1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

স্ট্যার্ন ম্যাগাজিন পাল্টে দেয় গলমানের জীবন

২৭ নভেম্বর ২০১০

৫০ বছর আগে সেই প্রতিবেদনই পাল্টে দিয়েছিল হাজার হাজার অবহেলিত ভারতীয় শিশুর জীবন৷ বঞ্চিত শিশুদের সাহায্যে এগিয়ে গিয়েছিলেন রোজি গলমান৷ মুঠো মুঠো ভালবাসা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন৷ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সাহায্য সংস্থা ‘আন্ধেরী হিল্ফে’৷

https://p.dw.com/p/QJnn
Indian, children, school, Jammu, India, আন্ধেরী, শিশু, জীবন, নতুন আশা, রোজি গলমান
আন্ধেরীর শিশুদের জীবনে নতুন আশা জাগিয়েছিলেন রোজি গলমান (ফাইল ছবি)ছবি: AP

রোজি গলমানের বয়স এখন ৮৩ বছর৷ এক সময় তিনি শিক্ষকতা করেছেন৷ ৫০ বছর আগে স্কুল চলাকালে একটি ছাত্রী স্ট্যার্ন ম্যাগাজিনের একটি প্রতিবেদন রোজি গলমানকে দেখায়৷ প্রতিবেদনে ভারতের মুম্বই শহরের কাছে আন্ধেরীতে অবহেলিত শিশুদের করুণ এক কাহিনী তুলে ধরা হয়েছিল৷ লেখা হয়ছিল বাসি, পচা খাবার খেয়ে শিশুরা দিন কাটায় সেখানে৷ এই রিপোর্ট পড়ে কিছু একটা করার কথা ভাবেন রোজি গলমান৷

তাঁর নিজের কথায়, ‘‘ঠিক ৫১ বছর আগে আমার এক ছাত্রী আমাকে স্ট্যার্ন ম্যাগাজিনের একটি প্রতিবেদন দেখায়৷ সেই প্রতিবেদনে ভারতের একটি এতিমখানায় প্রায় চারশো শিশুর দুরবস্থার কথা তুলে ধরা হয়েছিল৷ মুম্বই-এর কাছে আন্ধেরী নামক জায়গায় ছিল সেই এতিমখানা৷ অন্যান্য সামাজিক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত থাকায় এসব শিশুর প্রতি নজর দিতে পারিনি৷ আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছিল এক বছর৷ আজ থেকে ঠিক ৫০ বছর আগে সেই এতিমখানার সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করি৷ সেই এতিমখানার নাম ছিল সেন্ট পেট্রুস হোম৷ আমরা তখন বিভিন্ন ধরণের উপহার আর সাহায্য দিয়ে চারশোটি বাক্স পাঠাই, চারশো শিশুর জন্য৷ আমাকে সাহায্য করেছিল আমার স্কুলের চারশো ছাত্র-ছাত্রী৷ সেই উপহারগুলো ছিল আন্ধেরীর সেসব শিশুর জীবনে প্রথম উপহার৷''

তবে শুধু ভারতে নয় সাহায্যের হাত তিনি বাড়িয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের শিশুদের প্রতিও৷ রোজী গোলমানের ভাষায় সাহায্যের মূল লক্ষ্য হল প্রতিটি মানুষকে স্বনির্ভর করা৷ যারা একদিন সাহায্য পেয়ে বড় হয়েছে, স্বনির্ভর হয়েছে তারাও যেন অন্যদের সাহায্যে এগিয়ে আসে, অন্যদের নিজ পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করে৷ যার যার ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার দায়িত্ব তার নিজের– এই বোধটি জাগিয়ে তোলা৷

ভারতে ও বাংলাদেশ ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার আরো বেশ কিছু দেশে কাজ করছে আন্ধেরী হিল্ফে৷ বেশ কিছু দেশে রোজি গলমান নিজের চোখে দেখেছেন মানুষের দুর্দশা৷ সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে আমরা বেশ কিছু প্রকল্পে কাজ করছি৷ এছাড়া নেপাল, ভুটান এবং মিয়ানমারেও আমরা কাজ করেছি৷ তবে আমাদের সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো ভারতে এবং বাংলাদেশে৷ বাংলাদেশে আমরা কাজ শুরু করেছি ১৯৭৪ সাল থেকে৷ তখন আমি বাংলাদেশে গিয়েছি৷ দেশটি তার কয়েক বছর আগে স্বাধীন হয়েছে৷ আমি অন্ধ ভিক্ষুকদের দেখেছি পথে পথে ভিক্ষে করতে৷ একটু খাবারের জন্য, এক টুকরো রুটির জন্য তারা হাত পেতে দাঁড়িয়ে আছে৷ আমার পক্ষে এসব সহ্য করা কঠিন ছিল৷ এত অসহায় মানুষ অথচ কেউ কেন সাহায্য করছে না? – এই প্রশ্ন আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়৷ তখনই বাংলাদেশে অন্ধদের নিয়ে আমরা কাজ করি৷ তাদের সাহায্যে এগিয়ে যাই৷ অন্ধত্বের হাত থেকে এসব মানুষকে মুক্ত করার চেষ্টা করি৷ আমরা এ পর্যন্ত প্রায় ১৩ লক্ষ অপারেশনে সাহায্য করেছি৷ সবই ছিল চোখের অপারেশন৷ অন্ধত্বের হাত থেকে রক্ষা করা গেছে অসংখ্য মানুষকে৷''

৫০ বছর আগে জাহাজে করে সমুদ্র পথে রোজি গলমান গিয়েছিলেন ভারতে৷ অসহায়, দরিদ্র মানুষের দুর্দশা নিজের চোখে দেখতে৷ তিনি দেখেছেন অবিশ্বাস্য সব দৃশ্য – আর আত্মবিশ্বাস যুগিয়েছেন এসব মানুষের মধ্যে৷ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন৷ আজো এসব শিশুকে, অসহায় মানুষকে সাহায্যে করে যাচ্ছে আন্ধেরী হিল্ফে৷ আন্ধেরী হিল্ফে সংস্থা অর্ধ শতাব্দী ধরে নিরলসভাবে সাহায্য করে যাচ্ছে দুঃস্থ মানুষদের৷ প্রায় তিন লক্ষ মহিলাকে ক্ষুদ্র ঋণ দিয়েও সাহায্য করেছে আন্ধেরী হিল্ফে৷ এছাড়া আরো প্রায় দুই লক্ষ শিশুকে রাস্তা থেকে তুলে বিভিন্ন পরিবারের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে, শিশুশ্রমের হাত থেকেও মুক্ত করা হয়েছে হাজার হাজার শিশুকে৷ রোজি গলমানকে আমাদের বিনীত শ্রদ্ধা৷

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারূক