1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সিয়েরা লিওনে মাতৃমৃত্যুর হার বাড়ছে

১৬ সেপ্টেম্বর ২০১০

এই পৃথিবীর প্রতি মেয়েরই শখ – একদিন তার বিয়ে হবে, ফুটফুটে শিশু আসবে তার কোল জুড়ে৷ সুখে সময় কাটবে৷ কিন্তু সব মেয়েই ভাগ্যবতী, তা জোর দিয়ে বলা যায় না৷ সিয়েরা লিওনের মেয়েরা খুব ভাগ্যবতী নয়৷ সেদেশে মাতৃমৃত্যুর হার অনেক বেশি৷

https://p.dw.com/p/PDEn
সিয়েরা, লিওন, মাতৃমৃত্যু, Mother, Child, Death,
সিয়েরা লিওনে মাতৃমৃত্যুর হার বাড়ছেছবি: DW

সিয়েরা লিওনে বিয়ের পর কোন মেয়ে গর্ভবতী হলে সে খবর কাউকে খুশি করে না৷ কারণ প্রতি আটটি গর্ভবতী মহিলার মধ্যে একজন প্রসবজণিত সমস্যায় মৃত্যুবরণ করে৷ জাতিসংঘের জরিপ অনুযায়ী পৃথিবীর অন্য কোন দেশে এত গর্ভবতী মহিলা মারা যায় না, যেমনটা দেখা যায় সিয়েরা লিওনে৷ জাতিসংঘের মিলেনিয়াম উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অনেকগুলো লক্ষ্যের মধ্যে একটি হলো ২০১৫ সালের মধ্যে সিয়েরা লিওনে মাতৃমৃত্যু বর্তমানে যা আছে তার তিন-চতুর্থাংশ কমানো৷ কিন্তু সিয়েরা লিওনের অনেক মানুষ, বিশেষ করে মহিলারা বিশ্বাস করে – জাতিসংঘের এই লক্ষ্য ২০১৫ সালের মধ্যে অর্জিত হবে না৷

ডোরিস একা নয়

সিয়েরা লিওনের উত্তরে অবস্থিত কাবালা গ্রাম৷ ২১ বছর বয়সী ডোরিস কার্গবো ক্লিনিকে এসেছেন৷ আজ আরো অনেকে এসেছে৷ প্রতি শুক্রবার চিকিৎসক সব গর্ভবতী মহিলাদের নিয়ে বসেন৷ অনেক কিছু আলোচনা করেন তারা৷ ডোরিস কার্গবোর জন্য এ ধরণের দিনগুলো অনেক বেশি ঝামেলার৷ তাঁকে অনেক ভোরে উঠতে হয়৷ ঘরের কাজ শেষ করতে হয়৷ অনেক দূর থেকে পানি আনতে হয়৷ ডোরিসের পাঁচ বছরের একটি মেয়ে আছে৷ সেই মেয়েকে ঘুম থেকে তুলে নাস্তা করাতে হয়৷

ডোরিসের একটি-ই মাত্র সন্তান৷ এর পর আরো দু'বার ডোরিস গর্ভবতী হয়েছিল, কিন্তু বাচ্চাগুলো মারা গেছে৷ ডোরিস ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা সে খুব সাবধানে থাকে৷ কিন্তু তারপরও তার ভয় কাটেনা৷ এবারও হয়তো কোন একটা সমস্যা দেখা দেবে৷ ডোরিস বলল, ‘‘আমি জানি না কেন, ঠিক কোন কারণে আমার বাচ্চাগুলো মারা যাচ্ছে৷ অথচ আমি নিয়মিত হাসপাতালে যেতাম, এখনও যাই৷ বাচ্চা জন্মানোর পরও আমি নিয়মিত যেতাম৷ তারপর সন্তান জন্মানোর ঠিক আগে দেখা দেয় অসংখ্য সমস্যা৷ সেই সমস্যাগুলোর কারণেই আমার বাচ্চা মারা যায়৷''

ডোরিসের মত সিয়েরা লিওনে আরো অনেক মেয়ের কাছেই গর্ভবতী হওয়া অনেকটা লটারি খেলার মত৷ কেউ জিতবে, কেউ হারবে৷ প্রসবকালীন সমস্যায় সিয়েরা লিওনে মেয়েরা মারা যায় সবচেয়ে বেশি৷ ডোরিস এবং তাঁর বান্ধবীরা এসব ঘটনা প্রায়ই দেখেছে৷ মৃত্যুর কারণ হিসেবে বেশ কিছু সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে৷ তার মধ্যে রক্তপাত, সংক্রমণ, উচ্চ রক্তচাপ এবং অবৈধ গর্ভপাত উল্লেখযোগ্য৷ বিভিন্ন সাহায্য সংস্থার মতে আনাড়ি এবং অনভিজ্ঞ চিকিৎসক বা ধাত্রীরাই এর মূল কারণ৷

সবাই হাসপাতালে আসছে না

এক ঘণ্টা উঁচু-নিচু পথ পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত ডোরিস হাসপাতালে পৌঁছেছে৷ তার সঙ্গে অপেক্ষা করছে আরো প্রায় ২০ জন মেয়ে৷ সবাই কয়েক ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছে৷ অনেকেই প্রায় পনেরো কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এসেছে৷ খুব অল্প সংখ্যক মেয়েই হাসপাতালে আসতে পারে৷ কারণ এই দীর্ঘ পথের জন্য বাস বা অন্য যানবাহনের ভাড়া দেওয়ার সামর্থ্য কারো নেই৷ হাসপাতালে দীর্ঘদিন কাজ করছেন এলিজাবেথ মারাহ৷ তিনি জানান প্রসবকালীন সময়ে চেক-আপ না করার কারণেই বেশির ভাগ মেয়ে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে না৷

এলিজাবেথ বললেন, ‘‘গর্ভকালীন সময়ে নিয়মিত চেক-আপের জন্য বেশির ভাগ মেয়েই হাসপাতালে আসে না৷ তারা আসে একেবারে বাচ্চা জন্মানোর ঠিক আগে৷ অনেকেই আসে গর্ভধারণের আট মাস বা নয় মাস পর৷ তখন যদি কোন সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে আমাদের করার খুব বেশি কিছু থাকে না৷ কারণ কোন সমস্যা হবে বা সমস্যার সমাধান করা যাবে কিনা – তাও আমরা নির্দিষ্ট করে বলতে পারি না৷ যেহেতু তারা নিয়মিত হাসপাতালে আসে না, তাই তারা জানতেও পারে না গর্ভকালীন সময়ে খাওয়া-দাওয়া কেমন হওয়া উচিত৷ গর্ভস্থ শিশুর যত্নই বা কীভাবে নিতে হবে – সে সম্পর্কেও কোন ধারণা তাদের থাকে না৷ এদের বেশির ভাগই সন্তান জন্মানোর সময় অতিরিক্ত রক্তপাতের ফলে মারা যায়৷ রক্তহীনতা দেখা দেয়৷ অনেকে আবার হাসপাতালেই আসে না৷ তারা সোজা চলে যায় ধাত্রীর কাছে৷ ধাত্রীরাও অনভিজ্ঞ৷ তারা যখন কোন কিছুই বুঝে উঠতে পারে না, তখন রোগী আর বাচ্চাকে পাঠিয়ে দেয় হাসপাতালে৷ তখন দুজনকেই হারাতে হয়৷''

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন