1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাংবাদিক নিপীড়নের হাতিয়ার ৫৭ ধারা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৫ জুন ২০১৭

বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে৷ এটা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছেন প্রভাবশালীরা৷ সর্বশেষ একজন সহকারি বিচারক এই আইনে এক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন৷

https://p.dw.com/p/2elKv
Ägypten Journalisten
ছবি: Getty Images/AFP/K. Desouki

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদক গোলাম মুজতবা ধ্রুব'র ১১ জুনের একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘একটি অসুস্থ শিশু, বিচারকের ট্রাক ও একটি মামলা'৷ প্রতিবেদনে মানিকগঞ্জে একজন বিচারকের বাসার মালামাল বহনকারী ট্রাক রাস্তা আটকে রাখায় একটি অসুস্থ শিশুকে হাসপাতালে নেয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ার খবর জানানো হয়৷ প্রতিবেদনে বিচারকসহ সব পক্ষের বক্তব্য রয়েছে৷ অথচ ঐ প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর মানিকগঞ্জ সদর থানায় গোলাম মুজতবা ধ্রুব'র বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা করেন সিনিয়র সহকারী বিচারক মাহবুবুর রহমান৷

Golam mustaba Dhrubo - MP3-Stereo

সাংবাদিক ধ্রুব ডয়চে ভেলকে বলেন, ‘‘এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, আমি মিথ্যা রিপোর্ট করেছি৷ ফোনে তাঁর ওপর প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করেছি৷ আমার প্রতিবেদনে ওই বিচারকসহ সব পক্ষের বক্তব্য আছে৷ আর টেলিফোন করেছি, এসএমস দিয়েছি তাঁর বক্তব্য নেয়ার জন্য৷ কোনো চাপ বা প্রভাব বিস্তারের জন্য নয়৷ আমার প্রতিবেদনে আইন সচিবেরও বক্তব্য আছে৷ এ রকম একটি ব্যালেন্সড প্রতিবেদনের জন্য আমার বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা হতে পারে, এটা আমি ভাবতেও পারছি না৷'' তিনি জানান, ‘‘মামলা হওয়ার পর আমি বিব্রতকর অবস্থায় আছি৷ পেশাগত দায়িত্ব পালনে ভয় পাচ্ছি৷ এই মামলায় আমার বিরুদ্ধে এখন পুলিশ কী ব্যবস্থা নেয়, তা নিয়ে শঙ্কায় আছি৷''

আরেক প্রশ্নের জবাবে ধ্রুব বলেন, ‘‘আমরা লক্ষ্য করছি সাংবাদিকদের হয়রানি করার জন্য এখন প্রভাবশালীরা এই আইনটি ব্যবহার করছেন৷ কোনো প্রতিবেদন তাঁদের বিপক্ষে গেলে এই আইনটি তাঁরা সাংবাদিক নিপীড়নে ব্যবহার করছেন৷''

এদিকে গত শনিবার রাতে পুলিশ দৈনিক হবিগঞ্জ সমাচার পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক গোলাম মোস্তফা রফিককে গ্রেপ্তার করে৷ তিনি হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবেরও সভাপতি৷ তার ‘অপরাধ' তিনি  ৮ জুন ‘এমপি মনোনয়ন থেকে বাদ পড়ছেন এমপি আব্দুল মজিদ খান' এমন শিরোনামে একটি খবর প্রকাশ করেন৷ আর তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে হবিগঞ্জ-২ আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ খান তাঁর বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় থানায় মামলা করেন৷ পুলিশ মামলা পেয়ে গোলাম মোস্তফা রফিককে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়৷ তিনি এখনো কারাগারে আছেন৷ 

Chowdhuri Mohammad Fariad - MP3-Stereo

হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী মোহাম্মদ ফরিয়াদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সাংবাদিক গোলাম মোস্তফা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা৷ তিনি একজন বয়স্ক ব্যক্তি৷ তিনি নানা রোগেও ভুগছেন৷ একটি নিরীহ প্রতিবেদনের জন্য এমপি তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা দিয়ে জেলে ঢুকিয়ে দিয়েছেন৷ আমরা হবিগঞ্জের সাংবাদিকরা ভয়ে আছি৷ যে কোনো প্রতিবেদন নিয়ে প্রভাবশালীরা চাইলে আমাদের জেলে ঢুকিয়ে দিতে পারেন৷''

তিনি বলেন, ‘‘সাংবাদিক গোলাম মোস্তফাকে গ্রেপ্তারের পর তাঁর পরিবার বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে৷ তাঁর মেয়ের বিয়ের তারিখ ছিল এ মাসেই, তা-ও আর হচ্ছে না৷'' প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘‘এই আইনটি প্রভাবশালীরা এখন সাংবাদিকদের হয়রানি ও নির্যাতনের জন্য ব্যবহার করছে৷ এমন চলতে থাকলে সাংবাদিকতা করা অসম্ভব হয়ে পড়বে৷'' 

Omar Faruk - MP3-Stereo

২০১৫ সালের ১৬ আগস্ট এক প্রভাবশলী মন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রতিবেদন এবং ফেসবুক স্ট্যাটাস দেয়ায় ঢাকায় আটক করা হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান সাংবাদিক প্রবীর শিকদারকে৷ পরে সাংবাদিকদের প্রতিবাদের মুখে তাঁকে জামিনে ছাড়া হলেও মামলা প্রত্যাহার হয়নি৷ ফরিদপুরে দায়ের করা তথ্য প্রযুক্তি আইনে ৫৭ ধারার মামলার বিচার শুরু হয়েছে ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাবুন্যালে৷ প্রবীর শিকদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমার বিচার শুরু হয়ে গেছে৷ আজও (বৃহস্পতিবার) আমি আদালতে হাজিরা দিয়েছি৷'' তিনি দুঃখ করে বলেন, ‘‘এ দেশের সাধারণ মানুষ আইনী হয়রানির শিকার হয়৷ আমিও তো একজন সাধারণ মানুষ৷ এই হয়রানিতো আমাকে মেনে নিতেই হবে৷''

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর প্রতিবেদক গোলাম মুজতবা ধ্রুব'র বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে সিনিয়র সাংবাদিক সালিম সামাদ জানান, ‘‘এ পর্যন্ত ১৩ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলার খবর আমরা জানি৷ সরকারি কর্মকর্তা, সংসদ সদস্য, বিচারক এমনকি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা করছে৷'' 

Probir Sikdar - MP3-Stereo

তিনি বলেন, ‘‘তথ্যমন্ত্রী এবং আইনমন্ত্রী এই আইনের ৫৭ ধারা বাতিল হবে বলে জানালেও সাংবাদিকদের ওপর এর অপপ্রয়োগ বন্ধ হচ্ছে না৷''

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব ওমর ফারুক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই আইনটি সাংবাদিকদের জন্য বিভীষিকায় পরিণত হয়েছে৷ প্রভাবশালীরা আইনটিকে সাংবাদিক নির্যাতনের হাতিয়ারে পরিণত করেছেন৷ আমরা এটা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছি৷ এটা বাতিল করতে হবে৷''

তবে তিনি সাংবাদিকদের খবর পরিবেশনে দায়িত্বশীল হওয়ারও  আহ্বান জানিয়েছেন৷