1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিতে শিশুর যৌন নিপীড়কদের বিচার শুরু

১৭ জুন ২০১৮

জার্মানিতে একটি শিশুর ওপর ধারাবাহিক যৌন নির্যাতনের ঘটনা তোলাপাড় তুলেছে৷ আর এর সাথে জড়িত থাকায় শিশুটির মা এবং তার প্রেমিকের বিচার শুরু হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/2zdZo
Ein Stoff-Teddy liegt auf dem Boden, Symbolfoto Kindheitstrauma und Gewalt Kindesmissbrauch in Deutschland
ছবি: picture alliance/dpa

শিশু নির্যাতনের এই ঘটনায় কর্তৃপক্ষের যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ার ব্যাপারেও কেউ কেউ অভিযোগের আঙুল তুলেছেন৷

গেল সপ্তাহে জার্মানির আদালত তদন্তকারীদের হাতে আটক শিশুটির মা ও তার প্রেমিকের বিরুদ্ধে ৫৫টি ঘটনার ১০০ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র পড়ে শোনান৷ এর মধ্য দিয়ে ঘটনার জন্য দুই প্রধান অভিযুক্তের বিচার শুরু হলো৷

এ বছরের জানুয়ারিতে ইন্টারনেটের ডার্ক ওয়েবসাইটগুলোতে যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে তদন্তে নামার পর জার্মানির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ফ্রয়েরবুর্গ শহরের কাছে স্টাউফেন এলাকায় ৯ বছর বয়সি ওই বালকের ওপর যৌন নিপীড়নের ব্যাপারটির সত্যতা পান তদন্তকারীরা৷    

অভিযোগপত্রে বলা হয়, শিশুটির ৪৮ বছর বয়সি মা বেরিন টি-র সহায়তা নিয়ে তার প্রেমিক ৩৯ বছর বয়সি ক্রিশ্চিয়ান ল যৌন নিপীড়ন চালিয়েছে শিশুটির ওপর৷ এর সাথে আরও বেশ কয়েক ব্যক্তিও জড়িত ছিল৷ এক পর্যায়ে ছেলে শিশুটিকে ধর্ষণ ও নিপীড়নের ভিডিও ডার্ক নেটে ছাড়া হয়৷  

ডার্ক নেট হচ্ছে এমন এক ইন্টারনেট ব্যবস্থা, যাতে বিশেষ সফটওয়্যার ছাড়া ঢোকা সম্ভব নয়৷

শিশুটির মা বেরিন এবং প্রেমিক ক্রিশ্চিয়ান ল কেবল শিশুটির ওপর নির্যাতনচালিয়েই থেমে যায়নি৷ ডার্ক নেটের মাধ্যমে যৌনাচার করতে আগ্রহীদের কাছেও অর্থের বিনিময়ে তারা শিশুটিকে যৌনসঙ্গী হতে বাধ্য করেছেন নানাভাবে৷

জার্মান পত্রিকা জুডডয়েচেস সাইটুং জানিয়েছে, এর আগেও ক্রিশ্চিয়ান ল ২০০৫ সালে তার কম্পিউটার ও মোবাইল ফোনে শিশুদের পর্নোগ্রাফি থাকার কারণে এক বছরের সর্তকতামূলক শাস্তি পেয়েছিলেন৷ ২০১০ সাল ১৩ বছর বয়সি এক নাবালিকাকে যৌন হয়রানি করায় চার বছর জেল খাটতে হয় তাকে৷

দুই ক্ষেত্রেই ক্রিশ্চিয়ানকে মানসিক চিকিৎসা নেওয়ার কথা বলা হয় এবং সে তাতে রাজি হয়৷ ২০১৪ সালে ক্রিশ্চিয়ান যখন কারাগার থেকে ছাড়া পায়, তখনও সে মানসিক বিকারগ্রস্ত ছিল এবং তাকে আইন কর্তৃপক্ষ সতর্ক করেছিল শিশুদের সাথে মেলামেশার ব্যাপারে৷

