1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হেলমুট কোলকে শ্রদ্ধা জানালেন বিশ্ব নেতারা

১ জুলাই ২০১৭

হেলমুট কোল একটি ‘ইউরোপিয়ান জার্মানি’ চেয়েছিলেন, একটি ‘জার্মান ইউরোপ’ নয়৷ শনিবার ইউরোপীয় সংসদে সদ্য প্রয়াত জার্মানির সাবেক চ্যান্সেলর কোলের সম্মানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এই মন্তব্য করেন৷

https://p.dw.com/p/2fliA
ছবি: Getty Images/S. Gallup

জার্মানির বর্তমান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল তাঁর বক্তব্য শেষে নীল রংয়ের ইইউ পতাকা দিয়ে কোলের মরদেহ বহন করা কফিন ঢেকে দেয়ার আগে মাথা নুইয়ে সাবেক চ্যান্সেলরের প্রতি শ্রদ্ধা জানান৷ নিজের বক্তব্যে ম্যার্কেল হেলমুট কোলকে একজন মহান ইউরোপীয় নাগরিক ও বৈশ্বিক রাজনীতিবিদ হিসাবে আখ্যায়িত করেন৷ ‘‘হেলমুট কোল ছাড়া ১৯৯০ সালের আগ পর্যন্ত দেয়ালের ওপারে বাস করা লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন অন্যরকম হতো,’’ বলেন ম্যার্কেল৷ ‘‘আমার প্রিয় চ্যান্সেলর হেলমুট কোল, আমার আজ এই পর্যায়ে আসার পেছনে আপনার অনেক বড় অবদান আছে,’’ কাঁপা কণ্ঠে বলেন তিনি৷ জার্মান চ্যান্সেলর বলেন, ‘‘আমাকে সুযোগ দেয়ায় আপনাকে ধন্যবাদ৷ অন্যান্যদেরও সুযোগ দেয়ায় আপনাকে ধন্যবাদ৷ একজন জার্মান এবং একজন ইউরোপীয় হিসাবে আমরা যে সুযোগ পেয়েছি সেজন্যও আপনাকে ধন্যবাদ৷’’

সাবেক পূর্ব জার্মানিতে বেড়ে ওঠা ম্যার্কেলকে বার্লিন প্রাচীর পতনের পর নিজের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন তৎকালীন চ্যান্সেলর হেলমুট কোল৷ ম্যার্কেল স্বীকার করেন, তিনি সহ অন্য অনেকের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কোলের সমস্যা তৈরি হয়েছিল৷ ২০০০ সালে দলের তহবিল সংক্রান্ত কেলেংকারির সময় কোলের প্রতি সমর্থন দেয়া থেকে বিরত থেকেছিলেন ম্যার্কেল৷ তবে এই ঘটনাটি ইতিহাসে একটি ছোট পাদটীকা হয়ে থাকবে বলে মনে করেন ম্যার্কেল৷ কারণ বার্লিন প্রাচীর পতনের আগে ও পরে, অর্থাৎ ১৯৮৯ ও ১৯৯০ সালের ঘটনা বেশ বড় ছিল৷ ‘‘ঐ ঘটনাটি হেলমুট কোলের ঐতিহাসিক ও অনন্য অর্জন হিসেবে বিবেচিত হবে৷ অন্য নেতাদের সঙ্গে মিলে তিনি জার্মানির পুনরেকত্রীকরণকে ইউরোপের একত্রীকরণের সঙ্গে মেলাতে পেরেছিলেন৷ ওটা ছিল একটা শান্তির কাজ, একটা স্বাধীনতার কাজ, একটা ঐক্যের কাজ৷’’

কোল, দ্য জায়ান্ট

স্ট্রাসবুর্গের ইউরোপীয় সংসদে হেলমুট কোলের সম্মানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সবার পরে বক্তব্য রাখেন ম্যার্কেল৷ এই অনুষ্ঠানে ম্যার্কেলের উপস্থিতির বিরোধিতা করেছিলেন কোলের দ্বিতীয় স্ত্রী মাইকে কোল-রিশটার৷ তবে ম্যার্কেল তাঁর বক্তব্য শেষে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত প্রায় আটশ ব্যক্তির সামনে রিশটারের কাছে গিয়ে তাঁর প্রতি সমবেদনা জানান৷ বক্তব্য দেয়ার সময় ম্যার্কেল হেলমুট কোলের প্রথম স্ত্রী হানেলোরের অবদানের কথাও উল্লেখ করেন৷ ২০০১ সালে তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন৷ অনুষ্ঠানে রিশটার চোখে কালো সানগ্লাস পরে উপস্থিত হয়েছিলেন৷ মাঝেমধ্যে তাঁকে চোখ মুছতে দেখা গেছে৷

ম্যার্কেলের আগে বক্তব্য রাখেন ফ্রান্সের বর্তমান প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ৷ কোলের অনুপ্রেরণায় উৎসাহিত হয়ে তিনি জার্মানি ও ফ্রান্সের মধ্যে বন্ধুত্বকে আরও মজবুত করার অঙ্গীকার করেন৷ তিনি ইউরোপকে আরও সুদৃঢ় অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছার কথা জানান৷ ‘‘ইউরোপীয় মনোভাব থেকে যেন আমরা কখনও সরে না যাই,’’ হেলমুট কোলের এই বার্তা স্মরণ করিয়ে দেন মাক্রোঁ৷

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জ্যঁ-ক্লোদ ইয়ুংকারও তাঁর বন্ধু হেলমুট কোলকে বিদায় জানিয়ে বক্তব্য রাখেন৷ তিনি বলেন, কোল হচ্ছেন একমাত্র নেতা যিনি একবার ইইউ শীর্ষ সম্মেলনের সময় আবেগে কয়েক মিনিট কেঁদেছিলেন৷ সময়টা ছিল ১৯৯৭ সাল৷ সেই সময় মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল৷ কোলকে তিনি একজন জার্মান ও ইউরোপিয়ান প্রেমিক হিসাবে আখ্যায়িত করেন৷ দুই জার্মানিকে একত্র করার সুযোগ কোল ঠিকমত কাজে লাগিয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন ইয়ুংকার৷ কোল ছাড়া আর কারও পক্ষে সেটি করা সম্ভব ছিল না, বলেন তিনি৷ কয়েকটি ভাষায় কোলকে ধন্যবাদ জানান ইয়ুংকার৷

যেন ছোটখাটো একটি ইইউ সম্মেলন

কোলের সম্মানে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইইউর ১৪ জন বর্তমান সরকার প্রধান৷ ছিলেন জার্মান প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ এবং ইউরোপীয় ও জার্মান সংসদের সদস্যরা৷ আরও বক্তব্য রাখেন স্পেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফেলিপে গনজালেস ও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন৷

ক্লিন্টনের বক্তব্যের খানিকটা ছিল রসবোধপূর্ণ আর কিছুটা ছিল ভাবুক প্রকৃতির৷ তিনি বলেন, জার্মানি সফররত রাষ্ট্রীয় অতিথিদের হেলমুট কোল ‘সাওমাগেন’ দিয়ে আপ্যায়ন করতেন৷ হেলমুট কোল জার্মানির যে অঞ্চলে জন্মেছেন সেই পালাটিনের একটি স্থানীয় খাবার হচ্ছে সাওমাগেন৷ জার্মানির মধ্যে পালাটিনে অঞ্চলের বাইরে অন্য কোনো অঞ্চলে এই খাবারটি বেশি প্রচলিত নয়৷ ক্লিন্টন বলেন, ‘‘আমি তাঁকে পছন্দ করতাম৷’’ ‘‘হিলারি বলত, আমি তাঁকে পছন্দ করতাম কারণ তিনি নাকি একমাত্র মানুষ ছিলেন যাঁর আমার চেয়ে খাবার খাওয়ার প্রতি বেশি আগ্রহ ছিল,’’ বলেন ক্লিন্টন৷ তিনি কোলের সম্পর্ক গড়ে তোলার যে ক্ষমতা তার প্রশংসা করেন৷ জাতীয় স্বার্থের চেয়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার উপরই কোল বেশি গুরুত্ব দিতেন, উল্লেখ করে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ক্লিন্টন বলেন, ‘‘আমাদের চেয়েও বড় কিছুর সঙ্গে জড়িত হওয়ার সুযোগ আমাদের দিয়েছিলেন হেলমুট কোল৷’’

রাশিয়ার প্রতিনিধি হিসেবে ইউরোপীয় সংসদে আয়োজিত ঐ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ৷ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতা মিখাইল গর্বাচেভ অসুস্থতার কারণে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি৷ জার্মানির একত্রীকরণের ব্যাপারে গর্ভাচেভের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন হেলমুট কোল৷ বিনিময়ে জার্মানি রাশিয়াকে অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করেছিল৷ কোল রাশিয়ার সত্যিকারের বন্ধু ছিলেন বলে উল্লেখ করেন মেদভেদেভ৷ ‘‘তিনি বুঝতে পেরেছিলেন ইউরোপের মধ্যে যে বিভাজন তা দূর করতে হবে,’’ বলেন তিনি৷ কোলকে বর্তমান বিশ্বের স্থপতি হিসেবেও উল্লেখ করেন মেদভেদেভ৷

শুলৎস: কোল একজন যোদ্ধা ছিলেন

ইউরোপীয় সংসদের সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে জার্মানির আসন্ন সংসদ নির্বাচনে চ্যান্সেলর পদে ম্যার্কেলের প্রতিদ্বন্দ্বী মার্টিন শুলৎসও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, হেলমুট কোলের নির্বাচনি প্রচারণা চালানোর কৌশল থেকে অনেক কিছু শেখার আছে৷ ‘‘তিনি একজন যোদ্ধা ছিলেন, আসল যোদ্ধা,’’ কোল সম্পর্কে বলেন শুলৎস৷

অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই একসঙ্গে জার্মান জাতীয় সংগীত গান এবং ইউরোপের জাতীয় সংগীত শোনেন৷ স্ট্রাসবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্কেস্ট্রা ইউরোপীয় সংগীতটি পরিবেশন করে৷ অনুষ্ঠান শেষে জার্মান ও ফ্রান্সের সেনারা হেলমুট কোলের মরদেহ বহন করা কফিন সংসদ থেকে বের করেন৷ এরপর জার্মান পুলিশ সেটিকে উড়িয়ে কোলের জন্মস্থান ল্যুডভিগসহাফেনে নিয়ে যায়৷ সেখান থেকে রাইন নদীতে করে স্পায়ারে নিয়ে যাওয়া হয়৷ সেখানকার বিখ্যাত ক্যাথিড্রালে অনুষ্ঠান শেষে তাঁকে ক্যাথিড্রালের কাছে অবস্থিত আডেনাওয়ার পার্কে সমাহিত করা হয়েছে৷

ব্যার্নড রিগার্ট/জেডএইচ