1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
মানবাধিকারপাকিস্তান

পাঞ্জাবে শিশু যৌন নির্যাতন বাড়ছে কেন?

২৬ জুলাই ২০২৩

পাকিস্তানে ঘরে শিশুদের যৌন নির্যাতনের কথা লুকাতে চান অনেকে৷ ফলে ধর্ষকেরা প্রায়ই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় বলে মনে করেন মানবাধিকার কর্মীরা৷

https://p.dw.com/p/4UQ2H
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবিছবি: Pond5/Imago Images

পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশ কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যেখানে শিশু যৌন নির্যাতনের ভয়াবহ পরিস্থিতি ফুটে উঠেছে৷

প্রদেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম সাড়ে পাঁচ মাসে অন্তত এক হাজার ৩৯০টি শিশু যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে৷ এই ঘটনাগুলো প্রকাশিত হয়েছে৷ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রকৃত সংখ্যাটি আরো অনেক বেশি হবে৷

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৯৫৯টি ঘটনায় ছেলে শিশুরা এবং বাকি ৪৩১ ঘটনায় মেয়ে শিশুরা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়৷

লাহোরভিত্তিক সাংবাদিক মোহাম্মদ শাহাজাদ মনে করেন, সরকারি প্রতিবেদনে প্রকৃত চিত্র উঠে আসেনি৷ কারণ শুধুমাত্র অভিভাবক, আত্মীয়স্বজন বা ভুক্তভোগী যেসব ঘটনার কথা প্রকাশ করেছেন, সেগুলো এখানে উঠে এসেছে৷

তিনি বলেন, ‘‘যৌন নির্যাতনের শিকার অনেক শিশু গৃহহীন কিংবা ধর্মীয় স্কুলে পড়াশোনা করছে৷ তাদের সঙ্গে এধরনের কিছু ঘটলে তা জানার সম্ভাবনা কম৷''

পাকিস্তানে গৃহহীন শিশুর সংখ্যা ১৫ লাখের মতো এবং বিভিন্ন মাদ্রাসায় পড়ছে ২৫ লাখ শিশু৷ এদের সবাই যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে আছে বলে দাবি শাহাজাদের৷ 

প্রতিবাদও হচ্ছে

পাকিস্তানে এবারই প্রথম শিশু যৌন নির্যাতনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না৷ ২০১৫ সালে শিশু নির্যাতন এবং মুক্তিপণ আদায়ের একটি ঘটনা নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল৷ পুরুষদের একটি অপরাধ চক্র সেসময় অন্তত ২৮০ শিশুকে যৌন নির্যাতনের ঘটনা ভিডিও করেছিল৷  

চক্রটি সেসব ভিডিও প্রকাশ করার হুমকি দিয়ে ভুক্তভোগী শিশুদের অভিভাবকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতো৷ এই খবর প্রকাশ হওয়ার পর গোটা পাকিস্তান জুড়ে নিন্দার ঝড় বয়ে যায় এবং এধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যর্থ হওয়ায় সরকারের উপর দায় চাপানো হয়৷   

দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে ২০১৮ সালে সাত বছর বয়সী শিশু জয়নার আনসারি যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে খুন হয়৷ সেসময় জনরোষের মুখে শিশু নির্যাতন রোধে একটি আইন পাস করতে বাধ্য হন দেশটির আইনপ্রণেতারা৷  

তবে পাঞ্জাবের প্রাদেশিক সরকারের প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে এসংক্রান্ত আইনগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে৷

শিশু নির্যাতনের ঘটনাগুলোর পর পাকিস্তানের সাধারণ নাগরিকেরা সরকারকে দায়ী করেন কেননা দেখা যায় যে অপরাধীকে ধরতে এবং উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিতেরক্ষেত্রে আইন খুব একটা কার্যকর বিবেচিত হচ্ছে না৷

মানবাধিকার কর্মীরা মনে করেন, শিশু সুরক্ষা নিশ্চিত করা একটি বিস্তৃত বিষয় এবং এই বিষয়টি নিয়ে তেমন আলোচনা হচ্ছে না৷

অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় শিশু যৌন নির্যাতনের শিকারের সঙ্গে সম্পৃক্তরা মূলত ভুক্তভোগীদের আত্মীয়স্বজন, শিক্ষক বা ধর্মগুরু হয়ে থাকেন, জানান লাহোরভিত্তিক যৌন এবং লিঙ্গকেন্দ্রিক সহিংসতা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ সিদ্রা হুমায়ুন৷

কখনো কখনো দেখা যায় একটি শিশু এধরনের নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর অভিভাবকদের জানালেও তারা সেটি বিশ্বাস করতে চান না৷ ফলে ভুক্তভোগী শিশুটির বিচার পাওয়ার আশা আরো ক্ষীণ হয়ে যায়৷

‘‘শিশুরা সরলও থাকে এবং সেই সুযোগ নিয়ে অপরাধীরা তাদের নানা কিছু মানতে প্রলুব্ধ করে,'' বলেন হুমায়ুন৷

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পাকিস্তানে বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে শিশু যৌন নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে৷ এধরনের অপরাধীরা প্রায়শই বিচারের মুখোমুখি হওয়া থেকে রেহাই পেয়ে যাচ্ছেন৷

এআই/কেএম