বলা হয়েছিল, ক্রিশ্চিয়ান তখনই কোনও শিশুর সাথে সাক্ষাৎ করতে পারবেন যখন ওই শিশুর বাবা-মা অথবা আইনগত অভিভাবক উপস্থিত থাকবে৷

২০১৭ সালের মার্চ মাসে একজন পুলিশ কর্মকর্তা যখন বলেন, ক্রিশ্চিয়ান যৌন নিপীড়নের শিকার ওই শিশুটির সাথে একই ফ্ল্যাটে বসবাস করছেন, তখন শিশুটিকে রাষ্ট্রীয় হেফাজতে নেওয়া হয়৷ কিন্তু শিশুটির মা বেরিন ওই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা করলে তাকে আবার রাষ্ট্রীয় হেফাজত থেকে বাড়িতে পাঠানো হয়৷ আদালতের আদেশ উপেক্ষা করেই ক্রিশ্চিয়ান ল ওই শিশুটির সাথে যোগাযোগ রাখতে শুরু করে৷

স্থানীয আদালত এবং ইউথ ওয়েলফেয়ার অফিসের বিরুদ্ধে এ জন্য দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ আনা হয়েছে৷

কিন্তু ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে যখন ফেডারেল পুলিশ অফিসের কাছে ৯ বছর বয়সি শিশুটিকে যৌন নিপীড়নের ব্যাপারে বেনামি একটি বার্তা আসে, তখন ক্রিশ্চিয়ান ল এবং বেরিন টিকে গ্রেপ্তার করে জোর তদন্তে নামা হয়৷

কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তারা নিপীড়কদের আরও ছয়জনকে শনাক্ত করে ফেলে৷ ফলে শিশুটির যৌন নিপীড়নকারীদের সংখ্যা দাঁড়ায় আট৷ তারা প্রত্যেকেই পৃথকভাবে শিশুটিকে যৌন নিপীড়ণন করেছেন বা সেই চেষ্টায় জড়িত ছিলেন৷ এদের কেউ কেউ ইতোমধ্যে বিচারের সম্মুখীন হয়েছেন৷

৪১ বছর বয়সি এক জার্মানকে মধ্য এপ্রিলে ধর্ষণ এবং ওই শিশুটির ওপর নিদারুণ যৌন নিপীড়ন চালানোর অভিযোগে দশ বছরের জেল দেওয়া হয়৷ 

জার্মান সেনাবাহিনীর একজন ৫০ বছর বযসি সিপাহীকে ওই বালককে দুইবার ধর্ষণ এবং তার পর্নোগ্রাফিক ভিডিও অনলাইনে প্রকাশ করার অভিযোগে ৮ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়৷

এছাড়া অপর এক সুইস নাগরিক জুনের প্রথম সপ্তাহে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে অপরাধ স্বীকার করে বলেন, শিশুটির প্রতি মোট তিনবার যৌন নিপীড়ন চালিয়েছেন তিনি৷ আর এজন্য তার দিতে হয়েছে ৫০ ইউরো এবং শিশুটিকে একটি চিজ বার্গার এবং একটি ব্যবহৃত কম্পিউটার৷ 

গেল সোমবার ৪৪ বছর বয়সি আরও একজন জার্মান নাগরিকের বিচার শুরু হয়েছে৷ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ডার্ক নেটে ক্রিশ্চিয়ান ল-কে শিশুটিকে যৌন নিপীড়নের পর হত্যার প্রস্তাব দিয়েছিল সে৷

দুই বছর ধরে স্টাউফেনের ওই বালকের ওপর চলা নিপীড়ণের ভয়ঙ্কর সব তথ্য বেরিয়ে আসছে৷ আর এর মধ্য দিয়ে ওই বালকের নিরাপত্তার ফাটলগুলোও জনসমক্ষে আসছে৷

রেবেকা স্টাউডেনমায়ার /এইচআই