1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দুর্নীতি আর মাদক চোরাচালানে আটক আলবেনিয়ার ইইউ সদস্যপদ

৪ অক্টোবর ২০২১

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ পেতে দীর্ঘ বছর ধরেই চেষ্টা করছে বলকান রাষ্ট্র আলবেনিয়া৷ কিন্তু কী কারণে এ দেশটিকে সদস্যপদ দেওয়া হচ্ছে না?

https://p.dw.com/p/41EnM
ছবি: Hektor Pustina/AP Photo/picture alliance

ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত বলকান রাষ্ট্র আলবেনিয়া৷ ইউরোপের সদস্য গ্রিসের প্রতিবেশি এ দেশটি অনেক বছর ধরেই ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্যপদ পাওয়ার চেষ্টা করছে৷ কেন তাদের সদস্যপদ দিতে গড়িমসি করছে ইউরোপ? এমন প্রশ্নের উত্তরে বলা হচ্ছে যে, অবৈধ মাদক চাষ, মাদক পাচার, এবং দুর্নীতির কারণে দেশটিকে সদস্যপদ দিতে অনীহা ইউরোপের৷ 

পাহাড় ডিঙিয়ে আলবেনিয়া থেকে গ্রিসে মাদক চালান

দূর্নীতি দমনে সরকারের চেষ্টা

আলবেনিয়ার রাজধানী টিরানায় সরকারি উকিল আলটিন ডুমানির কার্যালয়৷ বিজ্ঞ এ আইনজীবী দেশটির ২০১৯ সালে স্পেশাল অ্যান্টি করাপশন স্ট্রাকচারের আইনি পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন৷

দক্ষিণপূর্ব ইউরোপের দেশ আলবেনিয়াতে দুর্নীতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে৷ আর দূর্নীতি ঠেকাতেই নতুন করে স্বাধীন এ দপ্তর গঠন করেছে সরকার৷

ডুমেনির অফিস কক্ষটিতে দেখা গেল হাজার হাজার কাগজের স্তুপ৷ আর এর সবই বিভিন্ন মামলার নথি,  জানালেন তিনি৷

ডয়চে ভেলেকে এ আইনজীবী বলেন, ‘‘সবগুলো মামলাই দুনীতি, মাদক পাচার ও অপরাধ বিষয়ক৷''

জানা গেছে, আলবেনিয়ার পাচারকারীরা ইউরোপের দেশগুলোতে বেশ সক্রিয়৷ পরিস্থিতি সামলাতে আলবেনিয়া সরকার ইটালি, জার্মানিসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের আরো কিছু দেশের সাথে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে৷ 

এমন চেষ্টার ফলে আলবেনিয়া সরকার অনেকটা সফলও হয়েছে দাবি করে এ আইনজীবী বলেন, ‘‘দেশটির দুর্নীতিবিরোধি দপ্তর ইতিমধ্যে ইটালি ও আলবেনিয়ায় মাদকের বেশ কয়েকটি বড় চালান আটক করেছে৷''

সুযোগ পেলেই ভয়াবহ হয়ে উঠে

বলকান অঞ্চলের ক্ষুদ্র রাষ্ট্র আলবেনিয়ার মোট জনসংখ্যা তিন মিলিয়ন অর্থাৎ ৩০ লাখ৷ জনসংখ্যা কম হলেও দেশটি গাঁজা চাষের একটি কেন্দ্র বলে পরিচিত৷

জাতিসংঘের তথ্য বলছে, ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এ দেশটি নাকি বিশ্বে গাঁজা রপ্তানিতে ছয় নম্বর অবস্থানে ছিল৷

বলকান রাষ্ট্রে সংগঠিত অপরাধ বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে সমন্বয়ক হিসিবে কাজ করছেন বেসরকারি সংস্থা গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অ্যাগেইনস্ট ট্রানসন্যাশনাল অর্গানাইজড ক্রাইমের ফাতইয়োনা মেইয়েদিনি৷ ডয়চে ভেলেকে  তিনি বলেন, ৯০-এর দশকে আলবেনিয়া কমিউনিস্ট শাসনব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার পর থেকেই দেশটিতে মাদকের ছড়াছড়ি বাড়তে থাকে৷  সেসময় অনেক লোক তাদের সরকারি চাকরি হারিয়েছিল৷ চাকরি হারানো এসকল লোকের অনেকেই পরবর্তীতে আয়ের উৎস হিসেবে গাঁজা চাষের দিকে ঝোঁকে পড়ে৷

