1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ডুইসবুর্গে জার্মানির সবচেয়ে বড় মসজিদ

আরাফাতুল ইসলাম৩১ অক্টোবর ২০০৮

ডুইসবুর্গ৷ জার্মানির অন্যতম বাণিজ্যিক শহর৷ জার্মানদের পাশাপাশি এই শহরের একটি বড় অংশ জুড়ে বসবাস করে তুর্কী বংশোদ্ভুত মুসলমানরা৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিভিন্ন সময়ে জার্মানিতে পাড়ি জমিয়েছে এই তুর্কীরা৷

https://p.dw.com/p/FlIG
জার্মানির সবচেয়ে বড় মসজিদছবি: AP

দিনে দিনে মিশে গেছে জার্মানদের সঙ্গে৷ কিন্তু তারপরও কোথাও যেন একটি অদৃশ্য দেয়াল লক্ষ্য করা যায় সবসময়৷ বিশেষ করে সমাজের মূলধারার সঙ্গে তুর্কীদের সংযুক্ত করার ক্ষেত্রে রয়েছে ফাঁরাক৷

আর সেই ফাঁরাকের এক অন্যতম কারণ ধর্ম চর্চা৷ তুর্কীরা চায় ধর্ম চর্চার ক্ষেত্রে স্বাধীনতা৷ প্রয়োজনীয় মসজিদ৷ সেই চাওয়া থেকেই সম্ভবত জার্মান সরকার জার্মানির বিভিন্ন স্থানে তৈরি করতে শুরু করেছে মসজিদ৷ এই যেমন গত ২৬শে অক্টোবর ডুইসবুর্গ শহরে উদ্বোধন করা হলো জার্মানির সবচেয়ে বড় মসজিদের৷ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কয়েক হাজার সাধারণ মানুষ জড়ো হয়েছিলো নয়নাভিরাম মসজিদটি দেখতে৷ হাতে লাল গোলাপ, পরনে বোরখা, কেউবা আধুনিক জিন্স সঙ্গে হেজাব৷ শুভেচ্ছার লাল গোলাপ দেখা গেছে অধিকাংশ তুর্কী নারীর হাতে৷ আর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুটাও হয়েছিলো পবিত্র আল-কোরআন এর বানী দিয়ে৷

Deutschland Duisburg Merkez Moschee eingeweiht
সম্পূর্ণ মসজিদটি তৈরিতে সময় লেগেছে তিন বছরের মতো৷ খরচ হয়েছে ৭৫ লক্ষ ইউরো৷ছবি: AP

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি৷ ইসলাম ও খ্রিষ্টধর্মের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের মধ্যে আমন্ত্রিত ছিলেন তুরস্কের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সর্বোচ্চ ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের সভাপতি আলী বার্দাকোগলু৷ ছিলেন জার্মানির নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ইয়ুর্গেন রুটগার্সও৷ তিনি জানালেন, আমাদের গণতন্ত্র এবং আমাদের দেশের জন্য কে খ্রিষ্টান, কে মুসলমান বা কে ইহুদি - এটা মোটেই গুরুত্বপূর্ণ নয়৷ আমাদের দেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল - আমাদের ভবিষ্যত্ কী হবে, আমাদের অস্তিত্বের ভিত্তি কী হবে, নাগরিক হিসেবে আমাদের পরস্পরের মধ্যে যোগসূত্র কী হবে৷ আমাদের সংবিধান এক্ষেত্রে সবার জন্য সুন্দর এক পথ খুলে দিয়েছে৷

চলুন নজর দেই মসজিদটির দিকে৷ ডুইসবুর্গের এই মসজিদে একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারবেন ১২০০ মুসল্লী৷ আর শুধু পুরুষ নয় এই মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারবেন নারীরাও৷ মসজিদটির আযান দেবার মিনারের উচ্চতা ৩৪ মিটার৷ আর ভেতরে নানান কারুকার্য দিয়ে লেখা রয়েছে আল্লাহর নাম ও পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন বানী৷ আর এই কারুকার্যে ব্যবহার করা হয়েছে স্বর্ণসহ বিভিন্ন দামী উপাদান৷ এছাড়া রয়েছে ঝাড়বাতি আর কারুকার্যগুলোকে ফুটিয়ে তুলতে বিশেষ আলোকসজ্জা৷ সম্পূর্ণ মসজিদটি তৈরিতে সময় লেগেছে তিন বছরের মতো৷ খরচ হয়েছে ৭৫ লক্ষ ইউরো৷ নামাজ পড়ার স্থানের পাশাপাশি মসজিদটিতে রয়েছে তথ্য কেন্দ্র, হলরুম, আবাসন এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের ব্যবস্থা৷ নয়নাভিরাম এই মসজিদ দেখে কি অনুভুতি জাগছে মনে? জানতে চেয়েছিলাম তুর্কী তরুণ সেলিম এর কাছে৷ তিনি বলেন, এটা আমার জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্ত৷ শুধু জার্মানি নয় এটা ইউরোপেরও অন্যতম বৃহত্‌ একটি মসজিদ৷ ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে অধিকাংশ ইউরোপীয় মনে করে আমরা খারাপ৷ এই মসজিদ তাদেরকে ধারণা দেবে যে মুসলমানরা খারাপ নয়৷ যা আমাদের জন্য খুবই ভালো৷

জার্মানির বিভিন্ন শহরে মসজিদ নির্মাণকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় প্রতিবাদ বিক্ষোভ দেখা গেছে৷ কিন্তু ডুইসবুর্গের এই মসজিদ উদ্বোধনের সময় কোন ধরনের প্রতিবাদ দেখা যায়নি৷ বরং অনেক জার্মান উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে মসজিদের প্রতি তাদের সমর্থনই যেন প্রকাশ করলেন৷ ডুইসবুর্গের যে এলাকায় মসজিদটি তৈরি হয়েছে, সেখানকার এক জার্মান নাগরিক বললেন, আমাদের এই এলাকায় চমত্‌কার এক উপাসনালয় গড়ে তোলা হয়েছে৷ প্রতিবেশী হিসেবে আমরাও এই এলাকার সঙ্গে জড়িত৷ এটা আমার বেশ ভাল লাগছে৷ যখন সকলে মিলে কাজ করে এবং সবাই একই উদ্যোগে অংশ নেয়, তখন শেষ পর্যন্ত তার ফল বেশ ভালই হয়৷

নতুন মসজিদ পেয়ে স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বাসিত তুর্কী বংশোদ্ভুতরা৷ ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজিতে উপচে পড়া সেই উচ্ছ্বাসের কথা জানালো তুর্কী তরুণী ফাতমা৷ ডয়চে ভেলেকে বললো, এই মসজিদটি খুবই ভালো৷ কারণ আমি একজন মুসলিম৷

ইসলাম বিশেষজ্ঞদের প্রত্যাশা, নতুন এই মসজিদ ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে জার্মানদের সঠিক জ্ঞানদানে সহায়তা করবে৷ একইসঙ্গে তুর্কীদের সঙ্গে জার্মানদের বিভাজনের রেখা অনেকটাই কমিয়ে আনতে পারে এই মসজিদ৷