1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পিঁপড়েরা দল বেঁধে কাজ করে

১৮ জানুয়ারি ২০১৮

লিফ কাটার অ্যান্ট বা পাতা কাটা পিঁপড়দের দক্ষতার কারণ শুধু তাদের সমপ্রকৃতি নয়৷ বস্তুত দঙ্গলের মধ্যে কিছু কিছু পিঁপড়ের প্রকৃতি ও কাজ আলাদা৷ এই বিষমজাতীয়তাও গোষ্ঠীর কল্যাণে আসে৷

https://p.dw.com/p/2r3O5
পাতা কাটা পিঁপড়ার দলছবি: public domain

বিহেভিওরাল সায়েন্টিস্টরা জীবজন্তুর আচার-ব্যবহার পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে থাকেন৷ কনস্টানৎস বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ক্রিস্টফ ক্লাইনাইডাম সেই ধরনের একজন ব্যবহার বিজ্ঞানী৷ তিনি তথাকথিত লিফ কাটার অ্যান্টস বা পাতা কাটা পিঁপড়েদের নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাচ্ছেন৷ ক্লাইনাইডাম দেখতে চান, এই পিঁপড়েরা কীভাবে তাদের পথ খুঁজে পায় – কেননা একটি পিঁপড়ের পক্ষে একা তা আদৌ সম্ভব নয়৷ তিনি বলেন, ‘‘পাতা কাটা পিঁপড়েরা দঙ্গলে বেঁচে থাকার একটা চরম দৃষ্টান্ত৷ ওদের একজনকে একা ঐ টেবিলটার ওপর ছেড়ে দিলে, পনেরো মিনিট পরেও সে ঠিক ওখানেই থাকবে৷ গোল হয়ে ঘুরবে, কিন্তু বুঝতেই পারবে না, তার কোথায় যাওয়া উচিত৷’’

ফেরোমোন

পিঁপড়েরা পরস্পরের সঙ্গে ফেরোমোনের মাধ্যমে কথা বলে বা যোগাযোগ রাখে৷ ফেরোমোন হল এক ধরনের রাসায়নিক পথনির্দেশক, যা খাবারের খোঁজে যাবার সময় পিঁপড়েরা সারা পথে ছড়িয়ে রাখে – যেমন ড. ক্লাইনাইডামের তৈরি কাঠামোটার উপর৷ ফেরোমোন খুব তাড়াতাড়ি উপে যায়৷ পিঁপড়েরা সবচেয়ে কাছের পথটা আন্দাজ করার জন্য ফেরোমোনের এই বৈশিষ্ট্যটা কাজে লাগায়৷ খাবারের দূরত্ব যতো বেশি, ফেরোমোনের গন্ধও ততো দুর্বল৷ তবুও পিঁপড়েরা সবচেয়ে কড়া গন্ধটাই অনুসরণ করে, যার ফলে সবচেয়ে কাছের পথটা আরো জোরদারভাবে দেখানো হয়৷ নিয়ম হলো: নাক বরাবর চলে যাও! মুক্ত প্রকৃতিতে পাতা কাটা পিঁপড়েরা এমন সব যাতায়াতের পথ তৈরি করে, যা বাসা থেকে ২০০ মিটার দূর পর্যন্ত চলে যায়৷

ড. ক্রিস্টফ ক্লাইনাইডাম জানতে চান, পাতা কাটা পিঁপড়েরা কীভাবে এই সব পথ তৈরি করে ও সেগুলোকে ঠিকঠাক রাখে৷ পরীক্ষাগারে এক আঁজলা পাতা টুকরো টুকরো করে কেটে সেগুলোকে বাসায় নিয়ে যেতে তাঁর পিঁপড়ের দঙ্গলটার আধ ঘণ্টার চেয়ে কম সময় লাগে, যদিও গবেষকরা পিঁপড়েদের পথে নানা ধরনের প্রতিবন্ধক রেখেছেন, যেমন নল কিংবা বাক্স৷

পাতা কাটা পিঁপড়েরা কিন্তু তাদের কাটা পাতা খায় না – জমা করে৷ সেই পচন ধরা পাতার ওপর এক ধরনের ফাংগাস বা ছত্রাক জন্মায়, যা হল এই পিঁপড়েদের আসল খাদ্য৷

পিঁপড়েরা দল বেঁধে কিন্তু একই কাজ করে না

সোয়ার্ম বা ঝাঁক

ড. ক্রিস্টফ ক্লাইনাইডাম পাতা কাটা পিঁপড়েদের এই প্রণালী দেখে মুগ্ধ৷ তিনি বলেন, ‘‘জীবজন্তুদের সোয়ার্ম বা ঝাঁক কিংবা দঙ্গলকে আমরা সমজাতীয় গোষ্ঠী বলে মনে করি৷ কিন্তু ভালো করে দেখলে নানা ধরনের নতুন জিনিস চোখে পড়ে৷ এই সুবিশাল ঝাঁক বা দঙ্গলগুলোর গঠন চমকে দেওয়ার মতো – ওরা আদৌ এক ধরনের নয়৷ গোষ্ঠীর সর্বত্র বিষমজাতীয়তার রেশ আছে ও গোষ্ঠীর কার্যকরিতায় তার একটা বাস্তব গুরুত্ব আছে৷ কাজেই ঝাঁকের আচার-আচরণ নিয়ে গবেষণায় সেটাই হবে আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ৷ গোষ্ঠীর এই বুনিয়াদি বিভাজনগুলি থেকে সামগ্রিক গোষ্ঠীর কী সুবিধা হয়?’’

তা পরীক্ষা করার জন্য ড. ক্লাইনাইডাম পিঁপড়িদের পথে ছোট ছোট নীল প্রতিবন্ধক রেখেছেন – পিঁপড়েরা সঙ্গে সঙ্গে সেই সব প্রতিবন্ধক সরিয়ে পাতা আনার পথ খোলা রাখার কাজ শুরু করে৷

ড. ক্লাইনাইডাম আরো একটি লক্ষণীয় তথ্য আবিষ্কার করেছেন: দঙ্গলের হাজার হাজার পিঁপড়ের মধ্যে মাত্র ছ'টি কি সাতটি পিঁপড়ে দৃশ্যত প্রতিবন্ধক সরানোর কাজে নিযুক্ত৷ এবং এই সব পিঁপড়েরা সেই কাজ পরিপূর্ণ দক্ষতার সঙ্গে অতি অল্প সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করে৷

আরনল্ড ট্রুম্পার/এসি