এই এনজিওকর্মীর মতে, বছরের পর বছর ধরে সরকার মাদকের এমন ছড়াছড়ি সামলানোর বিষয়ে নীরব ছিল৷ যে কারণে এটি ধীরে ধীরে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে৷

‘‘সরকারের নীরব ভূমিকায় অপরাধী চক্রগুলো অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে৷ গত ১০-১৫ বছরে এসব অপরাধীরা নতুন নতুন মাদক যেমন কোকেইনের ব্যবসার দিকেও ঝুঁকে পড়েছে৷ আর ইউরোপে মাদক পাচারের যে নেটওয়ার্ক তারা গড়ে তুলেছে তা ছিল তাদের জন্য খুবই সহায়ক৷ তাদের কাছে সবই আছে আর তাই তারা এমন ব্যবসা করে রাতারাতি বড়লোক হওয়ার চেষ্টা করতে লাগল৷''  

এদিকে ২০১৩ সালে ক্ষমতায় আসার পর সমাজতন্ত্রী দলের প্রধানমন্ত্রী এডি রামা ‘মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ' ঘোষণা করে৷ আলবেনিয়া পুলিশের ইউটিউব চ্যানেলও বিভিন্ন সময় মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে৷

এমন চেষ্টার ফলে মাদকের ছড়াছড়ি কমে আসলেও দেশটিতে এখনো মাদক ব্যবসার একটি বড় ক্ষেত্র হিসেবে রয়ে গেছে৷

অভিযোগ আছে যে, সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর কেউ কেউ মাদক ব্যবসার সাথে যুক্ত৷

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদের চেষ্টা

আলবেনিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা ভাল নয়৷ দেশটির ফুশে-ক্রুজে অঞ্চলকে বলা হয়ে মাদকের হটস্পট৷ সেখানকার বাসিন্দা রালডি (পুরো নাম ব্যবহার করা হয়নি) জানান, ২২ বছর বয়সে তিনি একবার মাদক বিক্রির দায়ে পুলিশের হাতে আটক হয়েছিলেন৷ তিনি নিজে কখনো মাদক গ্রহণ করেননি কিন্তু তার বন্ধুরা মাদক চালানের এ ব্যবসাটি করতো৷ কারণ তাদের অন্য কোনো কাজ ছিল না৷

‘‘এখানে কোনো চাকরি নেই৷ আর তাই ভালো জীবনের আশাও করা যায় না৷''

নিজের উদাহরণ দিয়ে আলডি জানান,  দিনে ১৪ ঘণ্টা কাজ করে মাসে মাত্র পাঁচশ ইউরো রোজগার হয়৷ আলবেনিয়ার মতো দেশে এই টাকা দিয়ে জীবন চালানো কষ্টের৷ 

আলবেনিয়ার গ্রামে মানুষ কমে যাচ্ছে

এদিকে এনজিও কর্মকর্তা মেইয়েদিনির অভিযোগ, তরুণদের সহায়তায় সরকার তেমন কিছু করেনি৷ এ কারণে অনেকেই ইউরোপীয় ইউনিয়নে নিজেদের ভাগ্য খুঁজে বেড়ায়৷

এক জরিপে দেখা গেছে, দেশটির শতভাগ মানুষই ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যরাষ্ট্র হতে চায়৷ তবে দেশের রাজনীতিবাদরা এ বিষয়ে অধৈর্য্য হয়ে উঠেছেন৷ কারণ তারা মনে করে যে, ইউনিয়নভুক্ত হওয়ার আলোচনা শুরু করার জন্য যা করা দরকার তার সবই সরকারের পক্ষ থেকে করা হয়েছে৷ কিন্তু আলোচনা শুরু হচ্ছে না৷ 

ইইউতে যুক্ত হওয়া বিষয়ে আলবেনিয়ার প্রধান আলোচক যেফ মাযি বলেন, মাদক পাচার কোনো জাতীয় বিষয় নয়৷ এটি একটি আন্তর্জাতিক বিষয়৷

ইইউর সদস্যপদ পাওয়ার আলোচনা শুরু করতে মাযি প্রতিনিয়তই জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসালা ফন ডেয়ার লাইয়েন-এর সাথে কথা চালিয়ে যাচ্ছেন৷

মারিনা স্ট্রাউস/আরআর