সু চির মুক্তি এবং মিয়ানমারের ভবিষ্যৎ
২১ নভেম্বর ২০১০মুক্তি পাবার পরে সু চি মিয়ানমারে শান্তিপূর্ণ বিপ্লবের কথাও বলেছেন৷ বলেছেন আবারও আটক হবার ভয়ে ভীত নন তিনি৷ গৃহবন্দি থাকার সর্বশেষ মেয়াদ শেষ হবার পরে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা অবশেষে ১৩ নভেম্বর মুক্তি দিলেন নোবেল বিজয়ী অং সান সু চি-কে৷ তারপরেই প্রশ্ন উঠেছে মিয়ানমারের ওপরে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষেত্রে এই মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি কতোটা কাজ করবে সেই ব্যাপারটি নিয়ে৷ মানুষের মনে আরো অনেক প্রশ্ন৷ কিন্তু সেইসব তো পরের কথা৷ এখন সবার আগ্রহ, সু চি কী ভাবছেন, কী করছেন, দেশের রাজনীতি নিয়ে কী তাঁর পরবর্তী পদক্ষেপ, এইসব ব্যাপারে৷
গত ২১ বছরের মধ্যে ১৫ বছরই আটক ছিলেন গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী সু চি৷ মুক্তি পাবার কয়েকদিন আগে থেকেই ছড়িয়ে পড়ে যে সু চি মুক্তি পেতে যাচ্ছেন৷ তাঁকে মুক্তি দেবার ঠিক আগের দিন জান্তা সরকারের লোকজনও নিজেদের নাম পরিচয় গোপন রেখে জানান যে সু চি মুক্তি পেতে পারেন পরের দিনই৷ সেই থেকেই সু চিকে যাঁরা ভালোবাসেন তাঁরা, তাঁর দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির সমর্থক, সর্বোপরি গণতন্ত্রমনা মানুষের ভিড় জমতে থাকে সু চির বাড়ির সামনে৷ সাদা পোশাকে নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজনকেও ঘোরাফেরা করতে দেখা যায় সেখানে৷ সবার চিন্তা ছিল, সত্যিই শেষ হতে যাচ্ছে কি সু চির আটকাবস্থা?
শেষ পর্যন্ত আসে সেই মহেন্দ্রক্ষণটি৷ সু চির মুক্তিতে আনন্দে ফেটে পড়ে আপামর মানুষ৷
বিশ্ব নেতৃবৃন্দ এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই আপোষহীন, অসমসাহসী, গণতন্ত্রের মানসকন্যাকে মুক্ত বাতাসে স্বাগত জানিয়ে বার্তা পাঠান৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাঁর মুক্তিকে ‘দীর্ঘ প্রতিক্ষিত' বলে অভিহিত করেছেন৷ জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন, সু চি এক ‘উদ্দীপনা'৷ জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলও তাঁর মুক্তিকে স্বাগত জানান৷
সু চি-কে মুক্তি দেওয়া হলো ঠিকই৷ কিন্তু তা করা হলো মিয়ানমারে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরে৷ কুড়ি বছরের মধ্যে দেশটিতে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠান হলো ৭ নভেম্বর৷ ঐ নির্বাচনে জয়লাভ করেছে সামরিক বাহিনী সমর্থিত রাজনৈতিক দলটি৷ সু চি মুক্তি পাবার পরপরই হাজার হাজার সমর্থকের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, লক্ষ্য অর্জনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে৷ এর পরে বিবিসি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সু চি বলেন, মিয়ানমারের সমস্যা সমাধানে আলোচনার জন্যে তিনি প্রস্তুত৷ তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্য আর সম্প্রীতি অর্জনের জন্যে সব দলের সঙ্গে কথা বলতেই তিনি প্রস্তুত রয়েছেন৷
মুক্তি পাবার একদিন পরেই তিনি বলেন, টেবিলে বসে মতপার্থক্য দূর করার সময় এসেছে৷ সু চি এক শান্তিপূর্ণ বিপ্লবের ডাক দেন৷ তিনি বলেন,‘‘আমি স্বীকার করছি যে, কখনোই আমি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে নরম হয়ে সহযোগিতা করিনি৷ তবে যদি অহিংস বিপ্লব ঘটে তবে তা হবে এক দারুণ ব্যাপার৷ এবং সেই পথটি ধরেই চলা উচিৎ৷ কারণ একটি পরিবর্তন একটা ভীষণ রকমের পরিবর্তনের অর্থই বিপ্লব৷ সেটা সহিংস হোক বা অহিংসই হোক৷ তবে আমরা অহিংস শান্তিপূর্ণ বিপ্লবই প্রত্যাশা করি৷''
সু চি বলেন, ‘‘আমি মিয়ানমারের জনগণের কথা শুনতে চাই৷ অন্যান্য দেশি বা কী চাচ্ছে আমি তাও শুনতে চাই৷ তারা আমাদের জন্যে কী করতে পারবে তা জানাটাও জরুরি৷ কেননা তখনই আমরা বুঝতে পারবো তারা কী চাচ্ছে এবং বেশিরভাগ মানুষের কাছে তা গ্রহণযোগ্য কিনা৷'' সু চি বলেন,
‘‘তবে আমি জানি না ‘রেভ্যুলেশন' শব্দটির কী অর্থ মানুষ দাঁড় করায়৷ এবং কী অর্থে এই শব্দটি ব্যাবহার করা হয় তাও আমি জানি না৷ আমার কাছে ‘রেভ্যুলেশন' শব্দের অর্থ আমূল পরিবর্তন৷''
গণতন্ত্রপন্থী এই নেত্রী বলেন, নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে৷ ভোট চুরি এবং এই ধরণের অনেক অভিযোগ উঠেছে বলেই শুনেছি৷ তাঁকে পুনরায় গ্রেপ্তার করা হতে পারে কিনা এইধরণের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি ভীত নই৷ সু চি বলেন,‘‘আমি আতঙ্কিত নই৷ আমি জানি তারা অতীতে যা করেছে সেই ধরণের এক সম্ভাবনা সব সমযেই রয়েছে৷ তা তারা আবারো করতে পারে৷ আমার কথা জিজ্ঞেস করলে বলবো, মুক্ত অবস্থায় যা যা করা সম্ভব, তার সবই আমি করবো৷ এবং আমাকে যদি আবারো গ্রেপ্তার করা হয়, তাহলে আটক অবস্থায় যা করা সম্ভব তার সবই আমি করবো৷''
প্রতিবেদন: ফাহমিদা সুলতানা
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক