1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দুরবস্থার জন্য সুশীলরাই দায়ী

জাহিদুল হক২২ ডিসেম্বর ২০১৫

বাংলাদেশে আজ সুশীল সমাজের সদস্যরা নিস্ক্রিয়৷ কোনো কিছুর প্রতিবাদ করার ক্ষমতা তাঁদের নেই৷ সরকারই সেটা করতে দিচ্ছে না৷ তবে এর জন্য দায়ী সুশীলরাও৷

https://p.dw.com/p/1HRir
Symbolbild Lesen
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Endig

একটা সময় ছিল যখন স্বাধীনতার আগে ও পরে সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন সুশীল সমাজের সদস্যরা৷ নব্বইয়ের দশকে স্বৈরশাসন হটিয়ে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লড়াইয়েও রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি সুশীল সমাজের ভূমিকা ছিল৷ বিভিন্ন সময়ে দেয়া তাঁদের বুদ্ধি ও পরামর্শ আন্দোলনকে সফল করেছিল৷

কিন্তু আজ সেই সুশীলদের বেহাল দশা৷ একদিকে যেমন তাঁরা সরকারের সমালোচনা করতে পারছেন না৷ অন্যদিকে কোনো সুশীল কিছু বললে আজকাল অনেকেই তাঁদের কথায় কোনো গুরুত্ব দিচ্ছেন না৷ কারণ জনগণ বুঝে গেছে কিংবা চিনে গেছে, কোন সুশীল কী বলতে পারেন৷ সুশীলদের এই অবস্থার জন্য তাঁরা নিজেরাই দায়ী৷ বিভিন্ন সুবিধা পেতে তাঁরা নিজেরাই দেশের প্রধান দু'টি রাজনৈতিক দল কিংবা তাদের মতবাদের সঙ্গে মিশে গেছেন৷ ফলে মত প্রকাশ করতে গিয়ে তাদের দলীয় মনোভাব প্রকাশ পেয়ে যায়৷ তাছাড়া সরকার সুশীল সমাজের উপর হামলে পড়লে অন্যপক্ষের সুশীলরা তার প্রতিবাদ করেন না৷ উলটো সুশীলরা তাঁদের প্রতিপক্ষের সুশীলদের ঘায়েল করতে সরকারি ব্যবস্থার দ্বারস্থ হন৷

সুশীলদের এই দুই অংশের বাইরেও একটি অংশ আছে, যার সদস্য সংখ্যা খুবই নগণ্য৷ বর্তমান সরকার এই অংশকে বিভিন্ন উপায়ে চাপে রেখেছে৷ তাঁদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে৷ কেউ আবার দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নিজে থেকেই স্বনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়েছেন৷ তাঁরা ভাবছেন, মত প্রকাশ করতে গিয়ে যদি জীবনটাই চলে যায় তাহলে চুপ থাকাই ভালো৷

পরিণতি যা হতে পারে

বিরোধী রাজনৈতিক মতবাদকে সরকার আগেই দমন করেছে৷ এরপর সুশীলদেরও মুখ বন্ধ করে দিয়েছে৷ ফলে এখন আর সমালোচনা করার কেউ নেই৷ সব কিছু মিলিয়ে পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, সরকার এখন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে বেশি কিছু ভাবছে না৷ পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদেরও এমন অবস্থা হয়েছিল৷ তাই তো পূর্ব পাকিস্তানের বিষয়ে তারা ছিল উদাসীন৷ সেসময়কার আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের সমর্থনকে পশ্চিম পাকিস্তানিরা গুরুত্ব দিতে চায়নি৷ বরং দমন-পীড়ন করে পূর্ব পাকিস্তানকে শাসন করতে চেয়েছিল৷ কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি৷ জন্ম হয়েছিল বাংলাদেশের৷ দুঃখের বিষয়, যে আওয়ামী লীগ সেসময় দমনের শিকার হয়েছিল সেই আওয়ামী লীগ এবার দমনকে হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে৷ বিরোধী কোনো রাজনৈতিক দলকে দাঁড়ানোর সুযোগ দিতে চাইছে না তারা৷ স্বাধীনতার কিছু দিন পর বঙ্গবন্ধুও একই কাজ করতে চেয়েছিলেন৷ কিন্তু স্বৈরাচারী সরকারের মতো দেশ পরিচালনার পরিণতি কখনও ভালো হতে পারে না৷ এরকম সরকার বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারে না৷ মানুষ একসময় প্রতিবাদী হয়ে উঠে৷ দমন-পীড়ন দিয়েও তখন কাজ হয় না৷ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের ইতিহাস তা-ই বলে৷

DW Bengali Mohammad Zahidul Haque
জাহিদুল হকছবি: DW/Matthias Müller

এছাড়া দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে৷ ব্লগার হত্যা থেকে শুরু করে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনা তারই প্রমাণ৷ বিদেশিদের উপরও হামলা হচ্ছে৷ ঘটনাগুলোর তদন্ত ও বিচারে মনে রাখার মতো অগ্রগতি হচ্ছে না৷ ফলে অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়ার মতো একটি বিশ্বাস অপরাধীদের মনে গেঁড়ে বসছে৷ এই সুযোগে জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটতে পারে৷ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোও সুযোগ কাজে লাগাতে তৎপর হয়ে উঠতে পারে৷

নিজেদের আসন শক্ত করতে সরকার সামরিক বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে রাখার কৌশল নিয়েছে৷ ব্যবসায়িকভাবে তাদের লাভবান হওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া হচ্ছে৷ কিন্তু মানুষ প্রতিবাদী হয়ে উঠলে একসময় যে সামরিক বাহিনী সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে না, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না৷

লেখকের সঙ্গে কি আপনি একমত? জানান নীচে মন্তব্যের ঘরে...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান