1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাখারভ পুরস্কার পেলেন কিউবান অনশন-যোদ্ধা গিলের্মো ফারিনাস

২১ অক্টোবর ২০১০

ইউরোপিয় পার্লামেন্ট এবারের সাখারভ মানবাধিকার পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে এই বৃহস্পতিবার গিলের্মো ফারিনাসের নাম ঘোষণা করেছে৷ এই পুরস্কার নিজের হাতে গ্রহণ করতে কিউবার সরকার কি তাঁকে স্ট্রাসবুর্গে আসতে দেবে?

https://p.dw.com/p/PjxS
গিলের্মো ফারিনাসছবি: AP

এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তাঁর শ্রেষ্ঠ সময়... লিখেছিলেন বাংলাদেশের কবি হেলাল হাফিজ৷ অনশন-যোদ্ধা গিলের্মো ফারিনাস যেন তেমনই এক অনন্ত যৌবন যোদ্ধা৷ অনশন করেই তিনি যুদ্ধজয়ে ছিনিয়ে আনেন কাঙ্খিত বিজয়৷

তাঁর এই ৪৮ বছরের জীবনে এপর্যন্ত মোট ২৩ বার অনশন ধর্মঘট করেছেন ফারিনাস৷ জুলাইয়ের আট তারিখে তিনি তাঁর সর্বশেষ অনশনটি ভেঙেছিলেন, সেটির লক্ষ্য ছিল ৫২ জন কিউবান রাজবন্দির মুক্তি৷ জানা গেছে, সাখারভ পুরস্কার মনোনয়নের ক্ষেত্রে ইউরোপিয়ান পিপলস পার্টি ফারিনাসকে সমর্থন করেছিল, সমর্থন করেছেন ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের নেতারা৷ যে কারণে অপর দুই চূড়ান্ত মনোনয়নপ্রাপ্ত ইথিওপিয়ান বিরোধী দলীয় নেতা বির্টুকান মিডেকসা এবং ইসরায়েলি এনজিও ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স'কে ডিঙিয়ে ফারিয়াস এবারের সাখারভ পুরস্কারটি পেলেন৷

সাখারভ পুরস্কারের অর্থমূল্য পঞ্চাশ হাজার ইউরো৷ অবশ্য এবছরের ডিসেম্বর মাসের ১৫ তারিখে ফারিয়াস এই পুরস্কার গ্রহণ করতে শেষপর্যন্ত ফ্রান্সের স্ট্রাসবুর্গে পৌঁছাতে কিউবান সরকারের অনুমতি পাবেন কি না সে বিষয়টি এখনো বোঝা যাচ্ছে না৷ উল্লেখ্য, গিলের্মো ফারিনাসের আগে কিউবা থেকে সাখারভ পুরস্কার পেয়েছিলেন আরো দুইজন৷ তাঁদের কেউই কিউবার সরকারের কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণের জন্য বিদেশ সফরের অনুমতি পাননি৷

NO FLASH Kuba Guillermo Farinas
ছবি: picture-alliance/dpa

সাখারভ পুরস্কারটি দেয়া হয় চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য৷ প্রতিবাদী গিলের্মো ফারিনাসও তাঁর অস্ত্র হিসেবে অনশনকে ব্যবহার করে বরাবরই কিউবায় মতপ্রকাশের বৃহত্তর স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে চেয়েছেন৷ রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্ত করতে চেয়েছেন৷ উল্লেখ্য, আটচল্লিশ বছর বয়স্ক এই ঝানু সাংবাদিক এবং মনস্তত্ত্ববিদ তাঁর এই যাপিত জীবনে দীর্ঘদিন টানা অনশনের পর অনশন করে বহুবারই রীতিমত প্রাণের ঝুঁকি নিয়েছেন৷

অনশন করে প্রতিবাদ আর অনশন করে দাবি আদায়৷ প্রতিবাদের এই ধরণটিকে ফারিনাস যেন একেবারে তার নিজস্বই বানিয়ে নিয়েছেন৷ বছরের পর বছর অনশন করে আসছেন এই কিউবান৷ এর ফলে তাঁর শারীরিক অবস্থাও বেশ কয়েকবারই সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছিল৷ এবছরের শুরুর দিকে টানা ১৩৫ দিন অনশন করে তো তিনি প্রায় মারাই যেতে বসেছিলেন৷ কিন্তু তাঁর সেই ১৩৫ দিনের টানা অনশন কিউবা সরকারকে বাধ্য করেছিল কারাগারে আটক বায়ান্ন জন রাজনৈতিক বন্দিকে মুক্তি দিতে৷

ফারিনাস বিশ্বাস করেন তাঁর ব্যক্তিগত এই ত্যাগ কিউবার কট্টর মার্কসবাদী সরকারের বিরুদ্ধে একটি সফল অস্ত্র, যা তাঁর মতবিশ্বাস এবং সংগ্রামকে আরো দৃঢ় এবং মজবুত করছে৷ ১৯৯৫ সাল থেকে ১৯৯৭ সালের মধ্যে আরো একবার তিনি স্থানীয় এক হাসাপাতালের দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনশন করে ফল পেয়েছিলেন৷ উল্লেখ্য, ঐ হাসপাতালটিতে তিনি কাজ করতেন৷ ২০০৬ সালে ৬ মাসের দীর্ঘ অনশনে ছিলেন ফারিনাস৷ অবশ্য সেবার কিউবার সরকার ফারিনাসের দাবি মানেনি৷

সংবাদমাধ্যমকে ফারিনাস জানিয়েছেন, তিনি তাঁর এই ভাঙাচুরো শরীরটাকে কিউবার বৃহত্তর স্বাধীনতা অর্জনের যুদ্ধে ব্যবহৃত এক অস্ত্রই মনে করেন৷ এবছরের গোড়ার দিকে সেপটিক শক আর ব্যাক্টেরিয়াজনিত সংক্রমণে তিনি প্রায় মরতেই বসেছিলেন৷ অথচ এসব বিষয়ে একেবারে নির্বিকারচিত্ত ফারিনাস আবারো নতুন আরেকটি দাবির পক্ষে অনশনের কথা ভাবেন৷ শুধু ভাবা নয়, তিনি তা বাস্তবায়নের দিনক্ষণ ঠিক করে অনশন শুরুও করে দেন৷ এভাবেই এই প্রতিবাদী মানুষটি তার ক্ষুধাকে জয় করেছেন৷ আর ক্ষুধা অস্ত্রেই কিউবার কট্টর মার্কসবাদী সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন৷

প্রতিবেদন: হুমায়ূন রেজা

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক