1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সমুদ্রে আইসল্যান্ডের ছাইমেঘের প্রভাব পড়েছে

৩০ জুলাই ২০১০

আইসল্যান্ডের এইয়াফিয়াদলা আগ্নেয়গিরি থেকে বেরানো ছাই-এর প্রভাব পড়েছে সমুদ্রের জলে৷ এ নিয়ে চলছে গবেষণা৷ আশা করা হচ্ছে, শিগগিরই এই গবেষণার ফলাফল জানা যাবে৷

https://p.dw.com/p/OXzk
এইয়াফিয়াদলা আগ্নেয়গিরিছবি: AP

এপ্রিল মাসের এক সকাল৷ ঘুম থেকে জেগে উঠলেন জন টমাস৷ কেঁপে কেঁপে উঠছে তাঁর বাড়িঘর৷ প্রচণ্ড শব্দ চারিদিকে৷ ভয় পেয়ে গেলেন তিনি৷ হিমবাহের নীচে ঢাকা পড়া আইসল্যান্ডের এইয়াফিয়াদলা আগ্নেয়গিরি আবার জেগে উঠেছে৷ পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোর মানুষের চিৎকার৷ জরুরি সংস্থাগুলোর গাড়ির আওয়াজ৷ লাভা এগিয়ে আসছে৷ পাহাড়ের পাদদেশের বাড়িঘরগুলো একে একে পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে৷

এক দিন, দুই দিন ধরে নয়৷ বেশ কিছুদিন ধরে আগ্নেয়গিরিটি নিজে যে জীবন্ত, তা প্রমাণ করার জন্য গর্জন করেছে৷ এরই মাঝে লাভার সঙ্গে সঙ্গে জ্বালামুখ দিয়ে বের করে দিয়েছে ছাই৷ এই ছাই গিয়ে মিশলো মেঘে৷ সৃষ্টি হয়েছে ছাই মেঘের৷

পাথর বা কাঁচের মত বস্তু মেশানো এই মেঘ৷ তখন এই মেঘের কারণে বন্ধ হয়ে গেলো ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে বিমান চলাচল৷ কোটি কোটি টাকা লোকসানের মুখোমুখি বিমান সংস্থাগুলো৷ সঙ্গে যাত্রী দুর্ভোগ তো ছিলই৷ একটি জার্মান বিশেষজ্ঞ দল পরবর্তীতে এইয়াফিয়াদলার বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালালেন৷ ঐ গবেষণায় দেখা গেলো, এইয়াফিয়াদলা থেকে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় তিন টন ধোঁয়া উৎপন্ন হয়েছিল৷ তবে ধোঁয়াতে যে শক্ত উপাদানগুলো ছিল সেগুলোর অধিকাংশই প্রায় সাত ঘণ্টা পর আবার ভূমিতেই নেমে এসেছিল৷

এটা ছিল সেই সময়ের ঘটনা৷ কিন্তু এর পর? আগ্নেয়গিরি থেকে বেরোনো ছাই তো কেবল ভূমিতে নয় সাগরে গিয়েও পড়েছে৷ মূলত অ্যাটলান্টিক মহাসাগরে গিয়ে পড়েছে সেই ছাই৷ তাই সাগরে কী প্রতিক্রিয়া পড়েছে, সেই বিষয়টি নিয়েই গবেষণা চালাচ্ছেন একদল বিজ্ঞানী৷

ব্রিটেনের সাদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্কুল অফ ওশান এ্যান্ড আর্থ সায়েন্স'এর অধ্যাপক এরিক আখটারবার্গ'এর নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী সেই সমুদ্রে জাহাজের পাল তুলেছেন৷ তারা মহাসাগরের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করছেন৷ ডুব দিচ্ছেন সমুদ্রের অতল গভীরে৷ সাঁতার কাটছেন মাছেদের সঙ্গে, সমুদ্রের অভ্যন্তর থেকে নিয়ে আসছেন জলজ উদ্ভিদ৷ যে জাহাজটি নিয়ে তাঁরা এই গবেষণা কাজ পরিচালনা করছেন, তার নাম ইউকে ‘রয়্যাল রিসার্চ শিপ ডিসকভারি'৷ বলা হয় এটি হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভাসমান গবেষণাগার৷

অবশ্য এটাই এই অভিযানের প্রথম নয়৷ আগ্নেয়গিরিটি যখন প্রচণ্ডভাবে নিজের লাভা আর ছাই দিয়ে আকাশ ছোঁবার চেষ্টা করেছিল, তখনও এই জাহাজটি নিয়েই তারা বেরিয়ে পড়েছিলেন সমুদ্রে৷ দেখতে – কী হচ্ছে?

এবারের অভিযানের সময় গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলের কিছু অংশ প্রকাশ করেছেন তাঁরা৷ এক কথায় তাঁরা বলেছেন, এই ছাই সমুদ্রের জীব বৈচিত্রের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে৷ পানিতে বেড়ে গেছে লৌহকণা৷ ফলে তা মাছের জীবনের উপর প্রভাব যেমন ফেলেছে, তেমনি এর বিষাক্ততাও বেশ নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে সমুদ্রজলে৷

অধ্যাপক এরিক আখটারবার্গ এই গবেষণা জাহাজ থেকেই অন্যদের সঙ্গে নিজেও নিজেদের ব্লগে সর্বশেষ অবস্থা এবং প্রাপ্ত নমুনা পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল জানিয়ে দিচ্ছেন৷ এই ব্লগেই তাঁর সঙ্গে অন্যান্যদের মধ্যে আছেন তারই ছাত্রী আনা বোরেরো৷ তিনি জানাচ্ছেন, ‘‘সমুদ্রের জল এখানে বেশ ঠাণ্ডা৷ জমে বরফ হয়ে যাবার মতো অবস্থা৷ হিমশীতল ঠাণ্ডা জল সংগ্রহ করতে হচ্ছে৷ এই পানি সমুদ্রের উপরিভাগ থেকে সংগ্রহ করা নয়৷ একবারে গভীর থেকে তোলা হচ্ছে৷ সে জন্য কখনো কখনো আমাদের সি ডাইভ করতে হচ্ছে৷ তারপর এই ভাসমান ল্যাবরেটরিতেই চলছে এর পরীক্ষা নিরীক্ষা৷''

আরেক গবেষক ক্রেগ রাই একই ব্লগে জানাচ্ছেন, ‘‘কেবল সমুদ্রের পানি সংগ্রহ করেই আমরা ক্ষান্ত হইনি৷ আমার উপর দায়িত্ব বৃষ্টির পানি সংগ্রহের৷ সেই পানি সংগ্রহ করে আমার কাজ পরীক্ষা করা৷ আমি সেই কাজ করছি৷ আশা করছি এর ফলাফল জানাতে পারবো৷''

প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন