1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তিতে চাডের তরুণদের ডিজিটাল প্রচেষ্টা

২২ অক্টোবর ২০১৭

মধ্য আফ্রিকার পঞ্চম বৃহৎ দেশ চাড জর্জরিত অশিক্ষা, দরিদ্রতা, রাজনৈতিক অস্থিশীলতা, আমলাতন্ত্রের মতো দুরারোগ্য সামাজিক ব্যাধিতে৷ তবে এ দেশের অদম্য তরুণরা অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যা মোকাবেলায় খুঁজছে ডিজিটাল উপায়৷

https://p.dw.com/p/2mEY3
Tschad Fußball Symbolbild
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Morrison

চাডের রাজধানী এনজামেনার পথে পথে দেখা মিলবে আফ্রিকার শতাব্দী প্রাচীন কোলাহল৷ তবে এরই মধ্যে মার্কেটের আশেপাশে দেখা যাবে কিছুটা বেমানান একদল তরুণের, যারা ল্যাপটপ, নোটখাতা আর লাল মোটর বাইক সঙ্গী করে দেশকে একুশ শতকের উপযোগী করে তুলতে কাজ করছে৷ মোসোসুক ডট কম চাডের প্রথম অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, যেখানে বড় ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, এমনকি ব্যক্তি পর্যায়ে নিবন্ধিত হয়েও পণ্য কেনাবেচা করা যেতে পারে৷ ২৬ বছর বয়সি তরুণ আন্দ্রেয়াস কুমাটো এই প্ল্যাটফর্মের প্রতিষ্ঠাতা৷ তবে এখনও বাধা অনেক৷ সেনাবাহিনীর দৌরাত্ম্য, অর্থনৈতিক দুরবস্থা, দরিদ্রতা আর সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে বাধা – সব মিলিয়ে তরুণদের এ এগিয়ে যাওয়া মোটেও সহজ নয়৷ তার উপর দেশটিতে মাত্র এক ভাগ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন৷ কিন্তু এর কোনোটাই তরুণদের এগিয়ে যাওয়াকে থামিয়ে দিতে পারেনি৷ গত দু'বছর ধরে ব্যবসায়ীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে অনলাইন প্লাটফর্মটির নানা দিক তুলে ধরে এতে নিবন্ধিত হতে তাঁদের উৎসাহিত করছেন এ সব তরুণরা৷ 

কুমাটো বলেন, ‘‘কিছু বিক্রেতারা ইন্টারনেট যে কি – সেটাই বোঝে না৷ আমরা তাঁদের বলি: এই যে আপনারা এখানে জিনিস বিক্রি করছেন, অন্য এলাকার কাউকে সেটা কীভাবে দেখাবেন? অথচ পণ্যগুলো তাঁদের দেখানো দরকার৷ তাই তারই একটা ব্যবস্থা করে দিচ্ছি আমরা৷ চাডের সব মানুষ আপনার পণ্য দেখতে পাবেন – তা আপনার দোকান বন্ধ থাকুক, রাত হয়ে যাক বা সেটা ছুটির দিন হোক৷''

বলা বাহুল্য, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান মিলে এ পর্যন্ত ১২০ জনেরও বেশি বিক্রেতা এতে যোগ দিয়েছে৷

তাঁর প্রত্যাশা মোসোসুক ধীরে ধীরে হয়ে উঠবে আফ্রিকার ‘অ্যামাজন'৷ এ বছর সেপ্টেম্বর মাসে সুইডেনের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান টিগো-র উদ্যোগে আয়োজিত ডিজিটাল ইনোভেশন পুরস্কার জিতেছে মোসোসুক ডট কম, পেয়েছে প্রায় ১৮ হাজার মার্কিন ডলার৷

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট পরিচালিত ইয়ং আফ্রিকান লিডার্স ইনেশিয়েটিভ প্রজেক্টের আওতায় ইলিনয়ের নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছে আন্দ্রেয়াস কুমাটো৷ এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নিজ দেশের তরুণদের প্রশিক্ষণও দিচ্ছেন তিনি৷

তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের মূল বক্তব্য হলো, সরকার বা অন্য কেউ কিছু করে দেবে তার অপেক্ষায় বসে থাকা যাবে না – তোমার যা আছে তা নিয়ে কাজ শুরু করো আর সাহায্য লাগলে এসো৷''

সংকটে সম্ভাবনা

বিশ্বের সবচেয়ে কম আয়ুর দেশ চাড বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশও ৷ সমস্যা জর্জরিত এ দেশে নতুন উদ্যোগ শুরু সহজ কথা নয়৷ ২০১৫ সালে এনজামেনার মূল বাজারে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালায় ইসলামিক জঙ্গি গ্রুপ বোকো হারাম৷ ১৯৯০ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা রাষ্ট্রপতি ইদ্রিস ডেবির নেতৃত্বাধীন সরকারের লাগাম ছাড়া দুর্নীতিও বহুল সমালোচিত৷ ২০১৪ সালে অপরিশোধিত তেলের দাম ৫০ ভাগ নেমে যাওয়ায় দেশটির অর্থনৈতিক সংকটও প্রবল হয়েছে, বেকার হয়েছে পড়েছে অনেকে৷ ২০১৬ সালে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্থ দেশের তালিকায় ছয় নম্বরে ছিল চাড৷ গত মাসে চাডের অধিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকবার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ দেশটির জন্য নতুন আরেক সমস্যা, উল্লেখ করে কুমাটো বলেন, তরুণদের জন্য বিষয়টি হতাশাজনক৷ 

তবে অর্থনৈতিক সংকট মোসোসুক-এর জন্য শাপে বর হয়েছে৷ ‘কুইন অফ বিউটি' ফ্যাশন শপের ম্যানেজার গিসেলে আল্লাহ রোউম জানান, এমনিতে বিক্রি কমে গেলেও অনলাইনে তাদের বিক্রি বেড়েছে৷ মোসোসুকের মাধ্যমে আমরা নতুন ক্রেতাদের কাছে পৌঁছাতে পেরেছি – দেশে এবং দেশের বাইরেও৷

ডিজিটাল গোয়েন্দা

তরুণদের মধ্যে নাগরিক সচেতনতা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতার বিকাশ ঘটাতে ইউনিসেফ-এর আর্থিক সহায়তায় আন্দ্রেয়াস কুমাটো চাডে প্রতিষ্ঠা করেছে এনিবডি ক্যান ডু নামের একটি সংস্থা, সংক্ষেপে যাকে বলা হয় এবিসিডি৷ দেশের নানা সমস্যার কথা সচিত্র প্রতিবেদনের মাধ্যমে তুলে ধরে সংশ্লিষ্টদের নজর কাড়ায় এ কার্যক্রমের মূল উদ্দেশ্য৷ অনেক সময় এর মাধ্যমে তহবিল জোগাড় করা সম্ভব হয়৷ অনেকক্ষেত্রেই তা সম্ভব না হলেও চেষ্টা করা হয় নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে তা তুলে ধরার৷

১৯ বছর বয়সি সিনথিয়া অউনডুম জানায়, এ প্রকল্পের মাধ্যমে যোনিচ্ছেদ, বাল্যবিয়ে, অপুষ্টি, স্কুলে অনুপস্থিতি ইত্যাদি নানা সমস্যা তুলে ধরা যায়৷ আরেক শিক্ষার্থী মেরভেইলে কালটুমা জানান, ‘‘অনেক সময় শিক্ষার্থীরা ক্লাসেই আসে না৷ অনেক সময় শিক্ষকরা টাকার দাবি জানায়, অনেক সময় শরীর৷ অনেক শিক্ষার্থীরা ফ্রি সার্টিফিকেটের জন্য শিক্ষকদের সব দাবিই মেনে নেয়৷''

কুমাটো জানায়, দেশের এত সব সমস্যায় হতাশ হয়ে অনেকে দেশ ছেড়ে চলে যায়৷ ‘‘এটা সত্যি যে এখানে অনেক অবিচার, দুর্নীতি কিন্তু আমরা যদি এখানে না থাকি, কিছু না করি, তাহলে কে এ সব বদলাবে?''

আরএন/ডিজি (রয়টার্স)