1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

থামেনি স্বামী হারানো মানুষগুলোর কান্না...

দেবারতি গুহ১ মে ২০১৫

বৈধব্যের সাদা শাড়িতে মোড়া কতগুলো নির্জীব, নিস্তব্ধ মানুষ৷ স্বামীর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে জীবনের স্বাদ-আহ্লাদ যাঁদের মাটিতে মিলিয়ে গেছে৷ সমাজের এই অপাঙ্‌ক্তেয়, ব্রাত্য নারীদের যে স্বপ্ন দেখতে নেই, ভালো-মন্দ খেতে-পরতে নেই!

https://p.dw.com/p/1FIfq
Indien Witwen in der Stadt Vrindavan
ছবি: DW/M. Krishnan

‘বিধবা' – কিছুদিন আগেও এ কথাটা শুনলে এমনই একটা চিত্র ফুটে উঠতো চোখের সামনে৷ ছবি, গল্প-উপন্যাস, অথবা নিজেদের চারপাশে আমার মতো আপনাদেরও নিশ্চয় বিধবাদের সঙ্গে দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে৷ আমি তো ছোটবেলায় ঠাকুমাকে শুধুমাত্র ঐ ‘শুভ্র' বেশেই দেখেছি৷ দেখেছি পিসিমনি, সুমিতা মাসি অথবা ছোট কাকাতো বোনটাকে হঠাৎ করে বিধবা হয়ে যেতে৷ হিন্দু বাড়ি, তাই ঠাকুমাকে নিরামিষ ছাড়া অন্য কিছু খেতে দেখিনি৷ কিন্তু বোনের বেলায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির বড়রাও ‘আধুনিক' হয়েছেন, বুঝদার হয়েছেন৷ তাই শবরী, আমার বোনটা আজ মাছ খায়, রঙিন শাড়িও পরে৷ কিন্তু ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে একাই থেকে গেছে ও, বিয়ে করেনি৷ অফিস করে, বাড়ি ফেরে, ছেলেকে দেখাশোনা করে, তার বায়না মেটায়, কিন্তু একবারও নিজের মুখটা আয়নায় দেখে না৷ বৈধব্য ওর মনে বাসা বেঁধেছে বহু বছর হলো৷ তাই ও নিজের কথা ভাবতে ভুলে গেছে, গান করতে ভুলে গেছে, হাসতে ভুলে গেছে৷

Witwen feiern Holi in Vrindavan
ভারতের বৃন্দাবনে হোলি উৎসবে বিধবারাছবি: DW/Murali Krishnan

কিন্তু কেন এমন হলো? সমাজ, পরিবার, এই আমরা, আমরা কি পারতাম না শবরীকে আবারো একটা নতুন জীবনের সন্ধান দিতে, ওকে আবার স্বপ্ন দেখার জন্য তৈরি করতে? পারতাম৷ কিন্তু ও যে বিধবা! তাই ওকে নিয়ে ভাবার এত সময় আমাদের কোথায়? ওর মতো মেয়েদের কষ্টটা দেখার জন্য যে মানবদরদী চোখ দরকার – সেই চোখ আমাদের আদৌ ফুটেছে কি? না৷

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহের প্রচলন করেছিলেন সেই কবে৷ তাই ভারতের বৃন্দাবনে বিধবারা আজ হোলি উৎসবে রং খেললে অথবা নতুন দিল্লির ‘শিখ বিধবা পল্লী' নিয়ে সংবাদমাধ্যমে লেখালেখি হলে আমরা ‘সাধু, সাধু' বলি ঠিকই, কিন্তু আজও আমার-আপনার ছোটবোন, বৌদি, দিদি, পিসি, ফুফু, চাচি অথবা মাসির নতুন করে বিয়ে দেয়ার কথা উঠলে আমরা এ ওর দিকে তাকাই, দশবার ভাবি৷

Deutsche Welle Süd-Ost-Asien Debarati Guha
দেবারতি গুহ, ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগের সম্পাদকছবি: DW

মুসলমান সমাজের চিত্রটাও যে খুব আলাদা, তা নয়৷ বাংলাদেশের সোহাগপুরের কথাই ভাবুন৷ নির্মম, নৃশংস গণহত্যার সাক্ষী ঐ ‘বিধবা পল্লী'৷ আজও নিষ্ঠুরতার প্রতিবাদী রূপ নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে৷ স্বাধীনতার পর এতগুলো বছর পার হয়েছে, আর সময়ের সেই স্রোতে যেন উধাও হয়ে গেছে সেখানকার বিধবা ও তাঁদের পরিবারের পুনর্বাসনের সমস্ত উদ্যোগ৷ সরকার, ব্র্যাক, বাংলাদেশ ব্যাংক – নিজেদের ‘সময়-সুযোগ' মতো কখনও ছাগল, কখনও শাড়ি, চাল-ডাল, কখনও বা মাসে মাসে মাসোহারা বাবদ টাকা দিয়েছে৷ আবার অচিরেই এ সব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন সোহাগপুরের বিধবারা, পাননি সরকারের দেওয়া সেই মাসিক ‘ভিক্ষা'৷ সরকারে পরিবর্তন তাঁদের জীবনেও এনে দিয়েছে নতুন যুদ্ধ, কোনোক্রমে বেঁচে থাকার নতুন লড়াই৷

তারপরও এ বছর কিছুটা সুখের মুখ দেখেছেন এঁরা৷ সোহাগপুর গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসি হয়েছে৷ তাই প্রথমবারের মতো বাংলা নববর্ষ পালন করেছে বিধবা পল্লীর বিধবারা৷ গণজাগরণ মঞ্চের দৌলতে নতুন শাড়ি, লুঙ্গি, মিষ্টি, দই আর শুকনা খাবারও জুটেছে৷ আরো ক'টা মানুষ শুনেছেন স্বামী হারানো এই মানুষগুলোর কান্না৷

আশা করি আগামীর আলো আমাদের চোখ খুলে দেবে আরো খানিকটা, নতুনের পথ দেখাবে আমাদের৷ আমরা যাতে এই ব্রাত্য মানুষগুলোকে ভুলে না যাই, আমিও যাতে আবারো একটু ভাবি ছোট্ট বোন শবরীর কথা৷ পাশে বসে, এঁদের যেন আমরা বুকে টেনে নেই৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য