1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পুলিশে ছুঁলে ছত্রিশ ঘা!

রেশমী নন্দী
৫ ডিসেম্বর ২০১৭

পুলিশের নাম শুনলেই বাংলাদেশের মানুষের প্রথম স্বাভাবিক অভিব্যক্তি, ‘পুলিশ?!' তর্জমা করলে দাঁড়ায়, মাফ করে দিলে হয় না? কিন্তু পুলিশ নিয়ে এমন ভীতির কারণ কী?

https://p.dw.com/p/2oeq5
বাংলাদেশের পুলিশ
ফাইল ছবিছবি: picture-alliance/dpa

আমার অনেক পরিচিতজন, বন্ধুবান্ধব পুলিশে কাজ করেন৷ ফলে কেবল পুলিশ হিসেবে নয়, ব্যক্তিমানুষ হিসেবেও অনেক পুলিশকে আমি জানি৷ এ কথা ঠিক যে, অন্য পেশায় থাকা পরিচিতজনদের মতোই পুলিশে থাকা পরিচিতজনরাও কতটা সৎ, সেকথা কখনো জানতে চাওয়া হয়নি৷ তবে তাদের প্রতি মুহূর্তে ঘৃণাও করিনি৷

কিন্তু পুলিশ মানেই সামগ্রিক অর্থে এক ভীতিকর শব্দ৷ যে দু-একবার বিপদে পড়ে পুলিশের সাথে যোগাযোগ করেছি, অর্থ দিয়ে কার্য উদ্ধার করতে হয়েছে৷ সাথে অবশ্য সাংবাদিক পরিচয়ে কিছুটা সমীহ মিললেও বেশিরভাগের জন্যই তা যে সুলভ নয়, বুঝতে পেরেছি একই সময়ে সেবা নিতে আসা অনেককে দেখে৷ পকেটে ‘ড্রাগস' বা মাদক ঢুকিয়ে দিয়ে পুলিশের অর্থ আদায়ের কৌশলের শিকার হতে শুনেছি কাছের একজন মানুষ ইউসুফকে৷ ছোটভাই শুভাশিষ তাঁর এক বান্ধবীকে সাথে নিয়ে সিএনজি করে ফেরার পথে পুলিশের কুৎসিৎ মন্তব্য ও হেনস্তার শিকার হয়েছিল শুনে অবাক লাগেনি মোটেও৷ বন্ধু সঞ্জিবের চুরি যাওয়া গাড়ি পুলিশ যত সহজে উদ্ধার করল, তত সহজে পুলিশের হাত থেকে গাড়ি উদ্ধার করা গেল না, এমন গল্প শুনে আগেই টাকা দিয়ে কেন ম্যানেজ করে রাখলো না বিষয়টা, তা নিয়ে হাসাহাসি করেছি বিস্তর৷ আর বাস ড্রাইভারের জানলা দিয়ে বাড়িয়ে দেয়া ট্রাফিকের হাত তো এতটাই পরিচিত, বাংলাদেশে কেউ এখন সে দিকে তাকিয়েও দেখে না৷

আমার পুলিশ বন্ধুদের অনেকেই ক্ষোভ নিয়ে জানতে চান, কেন দুষ্কর্মের দায় ব্যক্তি মানুষের উপর না চাপিয়ে সমগ্র পুলিশ বাহিনীকে দোষারোপ করতে থাকি আমরা? আসলে আমরা এমন এক ‘মগের মুল্লুকে' বাস করি, যেখানে বিশৃঙ্খল এবং দুর্বল আইনের শাসনের ফলে ক্ষমতা অপব্যবহারের বিস্তর সুযোগ আছে কম বেশি আমাদের সবারই৷ তবে কেন কেবল পুলিশের উপর দায় চাপানো? তখন উত্তর না দিয়ে তাদেরকেই পাল্টা প্রশ্ন করি, ‘পুলিশের' কাছ থেকে জনগনের কী কী প্রত্যাশা থাকা উচিত?

সত্যিই আমি জানতে চাই, পুলিশ বাহিনী কি জানে, জনগণকে ঠিক কী ধরনের সেবা দেয়ার জন্য তাদের নিয়োগ দেয়া হয়? আরো গোড়ার প্রশ্ন, পুলিশের নানা স্তরে যোগ দিতে আসা ব্যক্তিরা কি এখানকার বেতন কাঠামো ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে না জেনেই এ পেশায় যোগ দেন? নাকি ‘উপরিসহই বেতন' ভেবেই আসেন এ পেশায়?

বাংলাদেশের অনেক পেশাজীবীই পেশার উপরি বিবেচনা করে কাজে যোগ দেন এবং না পেয়ে প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ভেবে কষ্ট পান৷ তবে সব পেশা আর পুলিশ বাহিনী তো এক নয়৷ এ বাহিনীর হাতে আমাদের নিরাপত্তা৷ পুলিশের সাধারণতম ঘুস খাওয়াও অন্য একজনের নিরাপত্তার প্রতি সরাসরি হুমকি৷ অথচ দিনের পর দিন এ নিয়েই থাকতে হয় আমাদের৷ 

কিন্তু পরিস্থিতি কি এতটাই নির্লিপ্ত থাকার মতো? পুলিশের হাতে অত্যাচারের শিকার হওয়া, ধর্ষণের শিকার হওয়া, পঙ্গু হওয়া, অন্ধ হওয়া মানুষের সংখ্যা তো কম নয়৷ গণমাধ্যম যখন সেসব খবর জানায়, রাগে ক্ষোভে সারা দেশের মতো আমিও মনে মনে ঘেন্না করতে থাকি পুলিশকে৷ যখন জানি, বদলি কিংবা সাময়িক বরখাস্তের মতো বিভাগীয় শাস্তি চালু আছে বলে আইনি শাস্তি হয় না বেশিরভাগ দুষ্কৃতিকারী পুলিশের, তখন নিরাপত্তার ভিত্তি আরো নড়বড় করে ওঠে৷

রেশমী নন্দী
রেশমী নন্দী, ডয়চে ভেলেছবি: privat

অবশ্য পুলিশ যে কোনো কাজ করে না, তা বলা যায় না৷ অনেকেই আছেন, যারা পাপেট না হয়ে, মনুষত্ব্যকে একেবারে জলাঞ্জলি না দিয়েও কাজ করেন৷ আমাদের মতো আমজনতা কালেভদ্রে তাদের দেখা পেলে ধন্য ধন্য করতে থাকি৷ তবে সমস্যা হলো, এ ধরনের পুলিশের দেখা পাওয়া সহজ কথা নয়৷ বেশিরভাগ সময় টবসহ ফুল দেয়ার মতোই সেবা পায় আমরা৷ প্রচলিত এক কৌতুক রয়েছে পুলিশের অবোধ প্রত্যাশা নিয়ে৷ কোনো এক সময় জনৈক পুলিশের কর্মকাণ্ডে ‘খুশি' হয়ে এক নারী তার দিকে ফুলের টব ছুড়ে মেরেছিল৷ কোনোমতে গা বাঁচিয়ে সেই পুলিশ বলে উঠেছিল, ফুল দিলেই তো হয়, টবসহ দেওয়ার কী দরকার! অর্থাৎ, সেবা যে দিচ্ছেন এমনই আস্থার জায়গাই থাকেন পুলিশ সদস্যরা৷

আর সেজন্যই হয়ত, পুলিশের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সেবা না পেয়েও উল্টো আমরাই মানবিক হওয়ার ডাক শুনি৷ পুলিশও যে মানুষ, তা নিয়ে ভাবার আহ্বানও শুনি অনেকসময়৷ আর তাই, যখন রাস্তাঘাটে পুলিশকে হাত পেতে টাকা নিতে দেখি, ভাবতে চেষ্টা করি তাদের আর্থিক অসচ্ছলতার কথা৷ অন্যায় থামানোর নামে পুলিশ যখন একের পর এক অন্যায় করতে থাকে, রাজনীতির চালে পাপেট-পুলিশের অসহায়ত্বের কথা ভাবি৷ বিচার চাইতে এসে যখন পুলিশের দয়া ভিক্ষা করে আমজনতা, মনে করতে চেষ্টা করি সিস্টেমের ফাঁকগুলি৷

আর এ ধরনের মানসিক আপোষ-রফাতেই আমরা তামাশা বানিয়ে ফেলি বিচারপ্রার্থীদের আকুলতা, নিরাপত্তাহীনতার শংকায় গুটিয়ে থাকা ভুক্তভোগীদের অসহায়ত্ব, সভ্য সমাজে বাস করছি এমন ভাবতে পারার সাহস৷

এ বিষয়ে আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য