1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
স্বাস্থ্য

তামাক ও ঠান্ডা পানীয়ের কারণে পশ্চিমবঙ্গে স্বাস্থ্য সঙ্কট

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৯ অক্টোবর ২০১৭

বিজ্ঞানের আশীর্বাদে মানব সভ্যতা যেমন সমৃদ্ধ হয়েছে, তেমনই বেড়েছে তার গতি৷ কিন্তু এই গতিময় জীবনচর্যার ফলে অনেক বিপদ ঘনিয়ে আসছে, বাড়ছে স্বাস্থ্য সঙ্কট৷ নেতিবাচক খাদ্যাভ্যাস ও নেশা গ্রাস করছে পশ্চিমবঙ্গকে৷

https://p.dw.com/p/2m9jN
ছবি: Getty Images/AFP/C. Khanna

ভারতের এক শীর্ষ পুষ্টি গবেষণা সংস্থার রিপোর্টে উঠে আসা তথ্য উদ্বেগ জাগানোর মতো৷ সেই রিপোর্টে পশ্চিমবঙ্গের যে ছবি তুলে ধরা হয়েছে, তা দেখে বোঝা যাচ্ছে, নেতিবাচক খাদ্যাভ্যাস ও নেশা কীভাবে সচেতন বাংলাকে ক্রমশ গ্রাস করছে৷

ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর অধীনে কাজ করে পুষ্টি গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউট্রিশন (এনআইএন)৷ সংস্থাটি এ মাসের গোড়ায় তাদের শতবর্ষ উপলক্ষে শহুরে ভারতের স্বাস্থ্য সম্পর্কে একটি সমীক্ষা প্রকাশ করেছে৷ তাতে পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে দু'টি তথ্য এতদিন আমাদের অজানা ছিল৷ এক, ভারতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তামাকজাত দ্রব্য সেবন করা হয় পশ্চিম বাংলায়৷ দুই, দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কার্বনযুক্ত ঠান্ডা পানীয় পান করা হয় পশ্চিমবঙ্গে৷

বড় রাস্তা তো বটেই, এখন পাড়ায় পাড়ায় গজিয়ে উঠেছে গুমটি দোকান৷ সেখানে তামাকজাত পণ্যের বিপুল পসরা৷ শুধু সিগারেট বা বিড়ি নয়, গুটখা, জর্দা বা পানমশলার মতো দ্রব্য বিক্রি হচ্ছে দেদার৷

জনতার পকেটের স্বার্থে, স্বাস্থ্যের বিনাশকে ত্বরান্বিত করতে এসে গেছে তামাকযুক্ত মশলার ছোট প্যাকেট৷ মাত্র ২-৩ টাকা ফেললেই মুখে ফেলার মতো নেশার সামগ্রী পাওয়া সম্ভব৷ সাধারণভাবে এই গুটখা জাতীয় নেশার সামগ্রীর চল পশ্চিমবঙ্গে ছিল না৷ কয়েক বছর আগে  বাংলার বাইরে থেকে আসা শ্রমিক শ্রেণির মানুষদের মধ্যে এই নেশার আধিক্য দেখা যেতো৷ কিন্তু, ছবিটা দ্রুত বদলেছে৷ এখন রিকশাচালক থেকে স্যুট পরা সেলসম্যান, ঝালমুড়ি বিক্রেতা থেকে সরকারি দপ্তরের ক্লার্ক, সকলেই ছোট প্যাকেট কেটে নেশার দ্রব্য মুখে চালান করে দিচ্ছেন৷ কলকাতা শহরে এলে আপনি দেখতে পাবেন, রাস্তাঘাটে উড়ছে সেই ফেলে দেওয়া মোড়ক৷ দেখতে পাবেন, সরকারি ভবনের সিঁড়ির কোণ কিংবা রেল স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে তামাক চিবিয়ে ফেলা লাল বর্জ্যের দাগ৷ এনআইএন-এর সমীক্ষা বলছে, রাজ্যের ৪০ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ তামাকজাত পণ্য সেবন করেন, যা ভারতের সব রাজ্যের থেকে বেশি৷

কৌশিক দাস

পশ্চিমবঙ্গের ঠান্ডা পানীয়ের প্রতি আসক্তি নিয়ে আলোচনার আগে একবার সমীক্ষায় প্রকাশিত শহুরে ভারতের স্বাস্থ্য সঙ্কটের ছবিটায় চোখ রাখা যেতে পারে৷ ১৬টি রাজ্যের ১ লক্ষ ৭২ হাজার মানুষের উপর সমীক্ষা চালিয়েছে এনআইএন৷ তাদের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, প্রতি ছয় জন ভারতীয়ের মধ্যে অন্তত একজন ধূমপান করেন৷ প্রতি তিন জনের একজন মদ্যপান করেন নিয়মিত৷ এ ধরনের নেশাগ্রস্ততার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজের চাপ ও শারীরিক কসরতের প্রতি অনাগ্রহ৷ তার জেরে ক্রমশ শহুরে ভারতীয়দেরমধ্যে রোগের প্রকোপ৷ সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রতি ছয় জনের মধ্যে একজন পুরুষ ডায়াবেটিসে ভুগছেন৷ ৩১ শতাংশ পুরুষের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা, মহিলাদের মধ্যে এই হার ২৬ শতাংশ৷ এরই সঙ্গে বাড়ছে হাইপারলিপিডেমিয়া, অর্থাৎ রক্তে স্নেহ পদার্থের পরিমাণ, যা ডেকে আনতে পারে হৃদরোগ৷ 

বিজ্ঞাপনের দৌলতে ঠান্ডা পানীয়ের জনপ্রিয়তা এখন বিশ্বজুড়ে৷ গ্রীষ্মপ্রধান উপমহাদেশ সেখানে ব্যতিক্রম নয়৷ হাতের কাছেই পাওয়া যায় কার্বোনেটেড ঠান্ডা পানীয়, গলা ভিজিয়ে নিলেই হলো! কিন্তু, এই পানীয় পানেও যে পশ্চিমবঙ্গ সব রাজ্যকে পিছনে ফেলেছে, এটা এনআইএনের প্রতিবেদন প্রকাশের আগে কে জানতো? ভারতে ৫৭ শতাংশ শহুরে পুরুষ ঠান্ডা পানীয় পান করেন, মহিলাদের মধ্যে এই হার ৫৩ শতাংশ৷ আর সবচেয়ে বেশি কার্বোনেটেড পানীয় পান করে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ৷ আশ্চর্যজনকভাবে মহারাষ্ট্রে সবচেয়ে কম ঠান্ডা পানীয় গ্রহণ করা হয়৷ কলকাতার শীর্ষস্থানীয় হাসপাতাল সিএমআরআই-এর চিকিৎসক কৌশিক দাস আরেক বিপদের কথা শোনালেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ঠান্ডা পানীয়ের জেরে ডায়াবেটিসের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন কোম্পানি জিরো শ্যুগার বা ক্যালোরি ট্যাগ দিয়ে পানীয় বাজারে ছেড়েছে৷ অনেকে সেটা নিশ্চিন্তে পান করছেন৷ কিন্তু, এ ধরনের পানীয়ে এমন রাসায়নিক ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলি ক্যান্সার ডেকে আনতে পারে৷ ফলে হিত করতে গিয়ে বিপরীতে আরও বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে সাধারণ মানুষকে৷''

তামাক, মদ, কার্বনযুক্ত পানীয়ের ক্ষতি সামলাতে প্রয়োজন ছিল নিয়মিত শারীরিক কসরতের৷ কিন্তু, সময় বা ইচ্ছের অভাবে অধিকাংশ শহুরে মানুষই সেটা করেন না৷ এনআইএন-এর সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, মাত্র ২৮ শতাংশ পুরুষ নিয়মিত শারীরিক কসরত করেন৷ মহিলাদের মধ্যে এই হার খুবই কম, মাত্র ১৫ শতাংশ৷ অধিকাংশই ভোরে হাঁটেন, একাংশ যোগাভ্যাসও করে থাকেন৷ তাঁদের বক্তব্য, কাজের চাপ সামলে সময় বের করাই কঠিন৷ বিশ্বায়নের দাবি মেনে এত মানুষ এখন নাইট শিফটে কাজ করেন যে, তাদের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রার ধরনটাই বদলে গিয়েছে৷ কার্যত অসহায়ভাবে পেশার তাগিদে তাঁরা শরীরের ক্ষয় মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন৷ তাই কসরত না করলে ঠান্ডা পানীয়, তামাক বা মদ থেকে দূরে থাকুন, এমনটাই পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা৷

 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য