1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইটালির গার্ডা হ্রদের নানা আকর্ষণ

শ্যারন ব্যারকাল/এসবি১৯ আগস্ট ২০১৬

ইটালির উত্তরে পাহাড়ে ঘেরা গার্ডা হ্রদ দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে বড় আকর্ষণ৷ অথচ চিরকাল এমনটা ছিল না৷ তার উপর বিশেষ জিনের কারণে সেখানকার অনেক মানুষ দীর্ঘজীবী হয়৷

https://p.dw.com/p/1Jl0G
ইটালির গার্ডা হ্রদ
ছবি: DW

গার্ডা হ্রদ: যেখানে মানুষ বেশিদিন বাঁচে

ইটালির উত্তরে গার্ডা লেকের আয়তন প্রায় ৩৭০ বর্গ কিলোমিটার৷ আলপ্স পর্বতের সীমানার পাহাড়ে ঘেরা হ্রদের উত্তর পাড়ের সৌন্দর্য রুক্ষ প্রকৃতি ও ছবির মতো গ্রামগুলির এক অসাধারণ মিশ্রণ৷ অন্যতম পরিচিত শহরের নাম লিমোনে সুল গার্ডা৷ গত শতাব্দীর বিশের দশক পর্যন্ত শুধু নৌকায় চেপে জেলেদের এই গ্রামে যাওয়া যেত৷

প্রাক্তন আইসক্রিম বিক্রেতা ফ্রাংকো উসারডি সারা জীবনই লিমোনে শহরে কাটিয়েছেন৷ ৭৬ বছর বয়স্ক এই মানুষটি পর্যটকদের প্রথম ঢলের কথা এখনো মনে করতে পারেন৷ ‘‘১৯৩২ সালে মুসোলিনি যখন গার্ডেসেনা নামের পাড়ের রাস্তা তৈরি করিয়েছিলেন, তখনই পর্যটনের উন্নতি শুরু হলো৷ আগে যেখানে লেবুর বাগান ছিল, পঞ্চাশের দশকে সেখানে হোটেল তৈরি শুরু হলো৷''

লিমোনে সুল গার্ডা নাকি পৃথিবীর উত্তরতম প্রান্ত, যেখানে লেবু গজায়৷ কিছু প্রাচীন লেবুর ঝোপ এখনো দেখা যায়৷ লেবু ছাড়াও সেখানকার আকর্ষণ হ্রদের মাছ৷ ভোরেই নানা রকমের মাছ ধরা হয়৷ গত শতাব্দীর সত্তরের দশকের শেষে স্থানীয় মানুষের মধ্যে বিশেষ এক জিন শনাক্ত করা হয়, যা তাদের দীর্ঘ আয়ুর কারণ৷ খাদ্যাভ্যাস কি তার অন্যতম কারণ? ফ্রাংকো উসারডি-র ছেলে মারিও বলেন, ‘‘তাঁর রক্তে আরও একটি জিন খুঁজে পাওয়া গেছে, যা রক্ত থেকে ফ্যাট তুলে নেয়৷ ফলে ধমনী ও শিরায় রক্ত সহজেই চলাচল করতে পারে৷ এতে করে আল্সহাইমার বা হার্ট অ্যাটাক এড়ানো যায়৷ এখন গোটা লিমোনে শহরে এবং সম্ভবত গোটা বিশ্বে ৩০ থেকে ৪০ জনের মধ্যে এই জিন-বিকৃতি দেখা যায়৷''

গার্ডা লেকের উত্তর প্রান্তে অতিথিরা আজ আর শুধু তরুণ ইটালীয়দের টানে আসেন না৷ বিশেষ ধরনের বাতাসের কারণে হ্রদটি সার্ফার ও নৌকাচালকদের স্বর্গ হয়ে উঠেছে৷ কেবেল কার-এ চেপে লেকের অপর প্রান্তে মন্টে বালডো পাহাড়ে চলে যাওয়া যায়৷ বছরে প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ প্রায় ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ রিজ বা ঢাল দেখতে আসেন৷ অথবা বাতাস কাজে লাগিয়ে প্যারাগ্লাইডিং করেন৷

কেবেল কার কোম্পানির কর্মী পাওলো ফরমাজোনি বলেন, ‘‘এই কেবেল কার ইউরোপের অন্যতম সুন্দর গার্ডা লেক থেকে প্রায় ১,৮০০ মিটার উঁচুতে মন্টে বাল্ডো-য় যায়৷ শূন্য থেকে ১,৮০০ মিটার, মন্টে বাল্ডোর ইউরোপীয় বাগানে৷''

মন্টে বাল্ডো পাহাড়ের পাদদেশে মালচেসিনে শহর৷ লিমোনে সুল গার্ডা-র পরেই উত্তর পাড়ের অন্যতম পরিচিত শহর৷ মধ্যযুগীয় ছোট্ট শহরটিকে ‘গার্ডা লেকের মুক্তো' বলা হয়৷ বিখ্যাত জার্মান কবি-সাহিত্যিক ইয়োহান ভল্ফগাং ফন গ্যোটে অষ্টাদশ শতাব্দীতেই তাঁর ‘ইটালি ভ্রমণ' বইয়ে শহরটিকে অমর করে দিয়েছেন৷

মালচেসিনে শহরের মাঝে চতুর্দশ শতাব্দীর স্কালিগার কেল্লায় গোটা এলাকার সমৃদ্ধ সংস্কৃতির পরিচয় পাওয়া যায়৷ প্রথম জার্মান পর্যটক হিসেবে সেখানে গ্যোটে-র জন্য আলাদা ফলক শোভা পাচ্ছে৷ ভিটোরিও ডাপ্রেটো বলেন, ‘‘তখন তো ক্যামেরা ছিল না৷ তাই তিনি একেঁছেন, স্কেচ তৈরি করেছেন৷ লোকে ভেবেছিল, তিনি একজন গুপ্তচর এবং তাঁকে কেল্লার কারাগারে পুরে দিতে চেয়েছিল৷ মালচেসিনে শহরের একজন মানুষ ফ্রাংকফুর্ট শহরে এক রেস্তোরাঁয় ওয়েটারের কাজ করেছিলেন৷ তিনিই জানালেন, যে গ্যোটে অত্যন্ত বিখ্যাত এক কবি৷ তখন তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়৷ তখন বন্দরে থাকতেন তিনি৷''

মালচেসিনে শহরে সন্ধ্যা নামলে এক জাদুময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়৷ এর টানেই শত শত বছর ধরে মানুষ এখানে আসছেন৷