বলছিলাম নদীর কথা৷ বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন৷ আর এই ভাঙনের কবলে পড়ছেন সিরাজগঞ্জের হাসিনা বেগম৷ জানালেন, নদী ভাঙন তীব্র থেকে তীব্র হচ্ছে৷ এই নদীই কেড়ে নিচ্ছে তাদের সহায় সম্বল৷ নদী যদি কেড়ে নেয় তাদের সব কিছু তাহলে আর কিছুই রইলো না৷ হয়তো সব হারিয়ে তারা হয়ে যাবেন নিঃস্ব৷

হাসিনা বেগমের গ্রামের অধিকাংশ হারিয়ে গেছে নদীতে৷ অনেকে হয়েছে বাস্তুচ্যুত৷ এক কথায় যাদের বলা হয় জলবায়ু শরণার্থী৷ তবুও তারা স্বপ্ন দেখছেন৷ কিছু বেসরকারি সংগঠন এই সকল মানুষকে দিচ্ছে সহায়তা৷ হাসিনা বেগমের কথায়, ‘‘সহযোগিতা পেয়ে হয়তো আমরা একটু নিজ পায়ে দাঁড়াতে পারবে৷ কিন্তু নদী যেভাবে ভূমি খেঁকো হয়ে পড়েছে তাতে আমরা চিন্তিত৷ তারপরেও নদী যদি থেমে যায়, শান্ত হয়, তাহলে আমাদের মুখে হাসি ফুটবে৷ আমার বাচ্চারা যেতে পারবে স্কুলে৷''

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে বছরের প্রায় অর্ধেক সময় মাঝে মধ্যেই শুষ্ক প্রায় অবস্থা বিরাজ করে৷ নিবিড় চাষাবাদের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ভূমি অবক্ষয়ের মাধ্যমে মাটির উর্বরতা হারিয়ে মরুকরণের মতো ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে, এ কথাও বলছেন বিশেষজ্ঞরা৷

আজ তাই বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার মতো উত্তরের জেলাগুলোতেও গড়ে উঠেছে দুর্যোগ মোকাবিলা কমিটি৷ গ্রাম পর্যায়ে এই সব কমিটির প্রধান করা হয়েছে নারীদের৷ এমনই একজন পাবনার মোসাম্মৎ হুরমতি৷ বাড়ির কাজের পাশাপাশি স্থানীয় এক এনজিওর হয়ে তিনি রাস্তাঘাট মেরামতের কাজ করেন৷ হুরমতির কথায়, এখন সজাগ থাকার সময় সকলের৷

জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের কারণে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের শস্যভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত বিশাল বরেন্দ্র অঞ্চলে আশঙ্কাজনক হারে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে গেছে৷ রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলার ২৫টি উপজেলা নিয়ে গঠিত বিশাল বরেন্দ্র অঞ্চলে মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে বৃষ্টিপাত কমে গেছে হাজার মিলিমিটারেরও বেশি৷ ফলে মরুপ্রক্রিয়ার দিকে এগিয়ে যাওয়া বরেন্দ্র অঞ্চলে বর্ষার ভরা মৌসুমেও স্বাভাবিক বৃষ্টি না হওয়ায় সেচনির্ভর হয়ে পড়েছে চাষাবাদ৷ এক সময় বরেন্দ্র অঞ্চল ছিল পর্যাপ্ত গাছপালা ও ঝোপঝাড় সমৃদ্ধ৷ এগুলো এখন প্রায় নিঃশেষ৷ দিন দিন বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে এ অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ৷ তাই এখনই সময় এই পরিবেশ, এই পৃথিবী, এই মানব সম্প্রদায়ের জন্য কিছু একটা করার৷

প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন