1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘এখন ঈশ্বরের অস্তিত্বকেও বলা যেতে পারে রোহিঙ্গা’

১ ডিসেম্বর ২০১৭

বাংলাদেশ সফরের দ্বিতীয় দিনে অবশেষে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি মুখে এনেছেন পোপ ফ্রান্সিস৷ সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি সুস্পষ্ট পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি৷

https://p.dw.com/p/2ocVf
ঢাকায় এক রোহিঙ্গা শরণার্থীর সঙ্গে পোপ ফ্রান্সিসছবি: Reuters/D. Sagolj

শুক্রবার কক্সবাজার থেকে আসা ১৬ জন রোহিঙ্গা পোপের সঙ্গে দেখা করেন৷ এরপর তিনি বলেন, ‘‘এখন ঈশ্বরের অস্তিত্বকেও রোহিঙ্গা বলা যেতে পারে৷’’ পোপ দক্ষিণ এশিয়া সফরে এই প্রথমবারের মতো মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নাম উচ্চারণ না করেও অকথ্য অত্যাচারের বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘‘তোমাদের ওপর যারা অত্যাচার চালিয়েছে, যারা তোমাদের কষ্ট দিয়েছে, তাদের হয়ে আমি ক্ষমা চাই৷’’

এর আগে মিয়ানমার সফরে একবারও রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ না করায় ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের প্রধান ধর্মগুরু সারা বিশ্বেই সমালোচিত হয়েছেন৷ বাংলাদেশ সফরের প্রথম দিনেও তিনি রোহিঙ্গা শব্দটি এড়িয়ে যান৷

বৃহস্পতিবার শুরু হয় পোপ ফ্রান্সিসের বাংলাদেশ সফর৷ প্রথম দিন সন্ধ্যায় তিনি রাষ্ট্রপতির বাসভবন বঙ্গভবনে নাগরিক সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন৷ সেখানে তিনি বলেন, ‘‘রাখাইন রাজ্য থেকে আসা শরণার্থীদের সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সুস্পষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে৷’’

পোপ আরো বলেন, ‘‘গত কয়েক মাসে রাখাইন থেকে আসা বিশাল সংখ্যক শরণার্থীর সাময়িক আশ্রয় ও মৌলিক চাহিদা সরবরাহের মাধ্যমে মানবিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশ উদারতা ও সংহতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে৷ মানুষের সীমাহীন ভোগান্তির পুরো পরিস্থিতি, শরণার্থী শিবিরগুলোতে থাকা আমাদের ভাই-বোন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু, তাদের জীবনের অনিশ্চিয়তার বিষয়টি বুঝতে আমরা ব্যর্থ হইনি৷’’ এ সময় সংকটের সমাধান ও শরণার্থীদের ত্রাণ সহযোগিতার পাশাপাশি রাজনৈতিক সহায়তা দিতেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান পোপ৷

রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ‘‘বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যাতে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে, সেক্ষেত্রে পোপের সক্রিয় সহায়তা কামনা করেন৷’’

রোহিঙ্গার সংকট প্রশ্নে পোপের অবস্থানের প্রশংসা করে রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন যে, ‘‘রোহিঙ্গাদের তাদের পিতৃভূমিতে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিতকরণে পোপ ফ্রান্সিস খুবই ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবেন৷’’ বাংলাদেশকে একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘‘ধর্ম যার যার, কিন্তু এর উৎসবগুলো সবার৷’’

২৫ অগাস্টের পর রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক আবেদন জানাতে গিয়ে চলতি বছরেই দুই দুইবার রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করেছেন পোপ ফ্রান্সিস৷ তবে এবার মিয়ানমারে এসে রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ না করার জন্য সফর শুরুর আগেই স্থানীয় কার্ডিনালের পক্ষ থেকে পোপকে সতর্ক করা হয়েছিল৷ শব্দটি উচ্চারণ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছিল উগ্র বৌদ্ধদের সংগঠনগুলো৷ প্রটোকল ভেঙে প্রথমদিনেই পোপকে বাধ্য করা হয়েছিল সেনা নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসতে৷ নেপিদোতে পোপ মিয়ানমার সফরের মূল ভাষণে সরাসরি রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ না করায় মানবাধিকার সংগঠন ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর একাংশ হতাশা ব্যক্ত করে৷ তবে ভ্যাটিকান মুখপাত্র এবং প্রভাবশালী মার্কিন সাংবাদিক গ্রেগ বুরকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘ফ্রান্সিস রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ করেননি তার মানে এই নয় যে তিনি রোহিঙ্গাদেরকে নিয়ে আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছেন৷’’

Bangladesch Dhaka - Papst Franziskus besucht Rohingya Flüchtlinge
ঢাকায় রোহিঙ্গাদের সঙ্গে পোপ ফ্রান্সিসছবি: Reuters/M. Rossi

সফরের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার দুপুরে পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে ঢাকায় ভ্যাটিকান দূতাবাসে গিয়ে বৈঠক করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ বৈঠকের পর শেখ হাসিনা পোপকে নৌকা উপহার দেন৷

এর আগে সকালে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রার্থনা সভায় অংশ নেন পোপ৷ সেখানে তরুণদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘প্রভুর আজ্ঞা অনুধ্যান করে করে তোমরা দেখবে, যা পড়ো তা যেন বিশ্বাস করো৷ যা বিশ্বাস করো তা শিক্ষা দাও এবং যা শিক্ষা দাও তা অনুশীলন করো৷’’ অনুষ্ঠানে পোপ ফ্রান্সিসের মাধ্যমে যাজক বা ফাদার হিসেবে অভিষিক্ত হন ১৬ জন৷

তিনি যে রোহিঙ্গাদের জন্য উদ্বিগ্ন তা স্পষ্ট: মুন্সি ফয়েজ

সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস)-এর চেয়ারম্যান মুন্সি ফয়েজ অবশ্য মনে করেন পোপ ‘রোহিঙ্গা’ শব্দ উচ্চারণ না করলেও সেটা বড় কোনো সমস্যা হতো না৷ পোপ ১৬ জন রোহিঙ্গার উপস্থিতিতে রোহিঙ্গা শব্দ উচ্চারণ করার আগে ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘পোপ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গাদের নাম উল্লেখ না করেও সংকট সমাধানে সুস্পষ্ট ভূমিকা নিতে বলেছেন৷ এটা অনেক গুরুত্ব বহন করে৷ তিনি যে রোহিঙ্গাদের জন্য উদ্বিগ্ন তা স্পষ্ট৷ মিয়নমারের পর বাংলাদেশে এসে তিনি যে কথা বলেছেন তাতে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে তার আন্তরিক অবস্থান আরো স্পষ্ট হয়েছে৷’’

সফরের তৃতীয় দিন, অর্থাৎ ২ ডিসেম্বর শনিবার সকাল ১০টায় তেজগাঁও মাদার টেরেসা ভবন পরির্দশন করবেন পোপ ফ্রান্সিস৷ সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটের দিকে তেজগাঁও গির্জায় যাজক, ব্রাদার-সিস্টার, সেমিনারিয়ান ও নবিশদের সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন তিনি৷ সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে তেজগাঁও কবরস্থান ও পুরনো গির্জা পরিদর্শন করবেন৷ এরপর ঢাকার নটরডেম কলেজে যুব সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন৷ এদিনই বিকাল ৫টার পর রোমের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন পোপ ফ্রান্সিস৷

প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...