1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কিশোররা কেন গ্যাংস্টার?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১২ জানুয়ারি ২০১৭

ঢাকার অভিজাত এলাকা উত্তরায় আদনান কবির নামে এক কিশোরকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়৷ পরে জানা যায়, সেখানকার স্কুল পড়ুয়ারা নানা নামে ‘গ্যাং' বা ‘সন্ত্রাসী গ্রুপে' বিভক্ত৷ এরা তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে, ব্যবহার করে আগ্নেয়াস্ত্রও৷

https://p.dw.com/p/2Vhs7
উত্তরা
উত্তরার রাস্তাছবি: bdnews24.com

শুধু তাই নয়, এলাকার প্রত্যেকটি গ্রুপের নাকি নিজস্ব ফেসবুক গ্রুপ রয়েছে, যেখানে তারা পরবর্তীতে কাকে ‘টার্গেট' করা হবে, কাকে আক্রমণ করা হবে – সে সম্পর্কে ‘পোস্ট' দিয়ে থাকে৷ এ সব ভয়ংকর তথ্যের সবটাই উঠে এসেছে পুলিশি তদন্ত থেকে৷

আদনানের মৃত্য, পুলিশি তদন্তের ফলাফল

গত ৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় উত্তরার ট্রাস্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আদনান কবিরকে খেলার মাঠে হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে এবং কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করা হয়৷ পরে চিকিৎসার জন্য স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন৷ এ ঘটনায় আদনানের সমবয়সি ন'জন কিশোরকে আসামি করে মামলা হয়৷ পুলিশ অবস্য এরইমধ্যে তিনজন কিশোরকে আটক করেছে৷

পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে আসে যে, আদনান তার প্রতিপক্ষ গ্রুপের হাতে খুন হয়েছে৷ আদনানের গ্রুপের সদস্যরা এরইমধ্যে ফেসবুকে ‘পোস্ট' দিয়ে আদনান হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার কথা জানিয়েছে৷ পুলিশ জানায়, উত্তরা এলাকায় কিশোরদের অন্তত পাঁচটি কথিত গ্যাং-এর কথা তারা জানতে পেরেছে৷ আদনান নিজে নাকি ‘নাইন স্টার' গ্রুপের সদস্য৷ এছাড়াও যে গ্রুপগুলোর নাম পুলিশ জানতে পেরেছে তারা হলো – বিগবস, ডিসকো বয়েজ উত্তরা, পাওয়ার বয়েস উত্তরা এবং নাইনএমএম বয়েজ উত্তরা৷

কবির হোসেন

উত্তরা থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) শাহ আলম জানান, ‘‘ঐ দিন খেলার মাঠে যারা সিনিয়র ছিল তাদের সঙ্গে বাইরের এক গ্রুপের সঙ্গে বিরোধ ছিল৷ তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটিতে এক সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়৷ এ সময় গ্রুপের বড় সদস্যরা দৌড়ে পালিয়ে গেলেও, আদনান পালাতে পারেনি৷ প্রতিপক্ষ গ্রুপ তাই আদনানকেই পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে৷'' পুলিশের ধারণা, ডিসকো গ্রুপের সদস্যরাই আদনানকে হত্যা করেছে৷

এই ঘটনা নিয়ে অনুসন্ধান করেছেন সাংবাদিক উদিসা ইসলাম৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কিশোরদের এই গ্রুপগুলো গঠিত হয়েছে এলাকার দখল বা আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে৷ এরা গ্রুপ ধরে চলে এবং অন্য গ্রুপগুলোকে চাপে রাখতে চায়৷ এরা দেশীয় অস্ত্র এবং আগ্নেয়াস্ত্রও ব্যবহার করে৷''

তাঁর কথায়, ‘‘এর সবাই উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান৷ এরা যে চাঁদাবাজি বা টাকা-পয়সার জন্য এটা করে, তা নয়৷ এরা চাইলেই তাদের পরিবারের কাছ থেকে টাকা-পয়সা পায়৷ এরা এটা করে ক্ষমতা ও প্রভাব দেখানোর জন্য৷ আশ্চর্যের বিষয়, অভিভাবকরা এ সব জানলেও এতদিন তা চেপে রেখেছিল৷''

উদিসা ইসলাম

নিহত আদনান কবিরের বাবা কবির হোসেন একজন ব্যবসায়ী৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমার ছেলেটা শারীরিকভাবে দুর্বল ছিল৷ তবে সে ভালো ছাত্র ছিল৷ জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ফাইভ পেয়েছিল৷ শুক্রবার সে ব্যাডমিন্টন খেলতে গিয়েছিল মাঠে৷ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তার ওপর আক্রমণ হয়৷ আদনান একা ছিল না৷ তার সঙ্গে আরো চার-পাঁচজন ছিল৷ কিন্তু তারা পালাতে পারলেও, আমার ছেলেটা পারেনি৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে, তারা সবাই তার চেয়ে বয়সে বড়৷ তাকে কেন হত্যা করা হয়েছে তা আমরা প্রথমে বুঝতে পারিনি৷ তবে এখন জানতে পেরেছি যে, উত্তরায় নাকি নানা নামে গ্রুপ আছে৷ তবে আমার ছেলে কোনো গ্রুপের সদস্য ছিল কিনা, তা আমি জানি না৷ সে আমাকে কখনো বলেনি যে সে হুমকির মুখে আছে৷''

জানা গেছে শুধু উত্তরা নয়, ঢাকার প্রায় প্রতি এলাকাতেই এরকম ছোট ছোট গ্রুপ আছে৷ কিশোর বা উঠতি বয়সের ছেলেরাই এইসব গ্রুপের সদস্য৷ এরা মূলত নিজেদের এলাকায় দাপটের সঙ্গে চলার জন্যই এই গ্রুপগুলো গঠন করে৷ এদের অধিকাংশই উচ্চবিত্ত পরিবারের সদস্য৷ এরা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে খুব সক্রিয়৷ গ্রুপের নামে ফেসবুক পেজও খোলে এরা৷ সেখানে নিজেদের অভিযান বা তৎপরতার খবর ও ছবি ‘পোস্ট' করে৷ গ্রুপের নতুন সদস্যদের নামও প্রকাশ করে থাকে এরা৷ হুমকি দেয় প্রতিপক্ষ গ্রুপকে৷ গত বছরের মার্চ মাসে ধানমন্ডির একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ছাত্র জুনায়েদ তার দলবল নিয়ে প্রতিপক্ষ কিশোর নুরুল্লাহকে মারপিট করে তার ভিডিও ফেসবুকে ‘পোস্ট' করেছিল৷ এ ঘটনা নিয়ে তখন ব্যাপক হইচই হয় এবং পুলিশ জুনায়েদকে আটক করে৷

তাজুল ইসলাম

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিউটের অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা ইন্টারনেট এবং আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির নেতিবাচক প্রভাব৷ পশ্চিমা বিশ্বের আদলে এখানে এখন কিশোররা ‘গ্যাং' গঠন করছে৷ এরা সকলেই ‘গ্যাং স্টার' হতে চায়৷ প্রধাণত চারটি কারণে এরা এটা করে৷ ক্ষমতা, সমীহ আদায়, খারাপ কাজ করা এবং এক ধরনের ‘প্রটেকশন'-এর জন্য৷ এটা স্বাভাবিকভাবেই ভয়াবহ এবং আতঙ্কের খবর৷''

তাঁর কথায়, ‘‘এর দায় নিতে হবে পরিবার ও সমাজকে৷ সন্তান কোথায় যায়, কী করে, তা তাদের জানতে হবে৷ সন্তান চাইলেই তাকে সবকিছু দেয়া যাবে না৷ তাছাড়া সমাজে নানা সুশীল গ্রুপ আছে, সোসাইটি আছে৷ তাদের চোখের সামনেই তো গ্যাংগুলো বেড়ে উঠছে৷ তাহলে তাদের থাকার দরকার কী? তার ওপর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জেনেও না জানার ভান করে থাকে৷ কারণ এরা উচ্চবিত্ত বা ক্ষমতাধর পরিবারের সন্তান৷''

বন্ধু, কিশোর বা উঠতি বয়সের ছেলেদের মধ্যে ‘গ্যাং স্টার’ হওয়ার এই প্রবণতা আপনি কীভাবে দেখছেন? লিখুন নীচে, মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য