ক্রমশই নাজুক গণতন্ত্র
১৩ জুন ২০১৪আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থা ফ্রিডম হাউস পরিচালিত এই সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজারবাইজান, বেলারুশ, কাজাকস্তান, কিরগিজিস্তান ও রাশিয়াসহ ইউরেশিয়া অঞ্চলের ৮০ শতাংশ মানুষ কার্যত স্বৈরাচারী সরকারের অধীনে দিন কাটাচ্ছে৷
ইউক্রেনের সাম্প্রতিক সংকট গণতান্ত্রিক ইউরোপ এবং ইউরেশিয়া অঞ্চলের আদর্শিক ও রাজনৈতিক বিভাজনের চিত্রটি পুরো বিশ্বের সামনে নিয়ে এসেছে বলেই মনে করছে ফ্রিডম হাউস৷
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই মনে করেন, এ দুই অঞ্চলের দূরত্ব দীর্ঘদিন ধরেই বাড়ছিল৷ সাবেক সোভিয়েত দেশগুলোর সরকারের ওপর রাশিয়ার প্রভাব বাড়ছিল ক্রাইমিয়া ‘দখলের' অনেক আগে থেকেই৷
‘সুশীল সমাজের বিকাশের পথ রুদ্ধ এবং গণমাধ্যমের কণ্ঠ রোধ' করার মধ্য দিয়ে এসব দেশের সরকার গণতন্ত্রের জন্য অক্সিজেনের প্রবাহ ‘পুরোপুরি বন্ধ' করে দিয়েছে বলে ফ্রিডম হাউসের প্রতিবদেনে মন্তব্য করা হয়েছে৷
এতে বলা হয়েছে, ‘‘২০১৩ সালে এ অঞ্চলের দেশগুলো একের পর এক অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ নিয়েছে,যার নেতৃত্ব দিয়েছে মস্কো৷''
কিরগিজিস্তানের উদাহরণ টেনে প্রতিবদেনে বলা হয়েছে, গত মার্চে দেশটি সমকামীদের প্রচার নিষিদ্ধ করে একটি বিল তুলেছে, যা তৈরি করা হয়েছে একেবারে রাশিয়ার আইনের আদলে৷ আর্মেনিয়া, বেলারুশ, জর্জিয়া ও কাজাখস্তানও একই ধরনের আইন করার বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছে৷
ফ্রিডম হাউসের প্রকল্প পরিচালক সিলভানা হাবডাঙ্ক-কোলাচকভস্কা বলেন, ‘‘২০১৩ সালের ঘটনাপ্রবাহ থেকে এটা স্পষ্ট যে এ অঞ্চলের স্বৈরাশাসকদের কাছে রুশ কর্তৃপক্ষ হলো রোল মডেল৷ এমনকি যে সব দেশের সরকার রুশপন্থিদের কঠোর হাতে দমন করেছে, সেসব দেশও রাশিয়ার দেখানো পথই অনুসরণ করছে৷''
প্রতিবদনের বলা হয়েছে, দশ বছর আগে ইউরেশিয়া অঞ্চলের প্রতি পাঁচজনে একজন স্বৈরাচারী শাসনের অধীনে ছিল৷ আর এখন এই অনুপাত বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রতি পাঁচজনে চারজন৷
ইউরেশিয়া অঞ্চলের যে ২৯টি দেশের পরিস্থিতি এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে, তার মধ্যে ‘গণতান্ত্রিক দেশ' হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে ১৩টিকে৷ দশটি দেশ কর্তৃত্ববাদী সরকারের অধীন এবং বাকি ছয়টি দেশ এক ধরনের পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশ বুলগেরিয়া, চেক রিপাবলিক ও হাঙ্গেরিসহ ১৬টি দেশে গণতন্ত্রের মূল সমস্যা হিসাবে দুর্নীতি ও সুশাসনের অভাবকে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ ২০১২ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতার পর কেবল রুমানিয়ার ক্ষেত্রেই গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে ফ্রিডম হাউসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে৷
গণতান্ত্রিক চর্চার বিচারে এসব দেশের মধে সবচেয়ে কম নম্বর পেয়েছে বেলারুশ, তুর্কমেনিস্তান ও উজবেকিস্তান৷ ক্রোয়েশিয়ার ইইউভুক্তি এবং কসভো-সার্বিয়া চুক্তির মধ্য দিয়ে বলকান দেশগুলোর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও এসব দেশের ‘অকার্যকর' সরকার সার্বিকভাবে গণতন্ত্রকে পেছনে নিয়ে যাচ্ছে বলে ফ্রিডম হাউস মনে করছে৷
জেকে/এসবি (এএফপি)