1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হৃদযন্ত্রের নষ্ট টিস্যু নিজেই সারিয়ে তুলে জেব্রাফিশ

২ এপ্রিল ২০১০

জেব্রাফিশের হৃদযন্ত্রের কোটর বা নিলয়ের শতকরা ২০ ভাগও যদি ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তবুও অসুস্থ প্রাণীটি এমন ভাবে রক্ত জমাট বাঁধাতে পারে যে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায়৷

https://p.dw.com/p/MmEu
জেব্রাফিশছবি: AP

জানেন কি, নিজের হৃদযন্ত্রের নষ্ট টিস্যু নিজেই সারিয়ে তুলতে পারে কোন প্রাণী? বিশ্বাস করা কঠিন হলেও, ঘটনা কিন্তু সত্যি৷ জেব্রাফিশের নামতো শুনেছেন, এই জেব্রাফিশই নিজের হৃদযন্ত্রের নষ্ট টিস্যু নিজেই সারিয়ে তোলে৷ এমন কি ক্ষতিগ্রস্ত হৃদযন্ত্র নিয়েও কম্পন অব্যাহত রাখতে পারে তারা৷

জেব্রাফিশের হৃদযন্ত্রের কোটর বা নিলয়ের শতকরা ২০ ভাগও যদি ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তবুও অসুস্থ প্রাণীটি এমন ভাবে রক্ত জমাট বাঁধাতে পারে যে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায়৷ এবং নষ্ট হয়ে যাওয়া টিস্যুগুলো ধীরে ধীরে পুনর্গঠিত হয়৷ একমাস অথবা ততোধিক সময়ের মধ্যেই ক্ষতিগ্রস্থ টিস্যুগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে৷ তাহলে দারুন এই মেরামত কর্মকান্ডটি হৃদযন্ত্রের কোন কোষগুলো চালাচ্ছে বলে মনে হয়? মেরামতের নিপুণ এই প্রক্রিয়াটি চালাচ্ছে হৃদযন্ত্রের পরিণত কোষগুলো৷

নতুন চালিত দুটি সমীক্ষা থেকে প্রাণীটির হৃদযন্ত্রের নষ্ট টিস্যু সারিয়ে তোলার এই প্রক্রিয়াটির কথা জানা গেছে৷ এই জেব্রাফিশ ঠিক কিভাবে তাদের এই নিজস্ব মেরামত প্রক্রিয়াটি চালায় তা ভাল করে জানা গেলে, যে সব মানুষ এই ধরণের অসুস্থতায় ভুগছেন, এই প্রক্রিয়ায় তাদেরকেও সুস্থ করে তোলা যায় কিনা, সে ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা কাজ করতে পারেন৷

জেব্রাফিশ, গিরগিটি জাতীয় উভচর প্রাণী স্যালামাণ্ডার জাতের প্রাণীরা দেহের হারানো অংশ আবার আপনা থেকেই তৈরি করে নিতে পারে৷ জার্মানির পূর্বাঞ্চলের ড্রেসডেন শহরে অবস্থিত প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর রিজেনারেটিভ থেরাপিস এ নিয়ে কাজ করছে৷ এই গবেষণাকেন্দ্রের জীববিজ্ঞানী এলি তানাকা বলেছেন, ‘‘যে সব বিজ্ঞানী এই ধরণের প্রাণী নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে আসছেন, দীর্ঘদিন ধরেই একটি প্রশ্নের সম্মুখীন তাঁরা৷ এবং তা হল তারা কি দেহের নষ্ট অংশ মেরামতির কাজ করানোর জন্য স্টেম কোষগুলোকে সচল করে এবং কাজে লাগায়৷ নাকি তাদের পরিণত কোষগুলোকে তারা এমনভাবে উদ্দীপিত করে যে ঐ কোষ আবার বিভক্ত হতে শুরু করে৷'' বিজ্ঞানী এলি তানাকা আরও বলেন,

''নতুন সব গবেষণাপত্রে পরিষ্কারভাবে দেখানো হয়েছে যে জেব্রাফিশের হৃদযন্ত্রের ক্ষেত্রে পরিণত কোষগুলোই পুনর্গঠনের বেশিরভাগ কাজটি করছে''৷

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনা রাজ্যের ডারহ্যামে অবস্থিত ডিউক ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী কেনেথ পস বলেছেন, তিনি এবং তাঁর সহকর্মীরা মনে করেন, হৃদযন্ত্রের পেশীর পূর্ণতাপ্রাপ্ত কোষগুলোই জেব্রাফিশের হৃদযন্ত্রের মেরামত প্রক্রিয়ার একটি বড় উৎস৷ বিজ্ঞানীরা তাঁদের গবেষণায় এমনভাবে জেব্রাফিশ ব্যবহার করেছেন যাতে ‘গাটা ফোর' নামে অভিহিত একটি জিনের প্রকাশ ঘটে তাদের দেহে এবং তখন কোষগুলো সবুজ রং ধারণ করে৷

গবেষকরা জেব্রাফিশের হৃদযন্ত্রের একটি অংশ পৃথক করে দেখেছেন, ক্ষতিগ্রস্থ জায়গার কাছাকাছি পরিণত কোষগুলো গাটা ফোর-এ পরিবর্তিত হয়৷ এই সময়ই কোষগুলো আলাদা হতে শুরু করে এবং হৃদযন্ত্রের নতুন টিস্যু তৈরি হয়৷ দু'সপ্তাহের মধ্যেই হৃদযন্ত্রের নতুন টিস্যুগুলো হৃদযন্ত্রের সুস্থ টিস্যুগুলোর মতোই বৈদ্যুতিক সঙ্কেত পেতে শুরু করে৷ বিজ্ঞানীদের দুটি দলই বলছে, তাঁদের পরবর্তী পদক্ষেপ হবে, পুনর্গঠন প্রক্রিয়াটিকে সচল করে তোলা সঙ্কেতগুলোকে সনাক্ত করা৷

প্রতিবেদক:ফাহমিদা সুলতানা

সম্পাদনা:আব্দুল্লাহ আল-ফারুক