1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হাই তোলার রহস্য উদ্ঘাটনে বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টা

১২ মে ২০১০

হাই তুলছেন নাকি ? আপনি কি ক্লান্ত ? ঘুম পাচ্ছে নাকি ? যাহোক, হাই তোলা নিয়ে বিব্রত হওয়ার কিছু নেই৷ কারণ হাই ওঠার রহস্য এখনও পুরোপুরি উন্মোচিত হয়নি৷ অবশ্য বিজ্ঞানীরা পিছু ছাড়েননি৷ হাই ওঠার রহস্য খুঁজে ফিরছেন৷

https://p.dw.com/p/NKxC
হাই তুলছেন জার্মানির এক জনৈক ফুটবল ফ্যানছবি: AP

এমনকি হাই ওঠার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে৷ অনুষ্ঠিত হবে আগামী মাসের ২৪ এবং ২৫ তারিখ৷ এদিকে হাই ওঠার রহস্য পুরোপুরি উদ্ঘাটিত না হলেও বিজ্ঞানীরা বলছেন, আমরা যখন ক্লান্ত, বিরক্ত কিংবা ক্ষুধার্ত থাকি, তখন হাই তুলি৷ আর বিমান বাহিনীর সদস্যদের দেখা গেছে প্যারাশুট নিয়ে লাফ দেওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তেই হাই তুলতে৷ এখানেই শেষ নয়, গবেষণায় খুঁজে পাওয়া গেছে হাই তোলা এবং যৌন উদ্দীপনার মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক৷

শুধু মানুষই হাই তোলে না, হাই তোলে পাখি, মাছ তথা শীতল কিংবা উষ্ণ রক্ত বিশিষ্ট প্রায় সব মেরুদণ্ডী প্রাণীই৷ অবশ্য ব্যতিক্রম হচ্ছে জিরাফ এবং তিমি৷ বাধ্য হয়ে হা করে হাই তুলতে এদের এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি৷ তবুও হাই তোলার কারণ এবং কাজ নিয়ে এখনও যেন সবকিছু ধোঁয়াটে৷ এই ধোঁয়ার রেশ কাটাতেই ডা. অলিভিয়েঁ ভালুজিন্সকির প্রচেষ্টায় হাই তোলার বিষয়ে প্রথম কোন বই প্রকাশিত হয়েছে ফ্রান্সে৷

China Hongkong Richter
বিজ্ঞানীরা বলছেন, আমরা যখন ক্লান্ত, বিরক্ত কিংবা ক্ষুধার্ত থাকি, তখন হাই তুলিছবি: AP

‘শারীরবৃত্ত এবং রোগের ক্ষেত্রে হাই তোলার রহস্য' নামের এই বই-এ স্থান পেয়েছে এই বিব্রতকর কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত আচরণের বিষয়ে সাম্প্রতিক সব গবেষণার ফলাফল৷ আগামী মাসেই প্যারিসে অনুষ্ঠিতব্য হাই তোলা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে উপস্থাপিত হবে এই বইয়ে তুলে ধরা বিভিন্ন ধারণা এবং প্রেক্ষিত৷ তুলে ধরা হবে মানুষের মস্তিষ্কের প্রসন্নতার জন্য হাই ওঠার ভূমিকা থেকে শুরু করে হাই ওঠার মধ্যে যৌনতার অনুভূতি পর্যন্ত নানা দিক৷

ভালুজিন্সকি বলেন, ‘‘বেশ কিছু সূত্র থাকলেও হাই ওঠার কারণ নিয়ে এখন পর্যন্ত প্রমাণিত কোন ধারণা নেই৷'' এখন পর্যন্ত যা কিছু জানা গেছে তা হলো, একজন মানুষ সারা জীবনে প্রায় আড়াই লক্ষ বার হাই তোলে৷ আর মায়ের পেটের শিশুটি হাই তোলা শুরু করে যখন তার বয়স কেবলমাত্র ১২ থেকে ১৪ সপ্তাহ হয়৷

বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. হাসিবুল ইসলাম সবুজ বলেন, হাই তোলার বিষয়টি অনেকটা শরীরের জন্য আরামদায়ক একটি প্রক্রিয়া৷ আমরা যখন অবসাদগ্রস্ত হই কিংবা ঘুমের প্রয়োজন বোধ করি তখন ফুসফুসে একটু বেশি বাতাস নিয়ে সেটা আস্তে আস্তে বের করে দেই, সেটিকেই হাই তোলা বা আড়মোড়া বলা হয়৷

Chinesische Soldaten während der Eröffnungsfeier "Qiangtang Qiaqing", Pferderennen in Nagqu
হাই ওঠার রহস্য আরো কিছুটা উদ্ঘাটিত হয়তো হবে প্যারিস সম্মেলনেছবি: AP

মানুষের হাই তোলা নিয়ে একটি ভুল ধারণা ছিল এ রকম - রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়ানো এবং অতিরিক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড বের করে দেওয়ার জন্য হাই তোলা হয়৷ কিন্তু গত শতাব্দীর আশির দশকেই এই ধারণাটি ভুল বলে প্রতীয়মান হয়েছে৷ ভালুজিন্সকি বলছেন যে, সপ্তদশ শতকে এমন ধারণার সৃষ্টি৷ পরে মার্কিন বিজ্ঞানী রবার্ট প্রোভিন প্রমাণ করেন যে, হাই ওঠার আগে পরে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ একই থাকে৷

তবে হাই তোলা সম্পর্কে অপর একটি সূত্র বেশ গ্রহণযোগ্য বিজ্ঞানীদের কাছে৷ তা হলো মস্তিষ্কের কাজ নিয়ন্ত্রণে, স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত রাখতে এবং কর্মদক্ষতা বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে হাই ওঠার ঘটনা৷ তবুও বিজ্ঞানীরা এখনও জবাব পাননি - জ্বর হলে কেন বেশি মাত্রায় হাই ওঠে না কিংবা সাপের দেহে তাপ নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া না থাকলেও তারা কেন হাই তোলে৷ ডা. হাসিব বললেন, ‘‘বিজ্ঞান হাই তোলার বিষয়ে এখনও খুব বেশি কিছু বলতে না পারলেও, ইসলাম ধর্মেও হাই ওঠাকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা এবং হাই তোলার সময়ে হাত মুখে দেওয়ার জন্য বলা হচ্ছে৷ এছাড়া বিভিন্ন অসুখের লক্ষণ হিসেবে আবার কখনও কখনও কিছু ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হিসেবেও হাই তোলার হার কমবেশি হয়৷'' অস্বাভাবিক মাত্রায় কম কিংবা বেশি হাই উঠলে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি৷

এদিকে, ভালুজিন্সকি তাঁর বই-এ উল্লেখ করেছেন যে, এক ডাচ বিজ্ঞানী হাই ওঠার সাথে যৌন উদ্দীপনার সম্পর্ক লক্ষ্য করেছেন৷ এটিকে যৌন আবেদনের ইঙ্গিত হিসেবেও উল্লেখ করেছেন তিনি৷ আর এর প্রমাণ আরো প্রকটভাবে দেখা গেছে প্রাণীদের ক্ষেত্রে৷ যেমন যৌন কাজে মিলিত হওয়ার আগে এবং পরে হাই তুলতে দেখা গেছে পুরুষ বানরকে৷ আবার বানরটির খাসিয়া করে বানরটির প্রজনন ক্ষমতা রহিত করা হলে আর হাই তুলতে দেখা যায়নি, বলে জানান ভালুজিন্সকি৷

হাই ওঠার রহস্য আরো কিছুটা উদ্ঘাটিত হয়তো হবে প্যারিস সম্মেলনে৷ আপাতত সেই প্রতীক্ষায় থাকতে হবে আমাদের৷

প্রতিবেদন : হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা : আব্দুল্লাহ আল-ফারূক