1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জঙ্গিদের ফেরাতে নয়া নীতি

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
২৩ নভেম্বর ২০১৭

জম্মু-কাশ্মীরের অশান্ত পরিস্থিতিকে বাগে আনতে একটি দ্বিমুখী নীতি নিয়েছে সরকার৷ জঙ্গি দলে নাম লেখানো যুবকদের বলা হয়েছে, তারা সমাজের মূলস্রোতে ফিরে আসলে তাদের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ তুলে নেওয়া হবে, দেওয়া হবে চাকরিও৷

https://p.dw.com/p/2o6ec
ছবি: Getty Images/AFP/R. Bhat

কেন্দ্রীয় সরকার, সেনাবাহিনী এবং জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ কাশ্মীর উপত্যকায় লাগাতার সহিংসতার মোকাবিলায় নতুন এক দ্বিমুখী কাশ্মীর নীতি গ্রহণ করেছে৷ একযোগে তারা রাজ্যের স্থানীয় যুবকদের প্রতি ডাক দিয়ে বলেছে, ‘তোমাদের যে মগজ ধোলাই করে জঙ্গি দলে ঢোকানো হয়েছে, সেটা সরকার জানে৷ এতে সহিংসতা ও রক্তপাতই শুধু বেড়েছে, আর কিছু হয়নি৷ কাজেই অনেক হয়েছে, এবার ক্ষান্ত দাও৷ এবার ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এসো৷’ এভাবেই সরকার, সেনাবাহিনী, রাজ্য পুলিশ দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে সমাজের মূলস্রোতে ফিরে এলে এদের বিরুদ্ধে যাবতীয় অভিযোগ, মামলা-মোকদ্দমা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে৷ পাশাপাশি চাকরি-বাকরি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ পেতেও সরকারের তরফে সাহায্য করা হবে তাদের৷ সরকারের হিসেবে, উপত্যকায় এখনও ১৩০ জনেরও বেশি স্থানীয় যুবক জঙ্গি দলে আছে৷ এর জন্য কেন্দ্রীয় সংরক্ষিত পুলিশ বাহিনী সংক্ষেপে সিআরপিএফ একটি ‘হেল্পলাইন’ চালু করেছে (নম্বর ১৪৪১)৷ পরিবারে ফিরতে ইচ্ছুক স্থানীয় জঙ্গিরা চাইলে এই নম্বরে যোগাযোগ করতে পারে৷

সিআরপিএফ-এর শ্রীনগর ইন্সপেক্টর জেনারেল অপারেশন জুলফিকর হাসান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এই হেল্পলাইন চালু হয় এ বছরের প্রথমদিকে৷ ইতিমধ্যেই ৭০ হাজারেরও বেশি কল এসেছে৷ কাশ্মীর উপত্যকায় বিদেশি জঙ্গিদের রেয়াত করা না হলেও, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালাতে স্থানীয় যেসব তরুণ কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে ওপারে গিয়েছিল তারা ফিরে আসতে চাইলে তাদের সমান সুযোগ দেওয়া হবে৷ অবশ্য যাচাই করার পর৷ এই প্রসঙ্গে ঘরে ফেরা স্থানীয় যুবকদের মধ্যে প্রথমেই উঠে আসে মজিদ খানের নাম৷ মজিদ যোগ দিয়েছিল লস্কর-ই-তৈয়বা জঙ্গি দলে৷ কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া ভিডিও ক্লিপিং দেখে মায়ের কাতর ডাকে সাড়া না দিয়ে আর থাকতে পারেনি মজিদ৷ ঘরে ফিরে নতুন জীবন শুরু করতে চায় সে৷

উল্লেখ্য, মজিদ কাশ্মীরের একজন নাম করা ফুটবল গোলকিপার৷ রাজ্যের ফুটবল টিমে প্রতিনিধিত্ব করেছে সে৷ মায়ের অন্তরের ডাকে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে হিসেব চুকিয়ে সম্প্রতি ফিরে আসে মজিদ৷ তাকে দিল্লিতে এনে নিজের ফুটবল কোচিং স্কুলে রেখে অন্য ভালো পেশাদারদের দিয়ে ট্রেনিং দিতে চান ভাইচুং ভুটিয়া (বানানভেদে বাইচুং ভুটিয়া)৷ সব খরচাপাতি ফুটবল কোচিং স্কুলের৷ তাকে আরও ভালো ফুটবলার হিসেবে গড়ে তুলতে চান বাংলার বিখ্যাত ফুটবলার ভাইচুং৷ ইতিমধ্যেই তিনি জম্মু-কাশ্মীর ফুটবল সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, কথা বলতে চেয়েছেন মজিদের সঙ্গে৷

মজিদের দৃষ্টান্ত তুলে সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে অন্য মায়েদের অনুরোধ করা হয়, তাঁরা যেন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তাঁদের ছেলেদের বা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের ঘরে ফিরে আসার জন্য বলেন৷ মায়ের চোখের জলের ডাক সম্ভবত তারা ফেলতে পারবে না৷ যেমনটা পারেনি মজিদ৷ কেন্দ্রীয় সংরক্ষিত বাহিনীর আইজি জুলফিকর হাসান জানান, এবার ৬০ জন কাশ্মীরি যুবক ফিরে আসতে চাইছে৷ এছাড়া আরও দু'টি পরিবার সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে একই ধরনের বার্তা পাঠিয়েছে তাঁদের পরিবারের ছেলেদের কাছে, যাতে তারা আবার পরিবারে ফিরে আসে৷ একটি পরিবার শোপিয়ানের আশিক হোসেন ভাট, অন্যজন ফুলওয়ামার মনজুর আহমেদ৷ নিরাপত্তা বাহিনীর কর্তাব্যক্তিরা বলেছেন, ‘আমরা কাশ্মীর উপত্যকার যুবসমাজের প্রাণশক্তির জন্য গঠনমূলক খোরাক দিতে রাজ্যের স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় বাস্কেটবল ও অন্যান্য খেলাধুলার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চেষ্টা করছি৷ এর জন্য বাজেটও রাখা হয়েছে৷ নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান জানান, জঙ্গি গোষ্ঠীতে যোগ দেওয়া স্থানীয় যুবকরা ঘরে ফিরে এলে বা আত্মসমর্পণ করলে তাদের পাসপোর্ট ও কর্মসংস্থানের সুবিধা দেওয়া হবে৷

উদ্যোগটা ভালো সন্দেহ নেই: ড. অমল মুখোপাধ্যায়

মোদী সরকারের এই নতুন কাশ্মীর নীতি কতটা সফল হবে সে সম্পর্কে প্রবীন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. অমল মুখোপাধ্যায় ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপচারিতায় বলেন, ‘‘উদ্যোগটা ভালো সন্দেহ নেই৷ কারণ এখন দেখা যাচ্ছে কাশ্মীরি যুবকদের মগজ ধোলাই করা হচ্ছে৷ ক্রমশই কাশ্মীরি তরুণ প্রজন্ম জঙ্গি সংগঠনগুলিতে চলে যাচ্ছে৷ সেদিক থেকে সরকারের এই প্রচেষ্টা নিশ্চয় ভালো৷ তবে শেষ পর্যন্ত কতটা সফল হবে বলা মুশকিল৷ কারণ কাশ্মীরি যুবকরা চাকরি বাকরি পাচ্ছে না৷ পাচ্ছে না একটা স্টেবল বা স্থিতিশীল জীবন৷ যদি পেত তাহলে হয়ত তারা অনেকেই যেত না৷’’ তবে তাংর কথায়, ‘‘শুধু কাশ্মীর কেন, ভারতের অনেক রাজ্যেই বেকারত্ব একটা বড় সমস্যা৷ সেই প্রেক্ষিতে বলতে পারি, প্রচেষ্টা স্বাগতযোগ্য৷ তবে আরো একটা কথা....এই উদ্যোগ তরুণ প্রজন্মের একটা ছোট গোষ্ঠীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে নাকি বৃহত্তর অংশে ছড়িয়ে পড়বে, সেটা অবশ্য ভবিষ্যতই বলতে পারবে৷’’