1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চিলিতে দুধ উৎপাদন লাভজনক করার উদ্যোগ

২০ মার্চ ২০১৮

বর্তমান যুগে ছোট মাত্রায় কৃষি উৎপাদন বেশ কঠিন হয়ে উঠেছে৷ দক্ষিণ অ্যামেরিকার দেশ চিলিতে দুধ বেচে মুনাফা করা কঠিন হয়ে উঠেছে৷ তাই জ্বালানি সাশ্রয়ের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে৷

https://p.dw.com/p/2uc2e
USA Vorwahlen in Nevada Schild #WhatAmerica Kuh
ছবি: DW/I. Pohl

গরু হিসেবে এখানে জীবনটা খারাপ কাটে না৷ চিলিতে অন্য কোথাও এত ভালো ঘাস নেই৷ ওসর্নো শহরের মতো অন্য কোথাও এত দুধ উৎপাদন হয় না৷ চাষি হিসেবে আন্দ্রিয়ানা মোয়র বলেন ‘‘সত্যি বড় ভালো প্রাণী৷ তারা শুধু এই ঘাস খায় এবং দুধ দেয়, যা আমাদের পুষ্টি যোগায়৷ আমাদের বাচ্চারা সেই দুধ খেয়ে বড় হয়৷ তাই গরুদের সুস্থ-সতেজ মাঠে বিচরণ করা জরুরি৷''

আন্দ্রিয়ানা মোয়র গরু খুব ভালো চেনেন৷ ৩৮ বছর ধরে তিনি চাষি হিসেবে কাজ করছেন৷ ১৭০ বছর আগে তাঁর পূর্বপুরুষরা জার্মানি থেকে এখানে এসেছিলেন৷ তিনি বলেন, তাঁদের খামারবাড়িতে শুরু থেকেই দুধ উৎপাদন করা হয়৷ তিনি সেই ঐতিহ্য চালিয়ে যেতে চান৷ আন্দ্রিয়ানা বলেন, ‘‘প্রকৃতি আমাদের যা দেয়, তা নিয়েই কাজ করতে হয়৷ প্রকৃতিকে শ্রদ্ধা করে তা গ্রহণ করতে হয়৷ প্রকৃতির ক্ষতি করার কোনো অধিকার আমাদের নেই৷ পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এই পৃথিবীকে ভালোভাবে রেখে যেতে হলে এটাই একমাত্র উপায়৷''

ঠিক দুপুর চারটার সময় প্রায় ২৫০ গরুকে দুধ দিতে নিয়ে যাওয়া হয়৷ যান্ত্রিক সেই কাঠামো চালাতে মাসে প্রায় ১,০০০ ইউরো মূল্যের বিদ্যুৎ খরচ হয়৷ উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানি করতে হয় বলে চিলিতে জ্বালানির ব্যয় খুব বেশি৷

বিদ্যুতের এই উচ্চ মূল্য আদ্রিয়ানা মোয়র-এর মাথাব্যথার কারণ৷ খরচ কমাতে তিনি পরিবেশবান্ধব বিকল্প খুঁজছিলেন৷ তারপর তিনি ছাদের উপর সৌর প্যানেল বসিয়েছেন৷ ২,৪০০ ইউরো খরচ হয়েছে৷ রাষ্ট্র কোনো আর্থিক সাহায্য করে নি৷ সৌরশক্তি ব্যবহার করে তিনি এখন ৮ শতাংশ জ্বালানির ব্যয় বাঁচাতে পারছেন৷ আন্দ্রিয়ানা মোয়র বলেন, ‘‘এই ইউনিট দিনে ৩০০ ওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করে৷ দুধ দোয়ার সময় সেই বিদ্যুৎ সঙ্গে সঙ্গে খরচ হয়ে যায়৷ তাই বাইরে থেকে বেশি বিদ্যুৎ লাগে না৷''

দুধ বেচে মুনাফা করা চিলির চাষিদের জন্যও কঠিন কাজ৷ লিটার প্রতি ২৭ সেন্ট পাওয়া যায়৷ এত বড় খামারবাড়ি চালাতে সেই টাকা খরচ হয়ে যায়৷ যে বড় কোম্পানিগুলি সেই দুধ প্রক্রিয়াজাত করে, চাষিদের বদলে তারাই মুনাফা করে৷ আন্দ্রিয়ানা মোয়র-এর খামারের তাজা দুধ এক কারখানায় গুঁড়া দুধে পরিণত হয়৷

আলেহান্দ্রো শিলিং-এর খামার প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে৷ তিনিও জার্মান বংশোদ্ভূত৷ ১,২০০ গরু নিয়ে তাঁর খামার এলাকার অন্যতম বড় হিসেবে পরিচিত৷ তাঁর মতে, দুধ বেচে মুনাফা করতে চাইলে খামার আরও বড় করতে হবে৷ আলেহান্দ্রো বলেন, ‘‘আমার কাছে জ্বালানি সাশ্রয়ের বিষয়টি আয়ের সঙ্গে যুক্ত৷ আমি চিরকাল যেখানে সম্ভব সঞ্চয়ের চেষ্টা করে গেছি৷ সে জ্বালানি হোক বা অন্য কিছু৷ ব্যবসা করলে লাভ তো করতেই হবে৷''

কয়েক বছর আগে আলেহান্দ্রো এক বড় মিল্কিং প্লান্টে বিনিয়োগ করেন৷ তার মূল্য ছিল প্রায় ১০ লক্ষ ইউরো৷ তার সাহায্যে এক এক বারে প্রায় ৪০০ গরুর দুধ দোওয়া সম্ভব৷ ফলে কর্মী ও জ্বালানির সাশ্রয় করা সম্ভব৷

আধুনিক ভ্যাকুয়াম পাম্প দুধ দোওয়ার প্রক্রিয়া আরও উন্নত করে তোলে৷ তবে শিলিং-এর আসল গর্ব হলো এই প্লান্টের প্রি-কুলিং সিস্টেম৷ সে বিষয়ে তিনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলতে পারেন৷ আলেহান্দ্রো বলেন, ‘‘এই ফিল্টারের সাহায্যে দুধ গোয়াল থেকে আসে৷ তারপর তা এই প্লেট কুলারে যায়৷ ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় আসার পর ১০ ডিগ্রি ঠান্ডা পানি সেই দুধ শীতল করে৷ তারপর গরম পানি বেরিয়ে দুধের তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রিতে নামিয়ে দেয়৷''

এ ভাবেও তিনি অনেক অর্থ বাঁচাতে পারেন৷ আলেহান্দ্রো শিলিং আরও বিনিয়োগ করতে চান৷ জার্মানি-চিলি বাণিজ্য চেম্বারের আনিকা শ্যুটলার ও তাঁর টিম খামার পরিদর্শনে এসেছেন৷ তাঁরা জ্বালানি সাশ্রয় ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি নিয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকেন৷ আনিকা বলেন, ‘‘চিলির দক্ষিণের আবহাওয়ার সঙ্গে জার্মানির আবহাওয়ার বেশ মিল রয়েছে৷ এখানে ভালই রোদ ওঠে, তবে অনেক বৃষ্টিও হয়৷ ফটোভোল্টাইক প্রযুক্তি একটি বিকল্প হলেও জলশক্তি আরও কার্যকর হতে পারে৷ এখানে ছোট এক জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার পরিবেশ আছে কিনা, তা আমরা খতিয়ে দেখছি৷''

দাম নিয়ে রফা হলে আগামী বছরই ছোট এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হতে পারে৷

লিন্ডা ফিয়ারএকে/এসবি