1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

একটি ছিনতাই, অনেক প্রশ্ন...

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৯ জুন ২০১৮

ঢাকায় ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন জার্মান তরুণী সুইন্ডে ভিডারহোল্ড৷ হতাশা এবং ক্ষোভ নিয়েই দেশে ফিরেছেন তিনি৷ বিষয়টি নিয়ে একরকম তোলপাড়ই চলছে৷ বিদেশিদের নিরাপত্তার বিষয়টিও উঠে এসেছে আলোচনায়৷

https://p.dw.com/p/2zrZg
Swinde Wiederhold - wurde in Bangladesch ausgeraubt
ছবি: Privat

ফটোগ্রাফির প্রতিষ্ঠান ‘পাঠশালা'র শিক্ষার্থী ভিডারহোল্ড বৃহস্পতিবার ভোরে ধানমন্ডির শংকর বাসস্ট্যান্ড থেকে রিকশায় করে তাঁর এলিফ্যান্ট রোডের বাসায় ফিরছিলেন৷ জিগাতলা সীমান্ত স্কয়ারের সামনে একটি সাদা প্রাইভেটকারে আসা ছিনতাইকারীরা তাঁর ব্যাকপ্যাক টান দিয়ে নিয়ে যায়৷ ওই ব্যাগে তাঁর ল্যাপটপ, ক্যামেরা, ক্রেডিট কার্ড এবং দুটি হার্ডডিস্কসহ অন্যান্য জিনিস ছিল৷

ছিনতাইয়ের ঘটনা তাঁর বন্ধু শশাঙ্ক সাহা বাংলা দৈনিক প্রথম আলোর কাছে বর্ননা করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘সুইন্ডে তাঁর বন্ধুদের জানিয়েছেন, তাঁর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো দুটি হার্ডডিস্ক৷ দীর্ঘ সময় কষ্ট করে তোলা ছবি এতে রয়েছে৷ দু'টি হার্ডডিস্কের জন্য বৃহস্পতিবার সারা দিনই কেঁদেছেন৷ তাঁকে কিছু খাওয়ানোও যায়নি৷ শুক্রবার ভোরবেলা বন্ধুরা তাঁকে বিমানবন্দরে পৌঁছে দিয়ে আসেন৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘গত জানুয়ারিতে ধানমন্ডির পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউটে ফটোগ্রাফি কোর্স করতে ঢাকায় আসেন সুইন্ডে৷ তিনি চট্টগ্রামে জাহাজভাঙা শিল্প, সুন্দরবন, কুয়াকাটাসহ অনেক জায়গায় প্রচুর ছবি তুলেছিলেন৷ ছিনতাইকারী যে গাড়িতে ছিল, সেই গাড়ির নম্বরপ্লেট বাংলায় থাকায় তিনি সেটি বুঝতে পারেননি৷ রিকশাচালকও সেটি খেয়াল করেননি৷ এ ঘটনায় হতবিহ্বল হয়ে পড়েন সুইন্ডে৷''

তানভীর মুরাদ তপু

সুইন্ডে  ঘটনার পর ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন,  ‘‘আমি পাঁচ মাসে এখানে অনেক জায়গায় গিয়েছি৷ অনেক অভিজ্ঞতা৷ অনেক সহযোগিতা পেয়েছি৷  কিন্তু একটি ঘটনা পুরো বাংলাদেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতাটি কালো মেঘে ঢেকে দিলো৷ না, এটা (বাংলাদেশ) ভ্রমণের জন্য নিরাপদ নয়৷ একা ভ্রমণ না করাই ভালো৷ আমি কেবল একটি কথাই বলতে পারি, দেখে-শুনে চলো, নিজের ক্ষেত্রে সাবধানে থেকো৷আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে৷ কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি বাংলাদেশ ছাড়ছি৷''

পাঠশালার অধ্যক্ষ তানভির মুরাদ তপু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সুইন্ডে ছিনতাইকারীর কবলে পড়ার পরই আমরা জানতে পারি৷ এরপর তাঁকে নিয়ে আমরা থানায় যাই৷ সে একটি মামলা করেছে৷ ঢাকায় থাকাকালে সে একবার দেশের বাইরেও গিয়েছিল৷ আর বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে সে ছবি তুলেছে৷ সেই সব ছবিই হার্ডডিস্কে ছিল৷ সে ওই ছবিগুলোর জন্যই বেশি কাতর হয়ে পড়ে৷ অবশেষে মনভরা দুঃখ নিয়ে সে বাংলাদেশ ছেড়েছে, যা আমাদেরও কষ্ট দেয়৷''

