সার্বিয়ায় গৃহ নির্যাতন
২৪ এপ্রিল ২০১১যুদ্ধপরবর্তী সার্বিয়ায় পরিবর্তন আসবে – আগের সব কিছু পাল্টে যাবে এমন একটি বিশ্বাস ছিল সবার মধ্যে৷ কিন্তু তা হয়নি৷ গত কয়েক বছরে মহিলাদের ওপর নির্যাতন বেড়েছে আগের চেয়ে অনেক বেশি৷ গৃহ নির্যাতনের শিকার গৃহবধু গর্দানা৷ নির্যাতনের সবগুলো ফাইল সে সাজিয়ে রেখেছে৷ স্বামী কোন ধরণের নির্যাতন চালিয়েছে তার উল্লেখ আছে নথিপত্রে৷ শারীরিক, মানসিক – কোন অত্যাচারই বাদ যায়নি৷ বিয়ের পর থেকেই শুরু হয়েছে স্বামীর নির্যাতন৷
গত সাত বছর ধরে গর্দানা আইনের কাছ থেকে সাহায্য চেয়ে আসছে কিন্তু সে কোন ধরণের সাহায্য পায়নি৷ আইন এ ক্ষেত্রে পুরোপুরি অচল থেকেছে৷ গর্দানা আক্ষেপ করে বললেন,‘‘আমার স্বামী আমাকে সবসময়ই মারধোর করতো৷ আমার মাথার চুল টেনে টেনে ছিঁড়তো৷ কেউ আমাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি৷ আমি যখন একটি পুলিশকে শরীরের দাগগুলো দেখিয়েছিলাম, পুলিশ বলেছিল, ‘‘তুমিতো এখনো বেঁচে আছো, তোমার হাত-পা অক্ষত আছে, কেটে আলাদা করা হয়নি - পুলিশের কাছে রিপোর্ট মত বা পুলিশকে জানানোর মত কিছুই হয়নি৷''
হাজার হাজার নির্যাতিত মহিলার ভিড়ে গর্দানাও একজন৷ সার্বিয়ায় এই সমস্যা প্রতিদিনই বাড়ছে৷ প্রতি তিনজন মহিলার মধ্যে একজন শারীরিক নির্যাতনের শিকার৷ গত পাঁচ বছরে এই সংখ্যা তিনগুন বেড়েছে৷
যুদ্ধপরবর্তী সার্বিয়ায় সবাই মারমুখো হয়ে থাকে
বেলগ্রেড শহরের মাঝখানে জড়ো হয়েছে প্রায় দুশোজন মানুষ৷ এর মধ্যে শিল্পী, মানবাধিকার কর্মী, সমাজকর্মী সবাই রয়েছে৷ এর মধ্যে চারজন মহিলা সম্পূর্ণ কালো আর লাল রঙ মেশানো পোশাক পরে এসেছে৷ তারা অভিনয় করে দেখাচ্ছে৷ কেউ নির্যাতিত নারীর ভূমিকায়, কেউ ধর্ষিতার৷ কিছুক্ষণ পরই তারা রাস্তায় তাদের মাথা ঠুকছে৷ যেন কেউ জোর করে তা করাচ্ছে৷ সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যেই এই অভিনয়৷ যেভাবেই হোক সার্বিয়াকে গৃহ নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে৷ সাশা পোকরায়াক বললেন,‘‘খুব বেশিদিন হয়নি আমরা যুদ্ধের মধ্যে থেকে বের হয়ে এসেছি৷ এখনো সবাই মারমুখো হয়ে থাকে৷ এখনো অনেক বাড়িতে ভারি অস্ত্র লুকানো রয়েছে৷''
সাশা পোকরায়াক পেশায় একজন মনস্তত্ববিদ৷ যে দলটি এ ধরণের অভিনয়ের আয়োজন করেছে তিনি তার সঙ্গে জড়িত৷ তিনি জানান, মেয়েদের উপর এই নির্যাতনের জন্য অনেক কিছু দায়ী৷ এর সঙ্গে জড়িত অনেক ধরণের সমস্যা৷ এর সঙ্গে ১৯৯০ সালের বলকান যুদ্ধেরও সম্পর্ক রয়েছে৷ তখন সবাই খুব অল্পেই উত্তেজিত হয়ে পড়তো৷ শুরু হয়ে যেত হাতা-হাতি৷ এর সঙ্গে ছিল দারিদ্র্য, আর্থিক সমস্যা৷ তখন থেকেই শুরু হয় মানসিকতার পরিবর্তন এবং তা হয় নেতিবাচকভাবেই৷ আক্ষেপের সঙ্গে সাশা জানালেন,‘‘এখনো নির্যাতন সহ্য করা হয়৷ বিশেষ করে গৃহ নির্যাতনকে খুবই স্বাভাবিকভাবে নেয়া হয়েছে৷ আর যদি কোন মহিলার ওপর নির্যাতন চালানো হয় তাহলে তা সবাই মেনে নেয়৷ তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে কেউই সময় নষ্ট করতে চায় না৷ এটা সমাজের একটি অংশ হিসেবে ধরা হচ্ছে৷ কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলছে এ ধরণের আচরণ আর কোন অবস্থাতেই বরদাস্ত করা হবে না৷ কিন্তু কেউই তা মেনে চলছে না৷ আমি তাই দেখছি৷''
সরকার গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে বিষয়টি
তবে ধীরে ধীরে সবাই মনে করছে যে এর একটা প্রতিকার হওয়া উচিত৷ এভাবে আর চলতে পারে না৷ সম্প্রতি সচেতনতা বাড়াতে টেলিভিশনে দেখানো হচ্ছে বিজ্ঞাপন৷ একটি মহিলার মুখচ্ছবি৷ চোখ আর মুখের কাছে কালো দাগ৷ আরেক চোখ ভীষণভাবে ফোলা৷ আট বছর আগেই গৃহ নির্যাতনকে ফৌজদারি অপরাধের আওতায় ফেলা হয়েছে৷ এখন সরকার চেষ্টা করছে এই অসভ্য আচরণকে পুরোপুরি বন্ধ করতে৷ সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ভেসনা ইয়ারিক এই প্রকল্পে কাজ করছেন৷ ইয়ারিক বললেন,‘‘সরকার খুব সক্রিয়ভাবে এই বিষয় নিয়ে কাজ করছে না, তানিয়ে প্রায়ই আমরা সমালোচনার মুখোমুখি হই৷ যারা এসব নির্যাতনের শিকার তাদের সাহায্য করছি না একথাও আমরা শুনি৷ আর একারণেই আমরা এই বিষয়টির দিকে বেশ ভালোভাবে নজর দিচ্ছি৷ আমরা ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছি৷ সবার আগে প্রয়োজন সাধারণ মানুষের আস্থা৷ আমাদের কাজে তাদের বিশ্বাস৷''
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক