1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সামুদ্রিক প্রাণীদের অনেক তথ্যই অজানা

১১ অক্টোবর ২০১০

পৃথিবীর সমুদ্র এবং মহাসমুদ্রগুলো বিজ্ঞানীদের ধারণার চেয়েও বেশি সমৃদ্ধ এবং বৈচিত্র্যময়৷ দশ বছর ধরে সামুদ্রিক জীবদের উপর চালানো গবেষণার পর এমনটাই মত বিজ্ঞানীদের৷

https://p.dw.com/p/Pay3
সমুদ্রের নিচে চলছে গবেষণাছবি: AP

সম্প্রতি সামুদ্রিক জীবদের নিয়ে দশ বছরের আদমশুমারি শেষ হয়ে গেল৷ ৮০টি দেশের ২,৭০০ বিজ্ঞানী অংশ নেন এই কাজে৷ খরচ হয় ৬৫ কোটি মার্কিন ডলার৷ এই গবেষণার প্রয়োজনে অত্যন্ত ঠান্ডা পানি থেকে শুরু করে উষ্ণ হ্রদ পর্যন্ত সব জায়গায় বিচরণ করেছেন বিজ্ঞানীরা৷ শুধু তাই নয়, জাপানের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলের গভীরতম মহাসমুদ্রের ৬ মাইল গভীরেও জীবের সন্ধান করেছেন গবেষকরা৷ ফলে প্রাণীগণনায় জায়গা করে নিয়েছে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অণুজীব থেকে শুরু করে বৃহত্তম তিমি পর্যন্ত৷

‘ওসেন বায়োজিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম'

বিজ্ঞানীরা সামুদ্রিক জীবদের ভ্রমণশীল আচরণ নিয়ে গবেষণা করেছেন৷ কোন এলাকায় কোন জীবের বিচরণ বেশি, সংখ্যায় তারা কেমন - সব তথ্যই যোগাড় করা হয়েছে৷ এসব জীবের বংশবৃদ্ধির প্রক্রিয়া এবং খাদ্যাভ্যাসকেও কম্পিউটারের তথ্যভাণ্ডারে যোগ করা হয়েছে৷ এই তথ্যভাণ্ডারের নাম ‘ওসেন বায়োজিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম'৷ প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার প্রজাতি সম্পর্কে দুই কোটি আশি লাখ প্রতিবেদন পাওয়া যাবে এই বিপুল তথ্যভান্ডারে৷ প্রতিনিয়তই নিত্য নতুন তথ্য যোগ হচ্ছে সেখানে৷ গণনার কাজে অংশ নেওয়া বিজ্ঞানী পেট্রিকা মিলোস্লাভিচ এই সম্পর্কে জানান, এই প্রথম সাধারণ মানুষের জন্য সব তথ্য এক জায়গায় জমা করা হয়েছে৷ ফলে যেকেউ চাইলে যেকোন তথ্য, উদাহরণস্বরূপ ক্যারিবিয়ান সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে তথ্য চাইলে এক ক্লিকেই বিস্তারিত পাবেন৷ আনুষঙ্গিক তথ্য হিসেবে সংশ্লিষ্ট এলাকার বিভিন্ন প্রজাতির তথ্য এমনকি বিভিন্ন গবেষণা গ্রুপের বিস্তারিতও জানা যাবে৷

Flash-Galerie Zensus Marine Life mit bislang unentdeckten Meeresbewohnern
সম্প্রতি সামুদ্রিক জীবদের নিয়ে দশ বছরের আদমশুমারি শেষ হয়েছেছবি: Laurence Madin, WHOI

সাদা হাঙ্গরের ক্যাফে

বিশাল গণনায় বিজ্ঞানীরা সামুদ্রিক জীবের কিছু অস্বাভাবিক স্বভাব-চরিত্রও আবিষ্কার করেছেন৷ যেমন প্যাসিফিক সমুদ্রে তাঁরা খুঁজে পেয়েছেন সাদা হাঙ্গরের ক্যাফে আর মার্সিন মাছের খেলারমাঠ৷ দেখা মিলেছে অস্বাভাবিক বড় ব্যাকটিরিয়া এবং কম্বোজের৷

কাঁকড়াজাতীয় প্রাণী বেশি

গবেষণারত বিজ্ঞানীরা গত অগাস্টে আবিষ্কার করেছেন, সামুদ্রিক জীবদের বসবাসের সবচেয়ে ভালো জায়গা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া এবং জাপানের সমুদ্রকূল৷ সাগর-মহাসাগরে কাঁকড়াজাতীয় প্রাণীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি৷ সহজ করে বললে, মোট সামুদ্রিক জীবের এক পঞ্চমাংশই হল কাঁকড়াজাতীয় প্রাণী৷

Oktopus Paul
সামুদ্রিক প্রজাতির সংখ্যা এক মিলিয়নের বেশি, কিন্তু বিজ্ঞান বিষয়ক নথিপত্রে মাত্র আড়াই লাখ প্রজাতির তথ্য যোগ হয়েছেছবি: picture-alliance/dpa

নথিপত্রে আড়াই লাখ প্রজাতি

বিজ্ঞানীরা হিসেব করে দেখেছেন, এই বিশ্বে সামুদ্রিক প্রজাতির সংখ্যা এক মিলিয়নের বেশি কিন্তু বিজ্ঞান বিষয়ক নথিপত্রে মাত্র আড়াই লাখ প্রজাতির তথ্য এপর্যন্ত যোগ করা হয়েছে৷ এই তালিকায় অবশ্য অণুজীবগুলোকে বাদ দেওয়া হয়েছে, কেননা শুধু এদেরই ধরণ এক বিলিয়নের বেশি৷

এই বৃহৎ গণনায় অংশ নেওয়া বিজ্ঞানীদের কমিটির সহসভাপতি মিরিয়াম সিবুত জানান, এটি আমাদের জানা বিশ্বের পরিধি বাড়িয়েছে৷ আমরা গভীর সমুদ্রের বিরূপ পরিবেশেও সুবিস্তৃত জীববৈচিত্র্যের সন্ধান পেয়েছি৷

জানার বাকি অনেক

বিজ্ঞানীরা গণনায় ১৬,৭৬৪ প্রজাতির মাছের বিস্তারিত তুলে ধরেছেন৷ কিন্তু এখনো নাকি আরো ৫ হাজার প্রজাতির মাছ ঠিকঠাকভাবে আবিষ্কারই করা হয়নি৷ তাছাড়া ইউরোপীয় সমুদ্রগুলোর প্রাণিকুলের মাত্র ১০ শতাংশ তথ্য জোগাড় বাকি থাকলেও ভূমধ্যসাগরের গভীর জলের ৭৫ শতাংশ জীবের তথ্য এখনো নথিভুক্ত হয়নি৷ অস্ট্রেলিয়ার আশেপাশের সমুদ্রগুলোর ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ৮০ শতাংশ৷

প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম

সম্পাদনা: সুপ্রিয় বন্দোপাধ্যায়