তিনি জানান, ‘‘হানোফারের সঙ্গে আমাদের এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম আছে৷  তার আওতায়ই সুইন্ডে পাঠশালায় ফটোগ্রাফি কোর্স করতে এসছিলেন৷  আমাদেরও তিন জন এখন হানোভারে আছে৷ সুইন্ডে বাংলাদেশ সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত ছিলেন৷ সবার সঙ্গে মিশতেন৷ ক্লাসেও ছিলেন মনোযোগী৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি দুঃখ নিয়ে বাংলাদেশ ছাড়লেন৷''

পারভেজ হাসান

ধানমন্ডি থানা পুলিশ এখন সুইন্ডের ছিনতাই হওয়া জিনিসপত্র উদ্ধারের চেষ্টা করছে৷ শুধু থানা পুলিশ নয়, ডিবি, পিবিআইসহ পুলিশের আরো কয়েকটি সংস্থা মাঠে নেমেছে ব্যাগ উদ্ধারে৷ ধানমন্ডি থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) পারভেজ হাসান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা আশপাশের এলকার সিসি ক্যামেরার সব ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছি৷ সীমান্ত স্কোয়ারের  ভিডিও ফুটেজের জন্য পুলিশ সদরদপ্তরে আবেদন করেছি৷ ৪-৫টি প্রাইভেট কার চিহ্নিত করেছি৷ আশা করি, ফুটেজ দেখে আমরা ছিনতাইকারীদের চিহ্নিত করতে পারবো৷ আমরা আশাবাদী, সুইন্ডে তাঁর ছিনতাই হওয়া জিনিসপত্র ফেরত পাবেন৷''

বাংলাদেশে এর আগেও একাধিক বিদেশি ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন৷ ২০১৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অনুষ্ঠান চলাকালে মঞ্চ থেকে নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত লিওনি কুলেনারার ভ্যানিটি ব্যাগ চুরির ঘটনা ঘটে৷ পরে অবশ্য ওই ভ্যানিটি ব্যাগ উদ্ধারে সক্ষম হয় পুলিশ৷

ঢাকা মেট্রেপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ঘটনার পর থেকেই পুলিশ সুইন্ডের ব্যাগ উদ্ধারে তৎপর আছে৷ অতীতেও  এরকম ঘটনা ঘটেছে৷ বিদেশি নাগরিকদের ছিনতাইয়ের ঘটনায় ছিনতাইকারী আটক এবং মালামাল উদ্ধারে সক্ষম হয়েছি৷ আশা করি, এবারও সক্ষম হবো৷''

মাসুদুর রহমান

হোলি আর্টিজান হামলার পর বাংলাদেশে বিদেশি নাগরিক এবং  দূতাবাসের বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয় সরকার৷ বিদেশি নাগরিকরা এরপর থেকে বাংলাদেশ ভ্রমনে আস্থা ফিরে পায়৷ সেই নিরাপত্তা এখনো অব্যাহত আছে কিনা জানতে চাইলে মাসুদুর রহমান বলেন, ‘‘বিদেশি দূতাবাস এবং নাগরিকদের  নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা এখনো কার্যকর আছে৷ আমরা নিরাপত্তার জন্য বিদেশি নাগরিক যাঁরা বাংলাদেশে আসেন, তাঁদের চলাচলের ওপর খেয়াল রাখি৷ তবে নানা কাজে তাঁরা আসেন৷ কেউ ভ্রমণ করতেও আসেন৷ সবার জন্য সমান নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব হয় না৷''

সুইন্ডের বিদেশ ভ্রমণের নেশা আছে৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ  করে ছবি তুলেছেন৷ ঢাকায় গ্যোয়েটে (বানানভেদে গোয়েটে) ইন্সটিটিউটের সামনেও বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন তিনি৷ পাঠশালার জনসংযেগ কর্মকর্তা ইমরান আহমেদের ভাষায়, ‘‘অত্যন্ত বন্ধু বৎসল সুইন্ডে আমাদের সবাইকে আপন করে নিয়েছিলেন৷ কিন্তু আমরা তাঁকে হাসিমুখে তাঁর দেশে পাঠাতে পারলাম না৷ এটা আমাদের দুঃখ৷ এখন যদি  পুলিশ তাঁর ছিনতাই হওয়া জিনিসপত্র উদ্ধার করে তাঁকে ফেরত দিতে পারে, তাহলে আমরা সবাই খুশি হবো৷''

প্রতিবেদনটি নিয়ে আপনার কোনো মন্তব্য থাকলে লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান