1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভাস্কর নভেরার নিভৃত বিদায়

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা৭ মে ২০১৫

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকেই চিরবিদায় নিলেন ভাস্কর নভেরা আহমদে৷ তিনি শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন৷ বাংলাদেশের আধুনিক ভাস্কর্যের পথিকৃৎ ও চিত্র সমালোচক নভেরা রেখে গেছেন তাঁর শিল্পকর্মের অসংখ্য গুণগ্রাহী৷

https://p.dw.com/p/1FMH9
Bangladesch Dhaka Tag der Muttersprache
ছবি: picture-alliance/AP

নভেরা আহমেদের গবেষক এবং তাঁর গুণমুগ্ধ শিল্পী হাশেম খান ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘অভিমানে ষাটের দশকে তিনি দেশ ছেড়ে যান৷ আর কখনো আসেননি৷ তাঁর অবস্থানও আমাদের জানা ছিল না৷ ১৯৯৭ সালের আগে প্যারিস প্রবাসী শিল্পী শাহাবুদ্দিনের স্ত্রী লেখিকা আনা ইসলাম তাঁকে সেখানে খুঁজে বের করেন৷''

তিনি জানান, ‘‘নভেরা আহমেদ সুস্থ হয়ে বাংলাদেশে আবার আসতে চেয়েছিলেন৷ কিন্তু তা আর সম্ভব হলো না৷''

নভেরা জন্মগ্রহণ করেছিলেন তাঁর পৈতৃক নিবাস চট্টগ্রামের আসকার দীঘির উত্তর পাড়ায় ১৯৩৯ সালের ২৯শে মার্চ৷ বাবা সৈয়দ আহমেদ৷ কলকাতার লরেটো স্কুল থেকে প্রবেশিকা পাস করে তিনি চলে যান লন্ডনে৷ সেখানে ক্যাম্বারওয়েল স্কুল অফ আর্টস অ্যান্ড ক্র্যাফটসে পড়াশুনা শেষে ইটালির ফ্লোরেন্স ও ভেনিস শহরে ভাস্কর্য বিষয়ে শিক্ষা নেন৷

১৯৫৬ সালে তিনি দেশে ফিরে ভাস্কর হামিদুর রহমানের সঙ্গে ঢাকায় শহীদ মিনারের প্রাথমিক নকশা প্রণয়নের কাজে নিয়োজিত হন৷ পরে অজ্ঞাত কারণে শহীদ মিনারের নির্মাতা হিসেবে তাঁর নামটি সরকারি কাগজ থেকে বাদ পড়ে যায়৷

ঢাকায় ১৯৬০ সালের ৭ই আগস্ট, কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থগারের প্রাঙ্গনে (এখনকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে) ‘ইনার গেজ' শিরোনামে তাঁর প্রথম একক ভাস্কর্য প্রদর্শনী হয়৷ তাতে ৭৫টি ভাস্কর্য স্থান পেয়েছিল৷ পরে সেখান থেকে ৩০টি ভাস্কর্য জাতীয় জাদুঘর সংরক্ষণ করে৷ সেই ভাস্কর্যগুলো নিয়ে ১৯৯৮ সালে জাদুঘর একটি প্রদর্শনীরও আয়োজন করে৷ নভেরার কয়েকটি ভাস্কর্য এখনও জাতীয় জাদুঘর প্রঙ্গনে আছে৷

এরপর ব্যাংকক ও প্যারিসে তাঁর ভাস্কর্য প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়৷ সর্বশেষ প্রদর্শনীও হয়েছে প্যারিসে ২০১৪ সালে৷ সেখানেই গত ৪৫ বছর ধরে তিনি নিভৃতে বসবাস করছিলেন৷ নভেরা আহমেদ ১৯৯৭ সালে একুশে পদক পান৷

শিল্পী হাশেম খান জানান, ‘‘তাঁর ভস্কর্য প্রদর্শনী যখন ঢাকায় হয়, তখন আমি চারুকলার প্রথম বর্ষের ছাত্র৷ তিনি ছিলেন সময়ের চেয়ে এগিয়ে৷ তাই সেই সময়ে তাঁর এই ভাস্কর্য প্রদর্শনী তেমন সমাদর পায়নি, যা তাঁকে অভিমানিনী করে৷ আসলে সেই সময়ে ভাস্কর্য প্রদর্শনী ছিল অকল্পনীয় ব্যাপার৷ কারণ তখন ছবি আঁকাকেই সমালোচনার চোখে দেখা হতো৷''

তিনি বলেন, ‘‘শহীদ মিনারের নকশাকার হামিদুর রহমান ছিলেন নভেরার বন্ধু৷ শহীদ মিনারের মূল পরিকল্পনায় ৬টি ভাস্কর্য ছিল, যার নকশা নভেরাই করেছিলেন৷ পরে নভেরা চলে যান৷ তাই ভাস্কর্য আর হয়নি৷''

Indigene Völker in Bangladesch
‘আমরা তোমাদের ভুলবো না...’ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS.com

হাসেম খান বলেন, ‘‘অধ্যাপক মুনতাসির মামুন এবং আমি ১৯৯৪ সালে নভেরাকে নিয়ে কাজ শুরু করি৷ দৈনিক সংবাদে মুনতাসির মামুন তাঁকে নিয়ে একটি লেখা প্রকাশ করলে বাংলাদেশে আবার নভেরার ব্যাপারে আগ্রহ তৈরি হয়৷ তাঁর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভাস্কর্য সংগ্রহ করে জাদুঘরে রাখা হয়, এখনও যা সেখানেই পড়ে আছে৷''

হাশেম খান জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডেরও সদস্য৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা উদ্যোগ নিয়েছি জাদুঘরে একটা নভেরা কর্নার করার৷''

তাঁকে একুশে পদক দেয়া সম্পর্কে হাসেম খানের বক্তব্য: ‘‘আমরা তাঁকে নিয়ে লেখালেখির পর তা শেখ হাসিনার নজরে পড়ে৷ তিনি আগ্রহ নিয়ে বিষয়টি জানেন৷ এরপর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহে তাঁকে একুশে পদক দেয়া হয়৷ অভিমান ভেঙে শেষ পর্যন্ত প্যারিসে থাকাকালীনই নভেরা সেই একুশে পদক গ্রহণ করেন৷''

নভেরা আহমেদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নভেরার মৃত্যু পুরো জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি৷ তাঁর মৃত্যুতে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরও শোক প্রকাশ করেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান