1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

৯৫ শতাংশ শিশুর শরীরে নিকোটিন!

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৫ ডিসেম্বর ২০১৭

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার ৯৫ ভাগ শিশুর শরীরে ক্ষতিকর নিকোটিনের উপস্থিতি পাওয়া লক্ষ্য করা গেছে৷ এই নিকোটিনের উপস্থিতির কারণ পরোক্ষ ধূমপান৷ প্রধানত পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের ধূমপানের প্রভাবেই শিশুরা নিকোটিনের শিকার হচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/2pRnh
Aschenbecher
ছবি: Colourbox/S. Chetanachan

‘সেকেন্ডহ্যান্ড স্মোক এক্সপোজার ইন প্রাইমারি স্কুল চিলড্রেন: আ সার্ভে ইন ঢাকা, বাংলাদেশ' শিরোনামে এই গবেষণাটি যৌথভাবে পরিচালনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্ক, ইউনিভার্সিটি অফ এডিনব্যার্গ এবং লিডস সিটি কাউন্সিলের জনস্বাস্থ্য বিভাগ৷

ঢাকার মিরপুর এবং সাভারের মোট ১২টি স্কুলে ৪৭৯টি শিশুর ওপর এই গবেষণা পরিচালনা করা হয়৷ তাদের অধিকাংশের বয়স ছিল ১১ থেকে ১৩ বছরের মধ্যে৷ দু'ভাবে শিশুদের তথ্য নেয়া হয়৷ প্রথমত শিশুদের লালা সংগ্রহ করা হয়৷ সেই লালা বিশেষ ব্যবস্থায় যুক্তরাজ্যে পাঠানো হয়৷ যুক্তরাজ্যের এবিএস ল্যাবে লালা পরীক্ষা করা হয়৷ তারপর আর তাদের প্রশ্ন করে তথ্য সংগ্রহ করা হয়৷

ড. রুমানা হক

গবেষণায় দেখা যায়, ঐ শিশুদের ৪৫৩ জনের শরীরে উচ্চমাত্রার নিকোটিন আছে, যা শতকরা হিসেবে ৯৫ ভাগ৷ এই শিশুদের ২২০ জন ছেলে এবং ২৩৩ জন মেয়ে৷ এদের মধ্যে মাত্র ২৬ জনের শরীরে নিকোটিনের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি৷

গবেষণা দলের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই শিশুদের কেউই ধূমপায়ী নয়৷ তাদের শরীরে আমরা ০ দশমিক ১ মাত্রার বেশি নিকোটিন পেয়েছি, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর৷ এ সমস্ত শিশুরা আসলে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার৷ তারা যদি নিজেরা ধূমপায়ী হতো, তাহলে নিকোটিনের মাত্র আরো বেশি হতো৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘এই শিশুদের প্রশ্ন করে আমরা জেনেছি যে তাদের পরিবারের কেউ না কেউ বাসায় ধূমপান করেন৷ বাসায় বসে ধূমপান করলে বাসায় অন্য যাঁরা থাকেন, তাঁদের শরীরেও নিকোটিন প্রবেশ করে৷ এমনকি আলাদা রুমে ধূমপান করলেও ধোঁয়া অন্য রুমে  ছড়িয়ে পড়ে৷ এমনকি জানালার পর্দা, সোফার কাভার, কাপড়-চোপড়ে নিকোটিন লেগে যায়৷ শতকরা ৪৩ ভাগ শিশু বলেছে যে তাদের ঘরে অন্তত একজন ধূমপান করেন৷''

এর বাইরে রাস্তায়, বাসে, দোকানে, হোটেলে অনেকেই ধূমপান করেন৷ সেখান থেকেও শিশুরা পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়৷ ৮৭ ভাগ শিশু জানায় যে তারা ‘পাবলিক প্লেস'-এ বহু মানুষকে ধূমপান করতে দেখেছে৷

ডা. লেনিন চৌধুরী

এই গবেষক জানান, ‘‘বাংলাদেশে প্রকাশ্যে ধূমপান শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলেও, অনেকেই ‘পাবলিক প্লেস' বিষয়টি ঠিক বোঝেন না৷ আবার অনেকে সচেতনও নন৷''

