1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পরিবেশ বিপর্যয়ের মোকাবিলায় নারী

৯ মে ২০১৮

দক্ষিণ আফ্রিকায় পরিবেশ বিপর্যয়ের ধাক্কা বিশেষ করে দরিদ্র ও কৃষ্ণাঙ্গ শ্রেণিকে আঘাত করে৷ নারীদের জন্য তা দুর্বিষহ হয়ে ওঠে৷ এক সাহসি নারী অভিনব এক প্রকল্পের মাধ্যমে আশার আলো আনছেন৷

https://p.dw.com/p/2xMx1
Umweltverschmutzung im Senegal
ছবি: picture-alliance/dpa

দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গ শহরের মধ্যে ও চারিদিকে খনির আবর্জনা স্তূপ৷ আর্সেনিক, সীসা, দস্তা ও তেজস্ক্রিয় ইউরেনিয়াম মাটিকে বিষাক্ত করে তুলেছে৷ গত কয়েক বছরে আরও ঘনঘন জোরালো বৃষ্টি ও বালুঝড় দেখা যাচ্ছে৷ ফলে বাতাস বিষাক্ত ধুলা গোটা এলাকায় আরও ছড়িয়ে দিচ্ছে৷

ডিভিলে মোকোয়েনা এমনই এক প্রেক্ষাপটে পরিবেশ অ্যাক্টিভিস্ট হয়ে উঠেছেন৷ তাঁর দিদির দুই ছেলে রয়েছে৷ সোয়েটো টাউনশিপে বাপের বাড়িতেই তারা থাকে৷ সেই বাড়িতেই ডিভিলে ছেলেবেলা কাটিয়েছেন৷ জলবায়ু পরিবর্তনযে সবার আগে গরিব মানুষের ক্ষতি করে, তাঁর দ্রুত সেই উপলব্ধি হয়েছিল৷ ডিভিলে বলেন, ‘‘জলবায়ু পরিবর্তন শুধু পরিবেশের সমস্যা নয়৷ সেটি উন্নয়নের উপর প্রভাব রাখে, মানবাধিকার খর্ব করে, সামাজিক সমস্যা হয়ে ওঠে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণতির দিকে নজর দিয়ে তার প্রস্তুতি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করলে বোঝা যায়, যে নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি বিপন্ন৷''

পরিবেশ রক্ষায় নারীদের লড়াই

ডিভিলে দক্ষিণ আফ্রিকায় অ্যাপারথাইড বা বর্ণবৈষম্যের যুগে বড় হয়েছেন৷ শৈশবেই তিনি টের পেয়েছিলেন, কীভাবে দরিদ্র ও কৃষ্ণাঙ্গদেরই খনির আবর্জনার স্তূপ সামলাতে হয়৷ শ্বেতাঙ্গ ধনী পাড়া থেকে নিরাপদ দূরত্বে, টাউনশিপগুলির পাশেই সেই আবর্জনা ফেলা হতো৷

নারীদের দ্বিগুণ সমস্যার মুখে পড়তে হতো৷ পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে সবার ক্ষতি হলেও পিতৃতান্ত্রিক সমাজে তাদের আত্মরক্ষার সুযোগ ছিল অনেক কম৷ ডিভিলে-কেও সেই সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘ঐতিহ্য অনুযায়ী পুরুষরা বিয়ের পর প্রথম সন্তান হিসেবে ছেলে প্রত্যাশা করে৷ আমার জন্মের পর বাবা-মা দেখলেন, তাদের তৃতীয় সন্তানও মেয়ে৷ বাবা বললেন, যথেষ্ট হয়েছে, আর মেয়ে নয়৷ আমার নামের অর্থও তাই – ‘যথেষ্ট হয়েছে'৷''

ডিভিলে চার বোনের মধ্যে তৃতীয় ছিলেন৷ তাঁর বাবা ছিলেন গর্বিত পুরুষ৷ তিনি পরিবারের দেখাশোনা করতেন৷ কিন্তু অন্যদিকে ঐতিহ্যও মেনে চলতেন৷ তাই মেয়েদের প্রশিক্ষণে বিনিয়োগের কোনো কারণ দেখেননি৷

ডিভিলে তা সত্ত্বেও উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন৷ পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য যথেষ্ট আয় করতেন৷ প্রথমে ব্যাংকের কেরানি হিসেবে, তারপর বড় এক জাতীয় সংবাদপত্রের বিপণন বিভাগে কাজ করেছেন৷ একই সময়ে তিনি বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পেও সক্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি৷ তারপর চাকুরি ছেড়ে সোয়েটো টাউনশিপে পরিবেশ সংরক্ষণে প্রচার অভিযান আয়োজন শুরু করেন তিনি৷

আজ তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় ‘জেন্ডার ইনটু আর্বান ক্লাইমেট চেঞ্জ' নামের এক উদ্যোগের সমন্বয়ক৷ জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণতি সামলানোর ক্ষেত্রে গোটা বিশ্বে নারীদের ভূমিকা জোরালো করছেন তিনি৷ জোহানেসবার্গ শহরে এক কর্মশালায় সমন্বয়করা নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করছেন ও চ্যালেঞ্জের কথা বলছেন৷

দক্ষিণ আফ্রিকায় এই উদ্যোগ দু'টি শহরের সঙ্গে কাজ করে – শোয়ানে ও জোহানেসবার্গ৷ ডিভিলে শহুরে এলাকায় পরিবেশবান্ধব কৃষিকাজে বিশেষভাবে আগ্রহী৷ জোহানেসবার্গ শহরের মাঝে জুবার্ট পার্কে সেই স্বপ্ন এর মধ্যেই বাস্তব হয়ে উঠেছে৷

পরিত্যক্ত এক গ্রিনহাউসে আজ শাকসবজি ও জড়িবুটির চাষ হচ্ছে৷ এই সমবায় দুই বেকার নারীকে কাজ দিয়েছে৷ ডিভিলে মোকোয়েনা বলেন,  ‘‘এই দুই তরুণীর বাসার কাছে নিজস্ব জমি রয়েছে৷ স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে তাঁরা গ্রিনহাউসের দেখাশোনা করেন৷'' 

জলবায়ু পরিবর্তনে মেয়েদের ক্ষতি হয় বেশি

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কৃষি পদ্ধতিরও পরিবর্তন করতে হচ্ছে৷ ‘গার্ডেন ফর দি উইমেন' প্রকল্প নারীদের আরও টেকসই পদ্ধতিতে উৎপাদনের প্রশিক্ষণ দেয়৷ এভাবে তারা নিজের আয় বাড়িয়ে সমাজে খাদ্য নিরাপত্তা বাড়াতে পারবে৷ সেই প্রকল্পে যুক্ত মামোসওয়েউ সোয়াবি৷ তিনি বলেন, ‘‘গ্রিনহাউসে আমরা অরগ্যানিক শাকসবজি চাষ করি৷ এই প্রয়াস আমাদের নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করছে৷ স্থানীয় বাজারেই আমরা শাকসবজি বিক্রি করি৷ ফলে প্রতি সপ্তাহে আমাদের আয় হয়৷''

রাজনীতিকদের নজর আকর্ষণ করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ৷ শহর কর্তৃপক্ষ গ্রিনহাউস সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল৷ তবে একেবারে শেষ মুহূর্তে অর্থায়ন কমিয়ে দেওয়া হয়৷ ডিভিলে বলেন, ‘‘এখনো দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে৷ তবে তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের মূল্যায়ন, তাদের সমালোচনা করে উন্নতির প্রস্তাব পেশ করতে করতে আমরা ক্লান্ত হবো না৷ ঘাটতি দেখলেই মুখ খুলবো৷''

এমন কাজের জন্য তাঁর সাহস ও ধৈর্যের শেষ নেই৷

স্টেফান ম্যোল/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য