1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইথিওপিয়ার মেয়েদের জন্য ‘টিবেব গার্লস’

৭ ডিসেম্বর ২০১৭

ইথিওপিয়ায় কমবয়সি মেয়েদের জন্য একটি কমিক সিরিয়াল তৈরি করে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছেন এক নার্স, যিনি পেশায় আজ সমাজ সংস্কারক তথা টেলিভিশন প্রযোজক৷

https://p.dw.com/p/2oplJ
‘টিবেব গার্লস’এর চরিত্রছবি: Bruktawit Tigabu

আদ্দিস আবাবার বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রীদের ‘টিবেব গার্লস’ কমিক সিরিজের প্রথম এপিসোডটি দেখানো হচ্ছে৷ আমহারিক ভাষায় টিবেব কথাটির অর্থ হল জ্ঞান বা বিজ্ঞতা৷ সিরিয়ালটিতে তিনজন অতি বুদ্ধিমতী নায়িকা মেয়েদের সমানাধিকারের জন্য লড়াই করছে৷

‘টিবেব গার্লস’-এর স্রষ্টা ব্রুকটাউইট টিগাবু জানালেন, ‘‘ইথিওপিয়ার প্রতি পাঁচটি মেয়ের মধ্যে একজনের ১৫ বছর বয়স হবার আগেই বিয়ে হয়ে যায় আর তাদের অধিকাংশই আর কখনো স্কুলে ফিরে আসে না৷ এর অর্থ, তারা জীবনে সফল হবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়৷’’

‘টিবেব গার্লস’ এই পরিস্থিতি বদলাতে চায়৷ প্রোগ্রামটির উদ্ভাবকরা চান যে, ছোট ছোট মেয়েরা সিরিয়ালটির মধ্যে নিজেদের আশা-আকাঙ্ক্ষা-বেদনাকে খুঁজে পাক৷ কাজেই পাইলট এপিসোডগুলি প্রথমে স্থানীয় স্কুলগুলিতে দেখিয়ে যাচাই করা হয়, মেয়েদের সেটা ভালো লাগল কিনা৷ প্রকল্পের কর্মী ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ের ছাত্রী রুথ ইটবারেক জানালেন, ‘‘আমরা ইথিওপিয়ার বিভিন্ন এলাকায় একই কাজ করছি৷ সেখানেও দেখা যায় অনেক মেয়ে কাঁদছে, কেননা তারা জানে সিরিয়ালের মেয়েটি কী কষ্ট সহ্য করেছে৷ আর তারা সেটা জানে বলেই, তার সঙ্গে একাত্ম বোধ করে৷’’

আশার আলো দেখাচ্ছে কমিক সিরিয়াল

সিরিয়াল দেখার পর মেয়েদের লিখে রাখতে হয়, তাদের কী ভালো লেগেছে অথবা লাগেনি, আর গল্পটা কীভাবে এগোলে তাদের ভালো লাগবে৷ ১২ বছর বয়সের এডলাউইট বলল, ‘‘আমার খুব ভালো লেগেছে, কেননা সিরিয়ালটা মেয়েদের সমস্যা নিয়ে৷ আমি এরকম আগে কখনো দেখিনি৷’’

কমবয়সি মেয়েদের দুরবস্থা আর উপেক্ষা করতে পারেননি

‘টিবেব গার্লস’-এর স্রষ্টা হলেন ব্রুকটাউইট টিগাবু৷ পেশায় নার্স হলেও তিনি বলেন যে, তিনি ইথিওপিয়ায় কমবয়সি মেয়েদের দুরবস্থা আর উপেক্ষা করতে পারেননি৷ তিনি শোনালেন সেই কাহিনী: ‘‘কাজেই আমি ভাবলাম, আমি এতো বড় সমস্যাটার সমাধান করব কী করে? স্বভাবতই আমি সর্বত্র কিন্ডারগার্টেন তৈরি করতে পারি না; কাজেই আমি ভাবতে শুরু করলাম – কীভাবে আমি আমার দেশের লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়েদের কম খরচে উচ্চমানের শিক্ষা দিতে পারি৷’’

ব্রুকটাউইট ইতিমধ্যেই তিনটি সফল রেডিও ও টেলিভিশন সিরিজ প্রযোজনা করেছেন, যেগুলি ইথিওপিয়া জুড়ে ছেলেমেয়েদের জ্ঞান বাড়িয়েছে, কিন্তু সেই সঙ্গে মজাও দিয়েছে৷ ‘টিবেব গার্লস’ আরেকটি সফল সিরিজ হয়ে সামাজিক বাধানিষেধকে চ্যালেঞ্জ করবে বলে তাঁর আশা৷ তিনি জানেন, ‘টিবেব গার্লস'-এর সাফল্যের কারণ কি:-

‘‘আমরা শিশু বিবাহ নিষেধের মতো কড়া বিষয় দিয়ে শুরু করেছি বটে – কিন্তু কার্টুনের একটা আশ্চর্য ক্ষমতা আছে৷ কার্টুন বলে, ও গল্পকাহিনি বলে, মানুষ তা দূর থেকে দেখতে পারে, তা নিয়ে স্বচ্ছন্দে কথা বলতে পারে – আর সেটাই আমরা চাই৷ বিষয়টি নিয়ে কথা বলা হল প্রথম পদক্ষেপ৷’’

তবে তিনি স্বীকার করলেন যে, ‘‘মাঝেমধ্যে আমি হতাশ হয়ে পড়ি৷ এটুকু করতে আমার দশ বছর লাগা উচিৎ হয়নি, আমার আরো বেশি শিশুর কাছে পৌঁছানো উচিৎ ছিল, এতোদিনে আমার গোটা পূর্ব আফ্রিকা ছেয়ে ফেলা উচিত ছিল – এতো দেরি হয়ে যাওয়ার কারণ বড় বেশি আমলাতন্ত্র, পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, দৈনন্দিন নানা বাধাবিপত্তি৷’’

টিভি প্রোগ্রামগুলি ডিস্ট্রিবিউট করা খুবই শক্ত আর অর্থবলও বেশি নেই৷ সামাজিক উদ্যোগ ইথিওপিয়ায় আজও প্রচলিত নয়৷ ব্রুকটাউইট-এর ভাষ্যে: ‘‘সরকারের নীতি আমাদের সাহায্য করে না, কেননা আমাদের আজও ব্যবসায়ী বলে গণ্য করা হয়৷ কাজেই আমাদের একই রকম কর দিতে হয় – যার অর্থ, আমাদের ভেবেচিন্তে বিনিয়োগ করতে হয়৷ আমাদের সামর্থ্য কম, কিন্তু কর্তব্য অনেক৷’’

কিন্তু ‘টিবেব গার্লস’-এর পেছনে যে দলটি রয়েছে, তার সদস্যরা সাহসী ও অনুপ্রাণিত৷ বাধা দেখলে হাল ছাড়ার পাত্র তারা নন৷ টিভি সম্প্রচারকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলেছে৷

এফা বায়ার/এসি