এই গবেষণার এখন দ্বিতীয় পর্যায় চলছে৷ সেখানে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার এই শিশুদের ওপর কী ধরনের শারীরিক প্রতিক্রিয়া হয়, তা জানার চেষ্টা করা হবে৷ প্রশ্নোত্তরের মাধ্য ১৩টি উপসর্গ সম্পর্কে জানা হবে৷ তার শ্বাসকষ্ট, সকালে কাশি হয় কিনা, তার কাজকর্ম বা দৌড়াতে কষ্ট হয় কিনা হত্যাদি৷ অধ্যাপক রুমান হক বলেন, ‘‘আমরা শিশুদের ‘ব্রিদিং টেস্ট' করেছি৷ এখন সেটা ‘এনালাইজ' করে দেখা হচ্ছে৷''

‘প্রিভেনটিভ মেডিসিন'-এর বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘নিকোটিন একটি বিষাক্ত পদার্থ৷ এটা ফুসফুসের ক্যান্সারের জন্য দায়ী৷ তবে প্রাথমিকভাবে এর প্রকাশ ঘটে শ্বাসকষ্টের মাধ্যমে৷ এছাড়া নিকোটিনের কারণে খাদ্য পরিপাক তন্ত্রের স্বাভাবিক কাজ ব্যহত হয়, নারী-পুরুষ উভয়ের প্রজনন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়৷ কিডনির ক্ষতি করে এবং আসক্তি তৈরি করে যা মানুষের স্বাভাবিক আচরণকে প্রভাবিত করে৷''

তিনি বলেন, ‘‘শিশুদের ওপরও নিকোটিনের প্রভাব একই৷ তাদের শরীরে নিকোটিন প্রবেশ করলেও তারাও একই ক্ষতির মুখে পড়ে৷''

এমনকি ড. রুমানা হকের কথায়, ‘‘বাইরে থেকে ধূমপান করে হাত-মুখ না ধুয়ে শিশুদের সংস্পর্শে গেলেও শিশুরা নিকোটিনের শিকার হয়৷''

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘এই গবেষণার জন্য শিশুদের লালা পরীক্ষার যন্ত্রপাতি হয়ত বাংলাদেশে পাওয়া যেত, কিন্তু দক্ষ জনবল না থাকায় আমরা পরীক্ষাটি দেশের বাইরে করিয়েছি৷''

বিশ্বের ৪০ শতাংশ শিশু পরোক্ষ ধূমপানের শিকার৷ কিন্তু রাজধানী ঢাকায় এই হার এত বেশি (৯৫ ভাগ) কেন? এই প্রশ্নের জবাবে রুমানা হক বলেন, ‘‘বাংলাদেশে ধূমপায়ীর হারও অনেক বেশি৷ এছাড়া সচেতনতার অভাবে এখানে শিশুদের এড়িয়ে ধূমপান করার প্রবণতা কম৷ আমাদের এই গবেষণায় হয়ত পুরো বাংলাদেশের চিত্র উঠে আসেনি৷ কিন্তু আমরা মনে করি, সারা বাংলাদেশেই এখন একটা সার্ভে হওয়া প্রয়োজন৷ তাতে হয়ত প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে৷ কিন্তু আমাদের এই গবেষণায় যে চিত্র পাওয়া গেছে, তা ভয়াবহ৷''

গত ৭ ডিসেম্বর গবেষণাটি যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড থেকে প্রকাশিত ‘নিকোটিন অ্যান্ড টোব্যাকো রিসার্চ' সাময়িকীতে এই গবেষণা প্রতিবেদনটি ছাঁপা হয়৷ অধ্যাপক ড. রুমানা হকের সঙ্গে আরো যাঁরা গবেষণায় অংশ নেন তাঁরা হলেন – সারোয়াত শাহ. মোনা কানান, আজিজ শেখ, ওমারা ডোগার, হিদার থমসন, স্টিভ প্যারোট এবং কামরান সিদ্দিকী৷

বন্ধু, আপনার শিশুও নিকোটিনের শিকার নয় তো? লিখুন নীচের ঘরে৷