1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কেউ কেউ সব সময় বিতর্ক খোঁজে

সমীর কুমার দে ঢাকা
২ জানুয়ারি ২০১৮

পহেলা জানুয়ারি বাংলাদেশের প্রতিটি স্কুলে বই উৎসব হয়৷ এবারও সেই প্রস্তুতি নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়৷ সেদিন সারাদেশে ৩৫ কোটি ৪২ লাখ বই শিশুদের মধ্যে বিলি করা হবে৷ কিন্তু শিশুদের এই বই নিয়ে গেল কয়েক বছর বেশ বিতর্কও উঠছে৷

https://p.dw.com/p/2q7tF
ফাইল ছবিছবি: DW/M. Mamun

অভিযোগ আছে বই থেকে প্রখ্যাত সংখ্যালঘু লেখকদের লেখা বাদ দেয়া হচ্ছে বলেও৷ সাম্প্রদায়িকতাকে খানিকটা উসকে দেয়ারও অভিযোগ আছে৷ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ডয়চে ভেলের কাছে এ সব বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন৷

ডয়চে ভেলে: এবার পাঠ্যবইয়ে কি নতুন কিছু অন্তর্ভুক্ত হয়েছে?

নুরুল ইসলাম নাহিদ: নতুন ১২টি বই এসেছে৷ আমরা প্রতিবছরই বইকে আরো সুখপাঠ্য, সহজপাঠ্য ও ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে পড়তে আনন্দ পায় সে চেষ্টা করি৷ আমরা ছবিগুলো রঙিন করেছি৷ ভালো কাগজে ছাপানোর ব্যবস্থা করেছি৷ এছাড়া ছোট খাট ভুল সবসময়ই সংশোধন করা হয়, যেমন বানান ভুলসহ অনেককিছু৷ তবে এবার মাধ্যমিকে আমরা নতুন করে ১২টি বই দিচ্ছি৷

গত বছর বই নিয়ে কিছু বিতর্ক হয়েছিল, এবার সেই বিতর্ক থেকে কি মুক্ত হতে পারব?

বিতর্ক যারা তোলে, যারা কথা বলে, তাদের আপনি বই ছাপাতে দেন, দেখেন পারে কিনা৷ এগুলো বললেই তো আর হবে না৷ প্রতি বছরই আমরা শিক্ষাবিদ থেকে শুরু করে শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের মতামত নেই৷ তারপর বইয়ে সংশোধন বা সংযোজন-বিয়োজন করে থাকি৷ যারা বিতর্ক তোলার তারা সব সময় সেটা করে৷

‘প্রতি বছরই আমরা শিক্ষাবিদ থেকে শুরু করে শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের মতামত নেই’

এবার নারী শিক্ষাকে কতটা গুরুত্ব দেয়া হয়েছে?

বইয়ে তো আর নারী-পুরুষ আলাদা করে দেখার কিছু নেই৷ এখানে সবার বিষয়ে সমান গুরুত্ব থাকবে৷ তবে নারীদের অধিকারসহ অন্যান্য বিষয়ে বইয়ে আগেও গুরুত্ব দেয়া ছিল, এবারও থাকবে৷

এবার কত কপি বই শিশুদের মধ্যে বিলি করা হবে?

এবার আমরা ৩৫ কোটি ৪২ লাখ বই শিশুদের মধ্যে বিলি করব৷ মিলিয়নে যদি এই হিসাব বলি, তাহলে ৩৫৪ মিলিয়ন বই আমরা শিশুদের দিচ্ছি৷

বইয়ে যে সংযোজন বা বিয়োজন করা হয়, তা নিশ্চয় শিক্ষাবিদদের নিয়ে গঠিত কমিটির মাধ্যমেই করা হয়ে থাকে?

প্রখ্যাত সব শিক্ষাবিদদের নিয়ে আমাদের উপদেষ্টা কমিটি আছে, প্রতিটি বিষয়ের কমিটি আছে৷ তারাই প্রতি বছর বইগুলো নিয়ে বিশ্লেষণ করেন, সংযোজন-বিয়োজন করেন৷ এবার আমরা নতুন করে ১২টি বই শিশুদের দিচ্ছি৷ এই বইগুলো তো আমরা লিখিনি৷ এই বইগুলো তো তাঁরাই লিখে দিয়েছেন৷ একটা অনুষ্ঠান করে আমরা তাঁদের হাত থেকে সেই বইগুলো নিয়েছি৷

শিশুদের হাতে আমরা যে বইগুলো দিচ্ছি, তা কি শিশুদের জন্য বেশি হয়ে যাচ্ছে? মানে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে?

পড়াশোনা করতে হলে, জানতে হলে পড়তে হবে৷ এটা বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে কিনা, সেটা নিয়ে আমাদের কাজ চলছে৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটা হতেই পারে, তবে সেটা বেশি কিছু না৷ আজকের যুগে জ্ঞান বেড়ে যাচ্ছে, জানার প্রয়োজন বেড়ে যাচ্ছে৷ সে কারণেই আমাদের এগুলো করতে হচ্ছে৷ তবে এগুলো যদি বেশি হয়, তাহলে আমরা কমাবার চেষ্টা করব, করছিও৷ এবারও অনেক কিছু করেছি৷ আবার নতুন কিছু প্রতিনিয়তই যোগ হচ্ছে৷ আমরা দেখছি, যে ক্লাসের বই, সেই ক্লাসের জন্য ওই বইগুলো ঠিক আছে কিনা৷ যদি বেশি হয়ে থাকে তাহলে কমিয়ে ফেলব৷ আমরা তো সহজপাঠ্য ও শিশুদের জন্য আনন্দদায়ক বই দেয়ার চেষ্টা করছি৷

সাম্প্রদায়িক বিষয় নিয়ে গেল বছর বিতর্ক হয়েছে৷ এবার সেই বিতর্ক থাকবে না বলেই কি বিশ্বাস?

এখানে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই৷ আমাদের বর্তমান সরকার, আমার মন্ত্রণালয় বা আমি নিজে কখনও সাম্প্রদায়িক ছিলাম না৷ বিতর্ক তুলতে গেলে সময় লাগে নাকি? এগুলো হলো বাজারি কথা৷ আমরা সাম্প্রদায়িকতাকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেই না৷ আমরা আধুনিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দিচ্ছি৷ আগে তো মাদ্রাসায় ইতিহাস, গণিত এগুলো পড়ানো হতো না৷ এখন আমরা সেটা ঢুকিয়েছি৷ এখন মাদ্রাসাগুলোতেও এই সব বই পড়ানো হচ্ছে৷

মাদ্রাসা শিক্ষার সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার কি সমন্বয় হচ্ছে?

হচ্ছে কি, হয়েই গেছে৷ এখন মাদ্রাসায় সাধারণ বিষয় পড়ানো হচ্ছে৷ আর এটাতে তারাই এগ্রি করেছে৷

মাদ্রাসাগুলো কি সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে?

যে মাদ্রাসাগুলো আমাদের ‘কারিকুলাম' ফলো করে, তারা তো আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছেই৷ কিন্তু যে সব কওমি মাদ্রাসা আমাদের কারিকুলাম ফলো করে না, তাদের আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না৷ তারা স্বাধীন, তারা কোনোদিনই কারো নিয়ন্ত্রণে যায়নি৷

গেল বছর অভিযোগ উঠেছিল, সংখ্যালঘু লেখকদের লেখা বই কমে যাচ্ছে....আপনি কী মনে করেন?

এমন চিন্তা করে আমরা বইয়ে কোনো লেখা দেই না৷

শিশুদের অভিভাবক হিসেবে আপনার উপদেশ কী?

আমাদের শিশুদের যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে গেলে আমাদের মূল শক্তি তো শিক্ষক৷ আমরা তো আমাদের শিক্ষকদের ট্রেনিং দেয়া, বেতন বাড়ানোসহ সব ধরনের চেষ্টা করে যাচ্ছি৷ তারপরও এখানে অনেক সমস্যা আছে৷ এখন কথা হলো অভিভাবকরা যদি শিশুদের দিকে নজর না রাখেন, তাহলে তারা মানুষ হবে না৷ কারণ একটা শিশু স্কুলে থাকে ৪-৫ ঘণ্টা৷ বাকি সময় তো বাড়িতেই থাকে৷ সেখানে অভিভাবকদের নজর দিতে হবে৷

অভিভাবকদের আপনি কী বলবেন?

ছোটবেলা থেকেই অভিভাবকদের দেখতে হবে যে, তাদের বাচ্চা খারাপ দিকে যাচ্ছে কিনা, সে ঠিকমতো পড়াশোনা করছে কিনা৷ এটা দেশের সকল অভিভাবকের প্রতি আমাদের আহ্বান৷

সাক্ষাৎকার কেমন লাগলো? এ বিষয়ে আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য