জার্মানিতে বড়দিনের উৎসব পালন
যে-কোনো উৎসব মানেই আনন্দ আর তা সবার জন্যই৷ চলুন এই ছবিঘরের মধ্য দিয়ে জানা যাক কে কিভাবে উৎসবের আনন্দ গ্রহণ করে৷
ক্রিসমাস ট্রি
যে-কোনো উৎসব মানেই হৈচৈ, আনন্দ, উপহার, কেনাকাটা, খাওয়া-দাওয়া৷ তবে তা যদি হয় ধর্মীয় কোনো উৎসব তাহলে স্বাভাবিকভাবে সবকিছুর মাত্রা খানিকটা বেড়ে যায়৷ জার্মানিতে বড়দিনের উৎসব নানাজনে নানাভাবে উদযাপন করে৷ বেশিরভাগ মানুষই অতি যত্নে ক্রিসমাস ট্রি সাজান৷ আর সবাই অপেক্ষা করে থাকে ক্রিসমাস ট্রির নীচে রাখা উপহারের জন্য৷
আস্ত মাছ ভাজি
যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিন ২৪ ডিসেম্বর রাতে৷ তাই এ রাতকে পবিত্র রাত বলা হয় অর্থাৎ তখন থেকে বড়দিনের মূল উৎসব শুরু হয়ে যায়৷ জার্মানিতে সেদিন রাতে পুরনো ঐতিহ্য অনুযায়ী মাছ খাওয়া হয়, বিশেষ করে কারফেন মাছ, তবে সব অঞ্চলে নয়৷ আস্ত মাছটি ওভেনে বেক করে পরে কেটে কেটে পরিবেশন করা হয়৷ এবং এ রাতেই উপহারগুলো সুন্দর প্যাকেটে ভরে ক্রিসমাস ট্রির নীচে সাজিয়ে রাখা হয়৷
রাজহাঁসের রোস্ট
বড়দিন পারিবারিক উৎসব৷ তাই যারা পরিবার থেকে দূরে থাকে তারা উৎসবের দিনগুলো একসাথে উদযাপন করতে চায়৷ খাবারের আয়োজন হয় বেশ ঘটা করে৷ সেদিন খাওয়া হয় বিশাল আকারের ওভেনে রোস্ট করা রাজহাঁস৷ এর জন্য রয়েছে বিশেষ রেসিপি৷ রাজহাঁসের পেটের ভেতরে যে মশলা বা পুর ভরা হয় তার ওপরই নির্ভর করে রাজহাঁসের রোস্টের স্বাদ৷
ক্রিসমাসের দ্বিতীয় দিন
আয়োজনের দিক থেকে এই দিনটিও অনেকটা ২৫ তারিখের মতো৷ তবে যাদের পরিবারের বেশিরভাগ মানুষ কাছাকাছি থাকেন তারা সাধারণত দুদিন দু বাড়িতে যান, অর্থাৎ একদিন মা-বাবার বাড়ি আর পরের দিন শ্বশুর বাড়ি৷ অথবা একদিন নিজেরা যায়, পরের দিন অন্যরা আসে৷ তবে দুদিনই খাবারের আয়োজনে থাকে উৎসবের ছোঁয়া৷ অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি প্রচুর মিষ্টি খাবারও থাকে৷ বিশেষ ধরণের কেক, বিস্কুট কত কি!
উপহার
বড়দিন উপলক্ষ্যে প্রিয়জনদের পছন্দের উপহার দেয়ার জন্য আগে থেকে টাকাও জমিয়ে রাখেন৷ জার্মানিতে একটা রীতি বেশ প্রচিলিত, বড়দিন উপলক্ষ্যে কি পেতে চান বা কি প্রয়োজন তেমন একটি তালিকা তৈরি করে রাখেন এবং সেটা দেখেই পরিবারের অন্যরা উপহার কিনে আনেন৷ যদি কারো পছন্দ না হয়, বদল করে আনার সুবিধার্থে কেনার রশিদটিও সাথে দিয়ে দেয়৷ বলা যায়, বাড়ির বাচ্চারা ওদের নানু-দাদুর কাছ থেকে সবচেয়ে দামি উপহারটি পেয়ে থাকে৷
তরুণ প্রজন্ম
জার্মানরা ঐতিহ্যপ্রিয়, তবে তা এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের ব্যাপারে তেমন লক্ষ্য করা যায় না৷ ওরা অনেকেই এতো ঝামেলায় যেতে চায় না৷ তারা ঐতিহ্যবাহী খাবারের চেয়ে হালকা বা সহজ উপায়ে তৈরি খাবারই বেশি পছন্দ করে থাকে৷ যেমন বিদেশি খাবার রাকলেট বা ফনড্যু৷ যা আগে থেকে তৈরি বা প্রস্তুত না করে অতিথি আসার পরে একসাথে বসে ঝটপট করে ফেলা যায় এবং গরম গরম খাওয়া যায়৷
শীতকালীন হলিডে
অনেক জার্মান বড়দিনের ঝামেলায় না যেয়ে চলে যান অন্য কোথায়ও ছুটি কাটাতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে৷ জার্মানিতে এখনো তুষারপাত হয়নি৷ কাজেই এবারও ‘সাদা বড়দিন’ হচ্ছে না৷ তাই একসাথে কয়েকদিন ছুটি থাকায় অনেকেই স্কিয়িং করতে চলে যায় সুইজারল্যান্ড বা অস্ট্রিয়ার কোনো পর্বতমালায়৷
চলো যাই গরমের দেশে
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সারা বিশ্বের আবহাওয়ায় এসেছে বিরাট পরিবর্তন৷ জার্মানি শীতপ্রধান দেশ৷ বছরের এ সময়ে যতটা শীত পড়ার কথা তত শীত না পড়লেও যথেষ্টই শীত৷ গত বছরও ছিলো প্রচণ্ড ঠান্ডা৷ তাই এই শীত থেকে পালাতে অনেকেই বড়দিনের ছুটিতে এমন কোনো দেশে চলে যায় যেখানে হালকা পাতলা পোশাক পরে যথেষ্ট সূর্যের তাপ গ্রহণ করা সম্ভব৷ শীতের বাকি দিনগুলোর জন্য রিজার্ভে রেখে দিতে পারে প্রচুর ভিটামিন ‘ডি’৷
বড়দিনে বিদেশিরা কি করেন?
আজকের এই বিশ্বায়নের যুগে কোনো উৎসবই আর শুধু নিজস্ব উৎসব হিসেবে নেই৷ জার্মানিতে ৪০ লাখেরও বেশি মুসলমানের বসবাস৷ তাছাড়া অন্যান্য ধর্মের মানুষও রয়েছেন৷ তারাও ছুটির দিনগুলোতে পরিবার বা বন্ধুবান্ধবদের সাথে মিলিত হন, খাওয়া-দাওয়া করেন৷ করেন উপহার আদান-প্রদান৷ আসলে ‘ধর্ম যার যার হলেও উৎসব কিন্তু সবার’ – এই রীতিই মানুষের মাঝে লক্ষ্য করা যায়৷ অনেক বিদেশির বাড়িতেও মোমবাতি বা আলোকসজ্জা দেখা যায়৷