1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সার্বিয়ায় গৃহ নির্যাতন

২৪ এপ্রিল ২০১১

নিজ গৃহে, পরিবারে মেয়েদের নির্যাতিত হবার বহু ঘটনা ঘটছে পূর্ব ইউরোপের দেশ সার্বিয়ায়৷ সেখানে এখনো গৃহ নির্যাতনের শিকার হাজার হাজার মহিলা৷

https://p.dw.com/p/1137a
শিশু সন্তানসহ এক সার্বীয় নারীছবি: DW

যুদ্ধপরবর্তী সার্বিয়ায় পরিবর্তন আসবে – আগের সব কিছু পাল্টে যাবে এমন একটি বিশ্বাস ছিল সবার মধ্যে৷ কিন্তু তা হয়নি৷ গত কয়েক বছরে মহিলাদের ওপর নির্যাতন বেড়েছে আগের চেয়ে অনেক বেশি৷ গৃহ নির্যাতনের শিকার গৃহবধু গর্দানা৷ নির্যাতনের সবগুলো ফাইল সে সাজিয়ে রেখেছে৷ স্বামী কোন ধরণের নির্যাতন চালিয়েছে তার উল্লেখ আছে নথিপত্রে৷ শারীরিক, মানসিক – কোন অত্যাচারই বাদ যায়নি৷ বিয়ের পর থেকেই শুরু হয়েছে স্বামীর নির্যাতন৷

গত সাত বছর ধরে গর্দানা আইনের কাছ থেকে সাহায্য চেয়ে আসছে কিন্তু সে কোন ধরণের সাহায্য পায়নি৷ আইন এ ক্ষেত্রে পুরোপুরি অচল থেকেছে৷ গর্দানা আক্ষেপ করে বললেন,‘‘আমার স্বামী আমাকে সবসময়ই মারধোর করতো৷ আমার মাথার চুল টেনে টেনে ছিঁড়তো৷ কেউ আমাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি৷ আমি যখন একটি পুলিশকে শরীরের দাগগুলো দেখিয়েছিলাম, পুলিশ বলেছিল, ‘‘তুমিতো এখনো বেঁচে আছো, তোমার হাত-পা অক্ষত আছে, কেটে আলাদা করা হয়নি - পুলিশের কাছে রিপোর্ট মত বা পুলিশকে জানানোর মত কিছুই হয়নি৷''

হাজার হাজার নির্যাতিত মহিলার ভিড়ে গর্দানাও একজন৷ সার্বিয়ায় এই সমস্যা প্রতিদিনই বাড়ছে৷ প্রতি তিনজন মহিলার মধ্যে একজন শারীরিক নির্যাতনের শিকার৷ গত পাঁচ বছরে এই সংখ্যা তিনগুন বেড়েছে৷

যুদ্ধপরবর্তী সার্বিয়ায় সবাই মারমুখো হয়ে থাকে

Obst und Gemüsemarkt in Belgrad
সার্বিয়ার একটি ফল ও সব্জির বাজারছবি: DW

বেলগ্রেড শহরের মাঝখানে জড়ো হয়েছে প্রায় দুশোজন মানুষ৷ এর মধ্যে শিল্পী, মানবাধিকার কর্মী, সমাজকর্মী সবাই রয়েছে৷ এর মধ্যে চারজন মহিলা সম্পূর্ণ কালো আর লাল রঙ মেশানো পোশাক পরে এসেছে৷ তারা অভিনয় করে দেখাচ্ছে৷ কেউ নির্যাতিত নারীর ভূমিকায়, কেউ ধর্ষিতার৷ কিছুক্ষণ পরই তারা রাস্তায় তাদের মাথা ঠুকছে৷ যেন কেউ জোর করে তা করাচ্ছে৷ সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যেই এই অভিনয়৷ যেভাবেই হোক সার্বিয়াকে গৃহ নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে৷ সাশা পোকরায়াক বললেন,‘‘খুব বেশিদিন হয়নি আমরা যুদ্ধের মধ্যে থেকে বের হয়ে এসেছি৷ এখনো সবাই মারমুখো হয়ে থাকে৷ এখনো অনেক বাড়িতে ভারি অস্ত্র লুকানো রয়েছে৷''

সাশা পোকরায়াক পেশায় একজন মনস্তত্ববিদ৷ যে দলটি এ ধরণের অভিনয়ের আয়োজন করেছে তিনি তার সঙ্গে জড়িত৷ তিনি জানান, মেয়েদের উপর এই নির্যাতনের জন্য অনেক কিছু দায়ী৷ এর সঙ্গে জড়িত অনেক ধরণের সমস্যা৷ এর সঙ্গে ১৯৯০ সালের বলকান যুদ্ধেরও সম্পর্ক রয়েছে৷ তখন সবাই খুব অল্পেই উত্তেজিত হয়ে পড়তো৷ শুরু হয়ে যেত হাতা-হাতি৷ এর সঙ্গে ছিল দারিদ্র্য, আর্থিক সমস্যা৷ তখন থেকেই শুরু হয় মানসিকতার পরিবর্তন এবং তা হয় নেতিবাচকভাবেই৷ আক্ষেপের সঙ্গে সাশা জানালেন,‘‘এখনো নির্যাতন সহ্য করা হয়৷ বিশেষ করে গৃহ নির্যাতনকে খুবই স্বাভাবিকভাবে নেয়া হয়েছে৷ আর যদি কোন মহিলার ওপর নির্যাতন চালানো হয় তাহলে তা সবাই মেনে নেয়৷ তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে কেউই সময় নষ্ট করতে চায় না৷ এটা সমাজের একটি অংশ হিসেবে ধরা হচ্ছে৷ কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলছে এ ধরণের আচরণ আর কোন অবস্থাতেই বরদাস্ত করা হবে না৷ কিন্তু কেউই তা মেনে চলছে না৷ আমি তাই দেখছি৷''

সরকার গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে বিষয়টি

তবে ধীরে ধীরে সবাই মনে করছে যে এর একটা প্রতিকার হওয়া উচিত৷ এভাবে আর চলতে পারে না৷ সম্প্রতি সচেতনতা বাড়াতে টেলিভিশনে দেখানো হচ্ছে বিজ্ঞাপন৷ একটি মহিলার মুখচ্ছবি৷ চোখ আর মুখের কাছে কালো দাগ৷ আরেক চোখ ভীষণভাবে ফোলা৷ আট বছর আগেই গৃহ নির্যাতনকে ফৌজদারি অপরাধের আওতায় ফেলা হয়েছে৷ এখন সরকার চেষ্টা করছে এই অসভ্য আচরণকে পুরোপুরি বন্ধ করতে৷ সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ভেসনা ইয়ারিক এই প্রকল্পে কাজ করছেন৷ ইয়ারিক বললেন,‘‘সরকার খুব সক্রিয়ভাবে এই বিষয় নিয়ে কাজ করছে না, তানিয়ে প্রায়ই আমরা সমালোচনার মুখোমুখি হই৷ যারা এসব নির্যাতনের শিকার তাদের সাহায্য করছি না একথাও আমরা শুনি৷ আর একারণেই আমরা এই বিষয়টির দিকে বেশ ভালোভাবে নজর দিচ্ছি৷ আমরা ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছি৷ সবার আগে প্রয়োজন সাধারণ মানুষের আস্থা৷ আমাদের কাজে তাদের বিশ্বাস৷''

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক