1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কুলখানিতে পদদলিত হয়ে ১০ জনের মৃত্যু

হারুন উর রশীদ স্বপন
১৮ ডিসেম্বর ২০১৭

বাংলাদেশের বন্দর নগরী চট্টগ্রামে একটি কুলখানির অনুষ্ঠানে পদদলিত হয়ে ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে৷ আহত হয়েছেন আরো অন্তত ৫০ জন: যাঁরা মারা গেছেন তাঁদের সবার পরিচয় এখনো জানা যায়নি৷ জানা গেছে শুধুমাত্র সাতজনের নাম৷

https://p.dw.com/p/2pYtL
Massenpanik in Bangladesch
ছবি: bdnews24.com

সদ্য প্রায়াত চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এবং আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কুলখানির ‘মেজবান'-এ এই মর্মন্তুদ ঘটনা ঘটে৷ নগরীর বিভিন্ন এলাকার ১৪টি কমিউনিটি সেন্টারে এই আয়োজন ছিল৷ মুসলামান ছাড়া হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও অন্যান্যদের ধর্মাবলম্বীদের জন্য এই আয়োজন ছিল নগরীর আসকার দিঘি এলাকার এস এস খালেদ রোডের রিমা কমিউনিটি সেন্টারে৷

চট্টগামের পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার চৌধুরী সংবাদমাধ্যকে ১০ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করছেন৷ তিনি জানিয়েছেন, কমিউনিটি সেন্টারের ঢালু গেট দিয়ে হুড়োহুড়ি করতে ঢুকতে গিয়েই এই দুর্ঘটনা ঘটে৷

তিনি জানান, ‘‘যাঁরা পদদলিত হয়েছেন তাঁদের চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর, ১০ জনকে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন৷ কমপক্ষে ৫০ জনকে এখন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে৷''

হাসপাতালে আহত ও নিহতদের স্বজনদের আহাজারিতে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়৷ এই ঘটনার পর রিমা কমিউনিটি সেন্টারের মেজবান বন্ধ করে দেয়া হলেও, বাকি ১৩টি কমিউনিটি সেন্টারের মেজবান হয়েছে স্বাভাবিকভাবেই৷

সাংবাদিক হামিদ উল্লাহ

চট্টগ্রামের সিনিয়র সাংবাদিক হামি উল্লাহ ঘটনাস্থল থেকে ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘ঐ কমিউনিটি সেন্টারটি পাহাড়ের ঢালে৷ প্রবেশের গেট আছে দু'টি৷ এখানে মুসলামান ছাড়া অন্য ধর্মের লোকজনের খাবার আয়োজন করা হয়েছিল৷ কয়েকদিন ধরেই এই মেজবানের ব্যাপক প্রচার চালান হয়৷ তাই সকাল ১১টা থেকেই লোকজন কমিউনিটি সেন্টারের সামনে ভিড় করেন৷ আয়োজকরা ১১টার পর পিছনের গেট থেকে কিছু ভিআপিকে ঢুকিয়ে খাবার শুরু করে দেন৷ তখন সামনের গেটের রাস্তায় অপেক্ষমান কয়েক হাজার মানুষ অধৈর্য হয়ে ওঠেন৷ রাস্তায়ও যানজট সৃষ্টি হয়৷ রাস্তাটি ঢালু আর গেট থেকে কমিউনিটি সেন্টা কয়েক ফুট ঢালুতে৷ দুপুর ১২টার দিকে হাঠাৎ গেট খুলে দিলে ইটের ঢালু পথে নামতে গিয়ে অনেকে পিছলে পড়ে যান৷ যাঁরা পড়ে যান তাঁরাই পদদলিত হন৷''

গত ১৫ ডিসেম্বর সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী মারা যান৷ চট্টগ্রামের ১৪টি কমিউনিটি সেন্টারে কমপক্ষে এক লাখ মানুষের জন্য কুলখানি উপলক্ষ্যে মেজবানের আয়োজন করা হয় সোমবার৷

মেজবানের ভেন্যুগুলো হচ্ছে – পাঁচলাইশ এলাকার ‘দ্য কিং অফ চিটাগাং', জিইসি-র মোড়ের ‘কে স্কয়ার কমিউনিটি সেন্টার', চকবাজারের ‘কিশলয় কমিউনিটি সেন্টার', পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার ‘সুইস পার্ক কমিউনিটি সেন্টার', লাভ লেনের ‘স্মরণিকা কমিউনিটি সেন্টার', মুরাদপুর এলাকায় ‘এন মোহাম্মদ কনভেনশন হল', বাকলিয়ার কেবি কনভেনশন হল', কাজির দেউড়ির ‘ভিআইপি ব্যানকোয়েট কমিউনিটি সেন্টার' এবং ‘সাগরিকা স্কয়ার' আর ডাবল মুরিংয়ের ‘গোল্ডেন টাচ কমিউনিটি সেন্টার'৷ তাছাড়া ‘রিমা কনভেনশন সেন্টার'-এ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও অন্যান্যদের ধর্মালম্বীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা  করা হয়েছে৷

সাংবাদিক হামিদ উল্লাহ জানান, ‘‘মেজবান চট্টগ্রামের একটি ঐহিত্যবাহী খাবার৷ এতে সাদা ভাত ও মাংস খাওয়ানো হয়৷ নিয়ম মেনে অতিথিরা পালা করে খাবার গ্রহণ করেন৷ সাধারণত কোনো বিশৃঙ্খলা হয় না৷ এবার আয়োজকদের অব্যবস্থাপনার কারণেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে৷''

পুলিশ কমিশনার জানান, ‘‘আমাদের ২০ জন পুলিশ সেখানে ছিলেন৷ অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে তাঁরা পরিস্থিতি সামলাতে পারেননি৷''

এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে এক লাখ টাকা করে দিচ্ছে৷ এছাড়া নিহতদের শেষকৃত্য ও আহতদের চিকিৎসা খরচ দেবে মেয়র মহিউদ্দিনের পরিবার৷