1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কলকাতায় সাত রঙের উৎসব

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

কলকাতায় সদ্য হয়ে গেল সমকামী, রূপান্তরকামীদের একদিনের এক কার্নিভাল৷ উৎসবের পাশাপাশি কিছু জরুরি গন্তব্যেরও খোঁজ দিলো এই মেলা৷

https://p.dw.com/p/2suWf
ছবি: DW/S. Bandopadhyay

আজ থেকে দশ বছর আগেও বোধহয় ভাবা যেতো না‌ যে, প্রকাশ্য কোনও জায়গায় মঞ্চ বেঁধে, মেলা বসিয়ে নিজেদের মতো করে একটা দিন পালন করছেন সমকামী, রূপান্তরকামীরা৷ এবং সমকামকে অপরাধ হিসেবেই দেখার আইন যতদিন বলবৎ থাকবে, ততদিন ওঁরা ঘরের মধ্যে লুকিয়েই থাকবেন, এমনটাই বরং স্বাভাবিক ছিল৷ সেখানে কলকাতার মুক্ত, উদার সংস্কৃতিরই বাহবা প্রাপ্য যে, এই প্রান্তিক সম্প্রদায়ের জন্যে কিছুটা খোলা প্রান্তর, খানিকটা খোলা আকাশ ছেড়ে দেওয়া গেল৷ সেখানে দিনভর কবিতা পড়া, গান গাওয়া, একক এবং সমবেত নৃত্যে মেতে উঠলেন লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল এবং ট্রান্সজেন্ডার, সংক্ষেপে ‘‌এলজিবিটি'‌র সদস্য এবং তাঁদের সমর্থকরা৷ অনেকেই এলেন, যাঁরা দৃশ্যত ‘‌অন্যরকম’ নন৷ তবু এলেন, ওই অন্যরকমরাও যে আসলে এই সমাজেরই অংশ, আলাদা নয়, অন্য নয়— সেই বার্তা দিতে৷ অনেক বয়স্ক মানুষ এসেছিলেন৷ সব মিলিয়ে ছবিটা বেশ আশাজনক৷ কারণ, ইনক্লুসিভ সোসাইটি, যে সমাজে সবাই অন্তর্ভুক্ত, সবার স্বকীয়তা যেখানে সমান সম্মানিত, তেমন একটা সমাজের ছবি তুলে ধরার জন্যে এটা খুব জরুরি ছিল৷ এই যে জমায়েত, যার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘‌রেনবো কার্নিভাল’ বা রামধনু উৎসব, সেখানে প্রতিটি অনুষ্ঠান, প্রতিটি উচ্চারণের মধ্যেই ছিল সেই সামাজিক অন্তর্ভুক্তির দাবিতে আওয়াজ জোরদার করা৷ ‘‌ওয়েস্ট বেঙ্গল ফোরাম ফর জেন্ডার অ্যান্ড সেক্সুয়াল মাইনরিটি রাইটস’ নামে যে সংগঠন এই কার্নিভালের উদ্যোক্তা, তারা এই অ্যাক্সেপটেন্স, বা সামাজিকভাবে গ্রাহ্য হওয়ার পাশাপাশি রেজিস্টেন্স, বা প্রতিরোধের কথাও বলছে৷ এ ব্যাপারে সংগঠনের অন্যতম প্রতিনিধি কৌস্তভ মান্না ডয়চে ভেলেকে জানালেন, সমকামী, উভকামী, রূপান্তরকামীদের আইনি অধিকারের বিষয়টি অনেক সময়ই খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে৷‌ যেহেতু, তাঁরা এখন অনেক বেশি সমাজের মূল স্রোতে আসার চেষ্টা করছেন নিজেদের লিঙ্গ পরিচয় এবং স্বকীয়তা অক্ষুন্ন রেখেই৷ তাতে স্বাভাবিকভাবেই বাধা আসছে, যেটার মোকাবিলা করতে হচ্ছে৷ যে কারণে রেনবো কার্নিভালের আসরে পশ্চিমবঙ্গের ইনস্টিটিউট অফ জুরিডিকাল সায়েন্স থেকে একটি স্টল ছিল, যেখানে এলজিবিটি সম্প্রদায়ের জন্য আইনি সহযোগিতার রাস্তা বাতলে দেওয়া হচ্ছিল৷

‘সমকামীদের আইনি অধিকারের বিষয়টি অনেক সময়ই খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে’

এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে এলজিবিটি মানুষরা এই কার্নিভালে যোগ দিতে এসেছিলেন নানা ধরনের হস্তশিল্পের পশরা নিয়ে৷ সেইসব ঝুটো গহনা আর সাজগোজের জিনিস নিয়ে লোকের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো৷ বেশ কয়েকজন বিদেশিকে দেখা গেল, যাঁরা এলজিবিটি গোষ্ঠীভুক্ত এবং এসেছেন আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে৷ এছাড়া কৌতুহলী লোকজন, এলাকার বাসিন্দা, পথচলতি মানুষ তো এসেইছেন দিনভর৷ এর থেকে কি মনে হয় এলজিবিটিদের সম্পর্কে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাচ্ছে?‌ কৌস্তভ এখনই অতটা আশাবাদী নন৷ কিন্তু একটা জিনিস নিশ্চিতভাবেই ঘটছে বলে তিনি জানালেন৷ ভিজিবিলিটি বাড়ছে৷ এখন অনেক বেশি দৃশ্যমান হচ্ছেন এলজিবিটি মানুষজন৷ তাঁরা ভয় পাচ্ছেন না, সঙ্কোচ কাটিয়ে উঠছেন৷ এটা শুনতে যতই সাধারণ বা সামান্য মনে হোক, এমনটা ঘটছে এবং সমাজও খুব ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে এঁদের দেখতে৷ এবং কখনও কখনও এগিয়ে এসে কথাবার্তা বলতেও শুরু করছে৷ এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, বললেন কৌস্তভ৷