1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কিঞ্চিৎ ভালোলাগা, অনেক খারাপলাগা

৮ আগস্ট ২০১৭

ট্রাফিক আইন না মানা যেন এক সংস্কৃতি হয়ে গেছে বাংলাদেশে৷ সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন হোক আর ব্যক্তিগত হোক৷ সমাজের প্রভাবশালীরা যেমন এগুলোর অপব্যবহার করেন, তেমনি করেন নিজেদের প্রভাবশালী ভাবতে শুরু করা শিক্ষার্থীরা৷

https://p.dw.com/p/2hk8X
Bangladesch Straßenverkehr in Dhaka
ছবি: DW/M. Mamun

কিঞ্চিৎ৷ একটা বাসের নাম কখনো এত মিষ্টি হতে পারে? অন্তত আমার জানা ছিল না৷ বাসার সামনে যে বটগাছটি ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল কতকাল, তার কচি কচি সবুজ পাতাগুলোর ছায়া পড়ত বাসটির লাল-সাদা গায়ে৷ সকাল আটটার একটু আগে বাসা থেকে বের হয়েই দূরে বাসটিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মন ভালো হয়ে যেত৷ ঘণ্টা আধেক বা তার একটু বেশি সময়েই পৌঁছে যেতাম প্রিয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে৷ কিন্তু কতবার মনে হয়েছে, নিশ্চিন্ত এই ভ্রমণ যেন শেষ হয় না কখনো৷

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসগুলোর নাম এমনই মিষ্টি হয়৷ তরঙ্গ, হেমন্ত, ফাল্গুনী, আনন্দ, উল্লাস, ঈশাখা, মৈত্রী৷ যেন প্রকৃতি, ইতিহাস আর আবেগের মিশেল৷ বিকেল হলেই ফেরার তাড়া৷ অনেক ভিড়৷ সবাই ফিরছে৷ কেউ দাঁড়িয়ে, কেউ বসে, কেউ দরজায় ঝুলে৷ এ যেন সত্যিই এক জীবন তরঙ্গ৷ মৈত্রীর উল্লাস৷ সেসব দিনের কথা মনে হলে এখনো কম্পিউটারের স্ক্রিন ঝাপসা হয়৷ কিবোর্ডে আঙুল কেঁপে কেঁপে ওঠে৷

তখনো জ্যাম ছিল ঢাকায়৷ কিন্তু খুব কি তাড়া ছিল আমাদের? খুব অল্প সময়েই সব বদলে গেল কীভাবে? উলটো পথ ধরা এখন কেন নিয়মিত হয়ে গেছে? জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী এই ক'দিন আগেই কর্মরত এক পুলিশ সার্জেন্টকে মারধর করেছে৷ তাঁর দোষ ছিল, তিনি উলটো পথে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ঠেকাতে চেয়েছিলেন৷ এমন ‘অপরাধ' ছাত্ররা মেনে নেবে কেন? পুলিশ সার্জেন্ট তাঁর অপরাধের উচিত শাস্তিই পেয়েছেন৷

ধানমন্ডির সেই ঘটনাটি এখনো গায়ে কাঁটা দেয়৷ কয়েক বছর আগে উলটো দিক থেকে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসের সামনে একটি প্রাইভেট কার ‘অন্যায়ভাবে' এসে পড়ে৷ গাড়ির যাত্রী বয়স্ক এক ভদ্রলোক ও তাঁর ছেলে, যিনি কিনা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র৷ একটু কথা কাটাকাটিতেই ছেলেটিকে বেধড়ক পেটালো ছাত্ররা৷ ছেলেটি নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র বলে পরিচয় দিয়েও নিস্তার পাননি৷ তাঁর বয়স্ক বাবাকেও ছাড়েনি ছাত্ররা৷

উলটো পথে গাড়ি চলা বা নিয়ম ভাঙা একরকম সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশে৷ সবাই চলেন, সবাই ভাঙ্গেন যখনই ‘সুযোগ' পান৷ এই সংস্কৃতি রাষ্ট্রের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যেমন আছে, তেমনি আছে পেশাগত জায়গাগুলোতেও৷ বিশেষ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আগে এই সংস্কৃতি বদলানো খুব দরকার৷ ফিলিপাইন্সের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ হয়েছে আমার৷ এই দেশটির উদাহরণ দিচ্ছি, কারণ, অর্থনৈতিক দিক থেকে তারা বাংলাদেশ থেকে খুব একটা এগিয়ে নেই৷ বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে পিছিয়েই আছে৷

যুবায়ের আহমেদ
যুবায়ের আহমেদ, ডয়চে ভেলেছবি: Zobaer Ahmed

ম্যানিলার যানজট ঢাকার কাছাকাছিই৷ যাই হোক, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন সড়ক দিয়ে হাটতে হবে আর কোন সড়ক দিয়ে গাড়ি চলবে, তা নিয়ন্ত্রণ করা হয়৷ এমনকি ক্যান্টিনে প্রত্যেক টেবিলে টেবিলে লেখা আছে ক্লেগো (CLAYGO), অর্থাৎ ‘ক্লিন অ্যাস ইউ গো'৷ সবাই সেটি মানছেও৷ খাবার খেয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় সব ফেলছে৷ শুধু বিশ্ববিদ্যালয়েই নয়, এ ধরনের শিক্ষা দেয়া হচ্ছে স্কুলগুলোতেও৷ তাই সেখানে নিয়ম মানতেই শিখছে সবাই৷ নিয়ম ভাঙতে নয়৷ বাংলাদেশে ছাত্রদের দোষ ঢাকছি না৷ কিন্তু দায় এড়াতে পারবেন না কেউই৷ নিয়ম মানার শিক্ষা দিতে হবে ছাত্রছাত্রীদের৷ সেইসঙ্গে ঘটনাকে একেবারেই ছাড় দেয়া যাবে না৷ আর তা শুরু করতে হবে শিশুকাল থেকে৷

যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এতগুলো বছর কাটান, তাঁদের সবাই তাদের বিদ্যাপীঠটিকে ভালোবাসেন৷ কিন্তু এই ভালোবাসার সঙ্গে অনেক খারাপলাগা যুক্ত হয়, যখন এমন সব হৃদয়বিদারক ঘটনা দেখতে হয়৷ যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু, অনুজদের এমন আচরণ দেখতে হয়, তখন মাথা উঁচু করে বিদ্যাপীঠটির নাম বলতে বাধে৷

আপনার কি লেখককে কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য