1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সূর্যমুখী তেল থেকে পেনিসিলিন

২৮ জুলাই ২০১০

অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো হল পেনিসিলিন৷ ১৯২৮ সালে ব্রিটেনের আলেক্সান্ডার ফ্লেমিং আবিষ্কার করেন এই পদার্থটি৷ কিন্তু এটি যে ওষুধ হিসাবেও কাজ করতে পারে তা কেউ ধারণা করতে পারেনি তখন৷

https://p.dw.com/p/OWKA
স্যার আলেক্সান্ডার ফ্লেমিংছবি: AP

তাই এই নতুন আবিষ্কারটি নিয়ে মাথা ঘামানো হয়নি বেশ কয়েক বছর৷

৩০-এর দশকের শেষ দিকে বিজ্ঞানী বরিস চেইন এবং হাওয়ার্ড ওয়াল্টার আগ্রহী হয়ে ওঠেন পেনিসিলিন সম্পর্কে৷ নানা পরীক্ষা নীরিক্ষা করে তাঁরা প্রমাণ করতে সক্ষম হন যে, পেনসিলিন প্রাণীর দেহে ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে পারে৷ যার ফলে অনেক মারণব্যধিও দূর করা সম্ভব৷ চিকিৎসা ক্ষেত্রে এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের জন্য তিন বিজ্ঞানী ফ্লেমিং, চেইন ও হাওয়ার্ড ১৯৪৫ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান৷

পেনিসিলিয়াম নামের এক ধরনের ছত্রাক থেকে প্রস্তুত করা হয় বলে এই ওষুধের নাম দেওয়া হয়েছে পেনিসিলিন৷ পেনিসিলিন দুই ধরনের হয়ে থাকে: জি ও ভি৷ পেনিসিলিন জি ব্যবহার করা হয় ইনজেকশন হিসাবে৷ আর পেনিসিলিন ভি ট্যাবলেট হিসাবে৷ রোগ নিরাময়ে পেনিসিলিনের ধন্বন্তরি ক্ষমতা থাকলেও এর প্রস্তুত প্রণালীটা কিন্তু মোটেও নিরাপদ নয়৷ পেনেসিলিয়াম ছত্রাকের নিঃস্বরণ থেকে বিশুদ্ধ পেনিসিলিনকে আলাদা করার জন্য বিভিন্ন রকম ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ এমনকি কেরোসিনের মত জ্বালানি তেলও ব্যবহার করা হয়৷ যা একেবারেই মেনে নেয়া যায়না৷ বলেন আরবের রসায়নবিদ মনোয়ার হোসেইন৷

Ciprobay Breitspektrum Antibiotikum
ছবি: AP

এক্ষেত্রে বিকল্প পদ্ধতির ব্যাপারে পরীক্ষা নিরীক্ষা করছেন তিনি৷ মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘‘প্রথমে আমি সহজ এক বিকল্প পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা শুরু করি৷ সূর্যমুখী তেলের কথাটা আসে আমার মাথায়৷ কোন এক প্রতিবেদনে পড়েছিলাম, সূর্যমুখী তেলের সাহায্যে সুঘ্রাণ আলাদা করা হয়৷ কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে কেউ এই পরীক্ষা চালায়নি৷ তাই আমিই শুরু করলাম পরীক্ষা নিরীক্ষা৷''

গবেষক মনোয়ার হোসেইন প্রথমে নিউজিল্যান্ডের ওকল্যান্ড ইউনিভার্সিটিতে তাঁর পরীক্ষা চালান৷ পেনিসিলিনের দ্রবণকে সূর্যমুখী তেলের সঙ্গে মেশানোর জন্য জোরে জোরে কয়েকবার ঝাঁকুনি দিয়ে তারপর তা থেকে বিশুদ্ধ পেনিসিলিন পৃথক করার চেষ্টা করেন তিনি৷ কিন্তু আশানুরূপ ফল না পেয়ে আরো কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন এই গবেষক৷ প্রথমে তাঁর প্রয়োজন পড়ে এক ধরনের বিশেষ পাত্রের৷ যেটি অতি সূক্ষ্ম ছিদ্রযুক্ত এক ধরনের কৃত্রিম চামড়া দিয়ে দু ভাগে ভাগ করা৷ এরপর তিনি সেই পাত্রের এক দিকে পেনিসিলিনের দ্রবণ ও অন্যদিকে সূর্যমুখী তেল ঢেল দেন৷ এর ফলে ঝাঁকুনি ছাড়াই তেল ও জল কাছাকাছি এসে যায়৷ এরপর গবেষক ক্ষতিকর নয়, এমন এক ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য তেলে ঢেলে দেন৷ যার তীব্র আকর্ষণীয় ক্ষমতা রয়েছে৷ ফলে পাশের খোপ থেকে ছিদ্র ভেদ করে তেলে এসে পড়ে পেনিসিলিনের অনু৷ এ প্রসঙ্গে মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘‘প্রথমে তেলে কোনো পেনিসিলিন পাওয়া যায়নি৷ কিন্তু রাসায়নিক পদার্থটা দেওয়ার পর অ্যান্টিবায়োটিক আকৃষ্ট হতে থাকে এবং তেলের চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে৷ দ্বিতীয় ধাপে আমরা সোডিয়াম কার্বোনেট তেলে ঢেলে দিই৷ এর ফলে বিশুদ্ধ পেনিসিলিন আলাদা হয়ে যায়৷ উদ্বৃত্ত সূর্যমুখী তেল বার বার ব্যবহার করা যায়৷ আমি তো পাঁচ বার ব্যবহার করেছি৷''

এই পদ্ধতিতে প্রথমে ৩০ শতাংশ পেনিসিলিন পাওয়া যায়৷ কয়েক বার পুনরাবৃত্তি করার পর অ্যান্টিবায়োটিক সম্পূর্ণভাবে পৃথক করা সম্ভব৷ এবং এই তেলও আবার ব্যবহার করা যায়৷ মনোয়ার হোসেইনের এই পদ্ধতির প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে অনেক গবেষণা সংস্থা৷ আরব অ্যামিরাতের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মনোয়ার হোসেইন এ প্রসঙ্গে জানান, ‘‘চীনের মেডিসিন একাডেমি অ্যান্টিবায়োটিকের মিশ্রণটি থেকে নির্দিষ্ট একটি অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ বের করতে চেয়েছিল৷ আমার পদ্ধতি প্রয়োগ করে এতে সাফল্যও পেয়েছি৷ অন্যান্য কোনো পরিচিত পদ্ধতিতে তা সম্ভব হোতনা৷''

কিন্তু শিল্প ও কলকারখানা এ ক্ষেত্রে অনেকটাই নীরব৷ কেননা সূর্যমুখী তেলের পদ্ধতিটা রুচিশীল হলেও কেরোসিন ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থের একমাত্র বিকল্প নয়৷ পরিবেশবান্ধব অন্যান্য পদ্ধতি নিয়েও আলোচনা চলছে বাজারে৷ কোনটা এগিয়ে যাবে তা এখনই বলা যায়না৷

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক