1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সোমালিয়ায় খরাত্রাণ

১ জুন ২০১৭

সোমালিয়ায় খরা দেখা দিয়েছে৷ পর পর চারটি মৌসুমে বৃষ্টি হয়নি, জন্তুজানোয়ার না খেতে পেয়ে মারা যাচ্ছে, মানুষজন একটু পানির খোঁজে মাইলের পর মাইল পথ হাঁটছেন৷

https://p.dw.com/p/2dx2E
Somalia Puntland
সোমালিয়ায় খরায় খেতে না পেয়ে জন্তুজানোয়ার মারা যাচ্ছেছবি: DW/A. Kiti

সোমালিয়ায় এনজিও-র কর্মীদের বিদেশি বলেই মনে করা হয়৷ তবুও এই ত্রাণকর্মীরা সকলকে সাহায্য করার চেষ্টা করেন৷

হর্ন অফ আফ্রিকায় অবস্থিত দেশটি চরম খরার কোপে৷ ত্রাণকর্মীরা পরিস্থিতি যাচাই করার জন্য গ্রামাঞ্চলে যেতে চান৷ কিলোমিটারের পর কিলোমিটার পথ, বেতার সংযোগ ছাড়াই৷

দেওয়াল দিয়ে ঘেরা শিবির ছেড়ে পান্টল্যান্ড প্রদেশে সফরে বেরোতে সাথে সৈন্য নিতে হয়৷ সোমালিয়া একটি ‘ফেল্ড স্টেট’, ব্যর্থ রাষ্ট্র; দেশের বিভিন্ন অংশের মধ্যে যুদ্ধ চলেছে৷ কাজেই নিরাপত্তার জন্য সামনে-পিছনে দু’টি করে আর্মি জিপ৷ তাদের মাঝখানে ত্রাণকর্মীরা৷

খরার কবলে বিপর্যস্ত সোমালিয়া

এমন একটি এলাকা দিয়ে কনভয়টি যাচ্ছে, যা সাধারণত সবুজ হয়ে থাকার কথা৷ এখন আছে শুধু শুকনো, ধুলো ওঠা মাঠ-প্রান্তর৷ সোমালিয়ায় চরম খরা চলেছে, চার-চারটে বর্ষায় কোনো বৃষ্টি পড়েনি৷ পথের ধারে জীবজন্তু মরে পড়ে রয়েছে৷

খরা ও ক্ষুধা

যাযাবর সম্প্রদায়ের একজন শোনাচ্ছেন, জীবজন্তু মারা গেলে মানুষের কেমন লাগে৷ মরা গরুটির নাম ছিল নাকি নুরা৷ সোমালিয়ায় এমনকি ছাগলদেরও নাম থাকে৷ মরার আগে তাদের মেরে ফেলে মাংস খাবার উপায় ছিল না, কেননা ক্ষুধার্ত জীবগুলি রোগে ভোগে৷

পশুপালক আবশিদ হের্শি নুর বললেন, ‘‘অবশ্যই আমি ক্ষুধার্ত – আর শুধু আমিই নই, আমার পরিবার, আমার ছেলেমেয়ে, সবাই ক্ষুধার্ত৷ এখন এখানকার সকলেরই এই অবস্থা – কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমি যখন আমার ছেলেমেয়েদের ক্ষুধার্ত দেখি, তখন যেন আমার নিজের খিদে বেড়ে যায়৷’’

হের্শি ১৫টি ছাগল বাঁচাতে পেরেছেন৷ তিনি তাদের গাড়িতে করে ৩০০ কিলোমিটার উত্তরে নিয়ে গেছেন, গাড়িভাড়ার টাকা ধার করে৷ ও অঞ্চলে এখনও ঘাসপাতা আছে৷ কাজেই খরা শেষ হলে হের্শিকে আবার শূন্য থেকে শুরু করতে হবে না৷

