1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বদলে যাওয়া বাস্তবতা

১৮ সেপ্টেম্বর ২০১২

রকেটের আঘাতে মারা গেল ইরাকের ছোট্ট একটি মেয়ে৷ যুদ্ধ চলছে সিরিয়ায় আর মারা গেল ইরাকের মেয়ে - শুনলে অবাকই লাগে৷ কিন্তু মেয়েটির পরিবার অবাক নয় মোটেই৷

https://p.dw.com/p/16Ab8
ছবি: picture-alliance/dpa

তারা মনে করে এমনটি যে ঘটবে তা মোটামুটি অনিবার্য৷ ফিরাস আতাল্লাহ তাই কন্যা হারানোর শোক মেনেই বলছেন, ‘রকেটটা কে মেরেছে বলতে পারব না৷ মনে হয়েছিল সিরিয়ার একটা বিমান উড়ে এসেছে৷ তারপরই শুনলাম রকেট উড়ে আসার শব্দ৷ খাদ্য এবং ওষুধ পাঠিয়ে আমরা যে সাহায্য করছি তারই মূল্য চুকাতে হচ্ছে এভাবে৷'

মেয়ে মারা যাবে, তারপরও সাহায্য পাঠাতে হবে – ফিরাস আতাল্লাহদের জন্য এটাই বাস্তবতা৷ কারণ, সিরিয়া সীমান্তে যারা সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়ে, তাঁরাও যে আপন জন! আল কাইম যে এখন সুন্নিদেরই আশ্রয়স্থল, তাঁদের যুদ্ধ-প্রস্তুতির এলাকাও৷ যুদ্ধটা সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের অনুগত বাহিনীর বিরুদ্ধে৷ ওই বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়ছে যারা, সুন্নিরা এখন সেই বিদ্রোহীদের পক্ষে৷ সিরিয়ার সুন্নিদের অনেকে সীমান্ত অতিক্রম করে আশ্রয় নিয়েছেন ইরাকে৷ আল কাইম সীমান্তে প্রতিদিন আসে দু থেকে তিনশ লোক৷ আশ্রয় চায়, সাহায্য চায় তারা৷ সাহায্য চায় তাঁদের প্রিয়জনদের কাছে৷ ইরাক-সিরিয়া সীমান্তে এ দৃশ্য নতুন, তবে অস্বাভাবিক নয়৷

২০০৩ সালে ঘটেছিল ঠিক উল্টো ঘটনা৷ সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর তাঁর বাথ পার্টির অনেক সদস্য আশ্রয় নেয় সিরিয়ায়৷ ইরাকের নতুন সরকার তখন এ কারণে তো বটেই, সঙ্গে আল কায়েদা এবং সুন্নি অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয় দেয়ার জন্যও বারবার নিন্দা জানিয়েছে আসাদ সরকারের৷

Iraqi displaced women carry their containers with water in the neighborhood of al-Fudheliyah, eastern Baghdad, Iraq, on 31 May 2007. The United Nations Children's Fund is calling for 42 million U.S. dollars to help Iraqi children. Since the start of the war, close to 15 per cent of Iraq's population or around 4 million people - half of whom are children - have fled their homes. EPA/ALI ABBAS +++(c) dpa - Report+++
‘আমাদের দেশ কোনো সাহায্য করছে না৷ সাহায্য পাঠাচ্ছেন মসজিদের ইমাম সাহেবরা আর সাধারণ লোকেরা৷'ছবি: picture-alliance/dpa

কিন্তু বাগদাদ-দামেস্ক সম্পর্কের এ টানাপোড়েন থেকে বেরিয়ে আসে তারপরই৷ সিরিয়া যে ইরাকের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকির বিপদের বন্ধু! সাদ্দামের শাসনামলে ইরাক থেকে পালিয়ে ইরান এবং সিরিয়ায় থাকতে হয়েছিল তাকে, সে কথা কী করে ভুলে যাবেন মালিকি? ভোলেননি বলেই বাথ পার্টির কে কোথায় গেলেন সেটা মনে না রেখে আসাদ সরকারের সঙ্গে সুন্দর একটা সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন তিনি৷ আরব লিগ থেকে সিরিয়াকে বহিষ্কার ও সে দেশকে সাহায্য করা বন্ধ করে দেয়ার প্রস্তাব উঠেছিল৷ ইরাক সেখানে ভোটদানে বিরত থেকেছে৷ গত বছরের আগস্টে সিরিয়ার কয়েকজন মন্ত্রী গিয়েছিলেন ইরাক সফরে৷ মালিকি তাঁদের সাদর আমন্ত্রণ জানাতে গিয়ে বলেন, ‘ইরাক আর সিরিয়া ভাই ভাই৷‘

এখন সেই সিরিয়ায় আসাদ সরকারের পতন হলে কী ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে, সে চিন্তায় পড়ে গেছেন হোশিয়ার জেবারি৷ সীমান্তে শরণার্থীদের ভীড়, সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলোর ঘাঁটি গেড়ে বসা, সিরিয়ায় মৌলবাদীদের ক্ষমতা দখলের সম্ভাবনা – এসবই আশঙ্কা হয়ে উঁকি দিচ্ছে ইরাকের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মনে৷

একদিকে সীমান্তে সিরিয়ার শরণার্থীদের সাহায্য করতে তার দেশের নাগরিক ফিরাস আতাল্লাহ মেয়ে হারানোর শোক মেনে নিতেও রাজি, অন্য দিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন শঙ্কা অবাক করতে পারে অনেককে৷ তাঁরা আরো অবাক হবেন এ কথা শুনলে যে, শরণার্থীদের কাছে সব সাহায্য নিয়ে আসছেন কিন্তু ইরাক সেনাবাহিনীর সদস্যরাই৷ সীমান্তে দেয়ালের ওপর উড়ছে আসাদ সরকারের অনুগত বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ফ্রি সিরিয়া আর্মির পতাকা৷ পতাকার পাশে দাঁড়িয়েই শরণার্থীরা হাত বাড়াচ্ছেন সাহায্যের জন্য৷ ইরাকের এক সেনা কর্মকর্তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল তাঁরা কার পক্ষ থেকে শরণার্থীদের সাহায্য করছেন? নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেনা কর্মকর্তা শুধু বললেন, ‘আমাদের দেশ কোনো সাহায্য করছে না৷ সাহায্য পাঠাচ্ছেন মসজিদের ইমাম সাহেবরা আর সাধারণ লোকেরা৷'

এসিবি / এসবি (রয়টার্স)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য