পানির রেশন

গাড়ির বহর যেখান দিয়েই যাক, দিগন্তে শুধু ভাঙাচোরা কুটির – খোলা মাঠের মাঝখানে৷ ইতিমধ্যে সোমালিয়ায় শত শত এ ধরনের শিবির আছে – প্রতিদিন আরো বেশি যাযাবর পরিবার এসে পৌঁছান৷ তারা চারণভূমি খুঁজে পাবার আশা পরিত্যাগ করেছেন, তাদের জন্তুজানোয়ার সব না খেতে পেয়ে মরেছে৷ এখানে অন্তত পানি আছে – ত্রাণ সংগঠনগুলি সপ্তাহে দু’বার করে পানি দিয়ে যায়৷

কড়া রেশন করে পানি দেওয়া হয়৷ পানি বণ্টন চলাকালীন কে একজন জোর করে লাইনে ঢুকে পড়ার ফলে ধস্তাধস্তি শুরু হয়েছে৷ এক ক্যানিস্টার পানিতে তিন দিন কাজ চালাতে হবে – তা সে পরিবারে যতজন মানুষই থাক না কেন৷

এক কিলোমিটার দূরের গ্রামেও প্রায় আর কিছুই নেই: কুয়োতে পানি আছে বটে, কিন্তু অতি নোংরা৷ শিবির থেকে উদ্বাস্তুরা প্রায়ই এখানে আসেন৷ কপাল ভালো থাকলে উদ্বাস্তুরা মাসে ১০০ ডলার পান: মোবাইল ফোনে ট্রান্সফার করা ডিজিটাল টাকা৷ গ্রামে সেই টাকা দিয়ে চাল আর তেল কেনা যায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় বস্তু৷ অন্তত এ পর্যন্ত৷

ভ্রাম্যমান ডাক্তার

উদ্বাস্তু শিবিরে ফেরার পর দেখা গেল ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা ভ্যানটি এখানে এসেছে৷ তাঁবুর নীচে ডাক্তার বসেছেন – সে খবর দূরদূরান্তে পৌঁছে গেছে৷ অনেকে এখানে এসেছেন রুগ্ন, আধমরা বাচ্চাদের কোলে নিয়ে৷ সবাই ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করছেন৷ শুধু চিকিৎসা নয়, কচিকাঁচারা কিছু খেতে পাবে, সে আশাও আছে৷

ভ্রাম্যমান চিকিৎসা দলের ডাক্তার বাশির সুইয়ালে মুসে বললেন, ‘‘অধিকাংশ বাচ্চার বুক ভর্তি সর্দি, পেটে কৃমি৷ প্রায় সকলেই অপুষ্টিতে ভুগছে৷ খুব কম বাচ্চাই পরিষ্কার পানি পায় – আমরা খেয়াল না রাখলে যে কোনো সময় কলেরা শুরু হতে পারে৷’’

ত্রাণকর্মীরা বেশিক্ষণের জন্য থাকতে পারেন না৷ যেটুকু পারেন করেন, যেটুকু পারেন, দেখেন৷ তারপর আবার দিগন্ত পর্যন্ত ধুলো আর বালি৷

২০০ কিলোমিটার উত্তরে ধুবো গ্রামটি কিন্তু একটি মরুদ্যানের মতো, যদিও খুব কম মানুষই সেই পানির উৎস পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেন৷ সাধারণত এখানে আরো দেড়-দু'হাত বেশি জল থাকে৷ এই পর্যন্ত যারা পৌঁছেছেন, তারা প্রথমে তাদের জন্তুজানোয়ারদের জল খেতে দেন৷ পারলে সকলেই এখানে থেকে যেতেন, কিন্তু তা হবার উপায় নেই৷

ধুবোতেও স্বল্পক্ষণের জন্য থামা৷ ত্রাণকর্মীর গাড়ির বহরকে সন্ধ্যে নামার আগেই গারোভেতে তাদের ক্যাম্পে ফিরে আসতে হবে – গারোভে হলো সোমালিয়ার উত্তরে পান্টল্যান্ড প্রদেশের রাজধানী৷

হলগার ট্রেসাক/এসি